রাষ্ট্রপতির অনুজ আবদুল হাই; প্রোজ্জ্বল এক হাওর অভিভাবকের বিদায়
৩ আগস্ট ২০২০ ১৯:৪৩
‘আমি তো শীগগীরই চলে যাব, বড় একা/যাব চুপচাপ, তোমাদের কাউকেই/সহযাত্রী করব না নিরুদ্দেশ যাত্রা আমার। জেদ করে/লাভ নেই, আমাকে যেতেই হবে তোমাদের ফেলে।’
শামসুর রাহমান
মৃত্যু অনিবার্য। করোনা কেবল উপলক্ষমাত্র। গত ১৭ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দু’সপ্তাহব্যাপী চিকিৎসাধীন থেকে সবাইকে ফেলে অমর্ত্যলোকে সত্যিই চলে গেলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের প্রাণপ্রিয় স্নেহভাজন অনুজ ও তার সহকারী একান্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আবদুল হাই।
হাওরবন্ধু আবদুল হাই ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গণসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক থাকাকালীন অবসরে গেলে ওই বছরই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার এবং পরবর্তীতে স্পিকার মোঃ আবদুল হামিদের এপিএস শুধু নয়, বিশ্বস্ত সহচর ও ছায়াসাথীও ছিলেন।
ঋদ্ধিমান এই কর্মবীর রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব পালন ছাড়াও ছিলেন আলোকিত দেশ গড়ার বাতিঘর এবং আদর্শিক রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তেজস্বী এই অন্তপ্রাণ দেশ মা’কে ভালোবেসে যুদ্ধে লড়তে মা’কে ছেড়েছিলেন একাত্তরে। যুদ্ধশেষে মায়ের কোলে ফিরে এসেছিলেন বীরদর্পে। সিনা টান করে সেদিন দেশ মায়ের লাল সবুজের পতাকা মায়ের হাতে সঁপে ছিলেন বিজয়ের হাসিতে।
আবদুল হাই দেশ মাতৃকার প্রশ্নে কখনো কারও সাথে আপস করেননি। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন অবিচল-আপসহীন। মানবতায় বিশেষ করে হাওরের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য যা ন্যায্য তা বলতেন অকপটে। ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতেন দৃঢ়চিত্তে। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া নয়, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে। তার সতত আদর্শিক অবস্থানটা ধরে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
আবদুল হাইয়ের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং জাতি গঠনে তার আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোভিন্দ। এছাড়া গভীর শোক ও সমবেদনায় একাধারে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ ও আইন পরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সামরিক ও বেসামরিক প্রধান ও বিশিষ্টজনসহ গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাজায় দূরদূরান্ত থেকে আসা অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মরহুমের পিতৃতুল্য অগ্রজ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
সচ্চরিত্র ছিল আবদুল হাইয়ের মনুষ্য জীবনের অলঙ্কার। ঋজুপ্রকৃতির নিষ্কলুষ নির্লোভ চারিত্রিক দৃঢ়তার জন্যই তার প্রতি অধিক বিশ্বাসী ছিলেন বড় ভাই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। যে কারণে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সুবাদে সাত বারের নির্বাচিত সাংসদ কিংবদন্তি রাজনীতিক আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার হলে তাকে কলেজের অধ্যাপনা চুকিয়ে পার্লামেন্টে কর্মসঙ্গী করেন।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার থাকাকালীনই চীর অবহেলিত হাওরকে দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে নিরলসভাবে কাজ করার দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে পথ চলার অনুঘটক ছিলেন অনুজ আবদুল হাই। বিশেষ করে ২০১৩ সালে মোঃ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি মনোনীত হওয়ার পর থেকে মহামান্যের জ্যেষ্ঠপুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের টানা তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সমন্বয়ে সংসদীয় এলাকার জনসাধারণের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধের সারথিও ছিলেন তিনি।
আবদুল হাইয়ের সমস্ত ভাবনাজুড়ে ছিল মা, মাটি ও মানুষ। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত তার অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে কর্মনিষ্ঠতার দরুন জনপদ থেকে শুরু করে সংসদ ভবন হয়ে বঙ্গভবন পর্যন্ত সকলেই ছিলেন বিমুগ্ধ। তার ছিল ভিন্ন মতাদর্শের তথা দূরের মানুষকেও কাছে টানার এমাজিং হেপনোসিস পাউয়ার বা বিস্ময়কর সম্মোহনী শক্তি।
এছাড়া তিনি শৈশবে বেড়ে ওঠা বিস্তীর্ণ হাওরের নির্মল অথৈ জলরাশির মতোই নিরাহঙ্কার বুকে ধারণ করতেন প্রান্তিক কি ধনিক ও দলমত নির্বিশেষে নিমিষেই সবাইকে আপন করে নেওয়ার বিশাল এক হৃদয়। এতে জোগাতেন দুর্জনের বিরুদ্ধে লড়াই করে দুর্বলের টিকে থাকার প্রেরণা ও সাহস। বেঁচে থাকার প্রশ্রয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন ডেল কার্নেগীর ভাষায়। দেখাতেন বন্ধুর অন্ধকার সুরঙ্গের শেষ মাথায় আলোর মুখ। শুনাতেন শিকল ভাঙার ও সাম্যের গান। এমনিভাবে লুঙ্গিপরা খেটে খাওয়াদেরও সংসদ ভবন এবং বঙ্গভবনে দর্শনার্থী হতে তিনি থাকতেন স্মরণে করিৎকর্মা সেজে। ফোনটিও সেবার অপেক্ষায় সর্বদা খোলা থাকত হাজারো প্রশ্ন ও সমস্যা সমাধানের উত্তরপত্র হয়ে।
আবদুল হাই ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন শেষে রাজধানীতে লোভনীয় চাকরির অপার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আলোকিত হাওর গড়তে ফিরে চলেন গ্রামে। সংসদীয় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদেরই প্রতিষ্ঠিত প্রথমে হাজী তায়েব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈতনিক এবং পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন আদর্শবান, অনন্য ও অদ্বিতীয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে তিনি মনে করতেন, কেবল প্রতিভার দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় না। জনগণের কাতারে দাঁড়াতে হয়। তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে হয়। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে অভ্যস্ত হতে হয়। সর্বোপরি দেশ এবং দেশবাসীর স্বার্থকেই সবার ওপরে স্থান দিতে হয়।
তিনি বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্র প্রসার মানেই গণস্বার্থ ও গণঅধিকারের ভিত্তি মজবুত হওয়া। গণতন্ত্রকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলেই তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত ও মতাদর্শের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সম্মানজনক সহাবস্থানেও বিশ্বাসী ছিলেন।
তিনি বলতেন, রাজনৈতিক দলের উপাদান তিনটি- নেতা, অনুগামী ও পরিস্থিতি। একটি আরেকটির পরিপূরক। কোনো রাজনৈতিক দলের ‘নেতা’ অন্যতম উপাদান হলেও একমাত্র নয়। নেতা ছাড়া দল চলে না বলা হলেও ‘অনুগামী’ ছাড়া দল অন্ধ। নেতা হয় ক’জনা। আমজনতাই হতে পারে দলীয় অনুগামী। এক্ষেত্রে নেতা কাণ্ড হলে অনুগামী হলো দলের শেকড়।
তিনি মনে করতেন, কোনো রকম প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনমত সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা গেলেও দমিয়ে রাখা যায় না। কোনো ষড়যন্ত্র ও দমননীতি কোনো শাসন ব্যবস্থাকে অমর-অক্ষয় করে রাখতে পারে না। সম্ভব নয়। কেননা, রাজনীতিতে জনগণই মূখ্য।
আবদুল হাই দেশকে কত ভালোবাসতেন, দেশের মানুষের জন্য, দেশের মুক্তির জন্য, তার ব্যাকুলতা কত গভীর ছিল উপরিউক্ত বক্তব্যেই তা স্পষ্ট। অভিব্যক্তিতেই শুধু নয়, কর্তব্যপরায়ণে ছিলেন প্রসন্নচিত্ত। কারও সালাম পেতে না দেখার ভান ধরতেন না। আগুয়ান হয়ে নিজেই ভরাটকণ্ঠে ডাকজুরে কাছে এনে পরম মমতায় সুখ-দুঃখের খুঁজখবর নিতেন। তার মতে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার দূর বেশি নয়। ভালোবাসা এবং ন্যায্যতাতেই যত খুশি। এটুকুনে কার্পণ্যতা দৈন্যতা বৈ অন্যকিছু নয়।
সহমর্মিতায় বিশেষ করে হাওরের জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করেছিলেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞান ও অকৃত্রিম দরদ দিয়ে। একটি প্রখর বাঙালি জাতীয়তাবাদী অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনাকে এগিয়ে নিয়েছেন অতুলনীয় নেতৃত্বগুণ ও স্বদেশ প্রেমের মহিমায়। দীক্ষাপ্রাপ্ত ঠিক যেন ক্যারিশমাটি নেতৃত্বের অধিকারী অগ্রজ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদেরই প্রতিচ্ছবি।
আবদুল হাই ছিলেন পরের তরে সাদা মনের মানবিক মানুষ। ডাগর চোখের সুদর্শন প্রোজ্জ্বল এই ব্যক্তিত্ববান লোকটি চলনে বলনে হাস্যোজ্জ্বল বিনয়ী ও কমনীয় ছিলেন। সৌখিন হলেও সাত-পাঁচ বা নয়-ছয়ে নয় তথা জীবনসত্তার নয়, ছিলেন মানবসত্তার অধিকারী। কারও কান কথায় কান ভারি করতেন না। কারও উপকার ছাড়া অনিষ্ট চিন্তা অন্তরে পোষতেন না। সবাইকে আপনজন ভাবতেন। সবার প্রতিই তার মায়াবী সম্বোধন ছিল ‘তুমি ত আমরার লোক’।
সম্বোধনে ও মর্যাদায় কারো বেলাতেই ভিন্নতা ছিল না। বড় ভালো লোকটির সাথে সবিশেষ দেখা গত নভেম্বরে বঙ্গভবনে। ক্ষমতার ধারে কাছে ঘুরাঘুরির বাতিক ছিল না বলে অনুশাসনে বলেছিলেন, অনেকেই ত দুই লাইন লেইখ্যা কত কি! আর ঘনিষ্ঠজন অইয়াও তুমি কি না এলিয়েনের লাহান।
এটা আসলে তারই গুণের দিক। পারিবারিক মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তিসহ সংসদ ভবন এবং বঙ্গভবনের মতো শীর্ষস্থানে বসেও প্রচারবিমুখ নিভৃতচারী পরোপকারী এই পথের দিশারীর কথা বরাবরই সবার কাছে ছিল সবকের মতো। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এপিএস, সর্বোপরি সহোদর হয়ে রাজ্যজয় করার উদ্যত দরবারি সবার মাথার ওপর ঘুরার কথা থাকলেও ছিল না ক্ষমতার কোনো দম্ভ। অহংবোধের লেশমাত্র ছিল না মনে। অথচ এলাকা ধরে রাখার নামে রাজনৈতিক ধ্বজাধারী অনেককেই দেখা গেছে দাবড়িয়ে বেড়াতে, দলীয় অনুগামীদের মাথায় ক্ষমতার কাঁঠাল ভাঙতে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘কারও চরিত্র অভীক্ষণ করতে ক্ষমতা দিয়ে দেখ।’ এক্ষেত্রে আবদুল হাইয়ের উদারতাই ছিল নীতি।
ক্লিন ইমেজ ছিল আবদুল হাইয়ের ভূষণ। কোনো প্রাপ্তি ছাড়াই সরল মনে পরের তরে জীবন ধরে দেওয়ায় হাওরবাসীর হৃদয়ে বসেছিলেন স্বপ্নের বরপুত্র হয়ে। হাওরবাসীও শতজনমের চেনা মহৎপ্রাণ বন্ধুপ্রতিম প্রিয় অভিভাবকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরও ছিল না কোনো ঘাটতি। মূল্যায়িতও হচ্ছেন মনের মাধুরীতে- ‘হাই সা’ব আছিন সাদাসিধা ও দিলদরিয়া মানুষ। পেডের ভিত্তে দাঁত (শয়তানিবুদ্ধি) আছিন না। মন খুইল্যা দুইডা কতা কওন গ্যাছে।’
আবদুল হাই দেশের বিখ্যাত এক রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলাধীন কামালপুর গ্রামে। পিতা হাজী তায়েব উদ্দিন এবং মাতা তমিজা খাতুন। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম এবং ভাইদের মধ্যে চতুর্থ।
আবদুল হাইয়ের অন্তর্ধানে বর্তমানে ভাই-বোনের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল হক নূরু ও মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যন আছিয়া আলম ছাড়া অন্যরা কেউ বেঁচে নেই।
স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে স্ত্রী নাহিদ পারভিন ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। পুত্র প্রকৌশলী শাইখ মোহাম্মদ ফারাবী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। জ্যেষ্ঠকন্যা সুমাইয়া ফাজরিন মাশিয়াত পেশায় চিকিৎসক এবং কনিষ্ঠকন্যা মিম শাহরিন অনসূয়া জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সাইন্স টেকনোলজিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত।
তিনি মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘প্রবাহের’ সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জনসেবা ও আধুনিক হাওর রুপায়নে তথা উন্নয়নেও তার অবদান অনস্বীকার্য।
আবদুল হাই প্রশাসক হিসেবেও ছিলেন সততা ও ন্যায্যতার পরাকাষ্ঠায় পোড়াসোনা। তার চলার পাথেয় ছিল বিখ্যাত লিও টলস্টয়ের লেখা ‘How much land does A man Need’ অর্থাৎ ‘একজন মানুষের কতটুকু জমি দরকার’। গল্পে লুটেরা লোভী পাখোমের কপালে জুটেছিল মাত্র ৬ ফুট জায়গা, যেখানে কবর দেওয়া হয়।
চেতনার প্রেক্ষিত, অমিত সাহস ও নির্দেশিকা কার্যকরভাবে পালন করার সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া লোকের অভাব হালে বড়ই প্রকট। তার মৃত্যতে সমাজ, দেশ ও জাতি একজন অকুতোভয় দেশপ্রেমিক একজন বীর সেনানী এবং প্রগতিশীল ও নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক সংগঠককে হারাল। আর হাওরবাসী হারাল ‘আমরার লোকটিকে’।
যেজনে পাছে লোকে ভালো বলে সে-ই তো ভালো। অসীমের পানে প্রিয় ক্ষণজন্মা প্রোজ্জ্বল এই হাওর অভিভাবকের বিদায়ের শূন্যতা পূরণের নয়। ‘কীর্তিমানের মৃত্য নেই’ সর্বজনবিদিত হলেও প্রকৃত শোক বা প্রকৃত কষ্টের কোনো ভাষা নেই। ভাষা হয় না। শান্তনা এই, ‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে।’
আবদুল হাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সফল, দাম্পত্য জীবনে সুখী এবং ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সাধু বা ধর্মপরায়ণ। শেষবিচারেও লাভ করো খোদার দিদার।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আবদুল হাই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ