মানবতার বাতিঘর শেখ হাসিনা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৩৬
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যিনি আজ বিশ্ব মানবতার বাতিঘর। যার সুদূরপ্রসারী চিন্তা, বিশ্বভাবনা, জনভাবনা আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রশংসিত সারাবিশ্বে— তার নাম শেখ হাসিনা।
মিয়ানমার যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, মাতৃস্নেহে বিশ্বজননীর কোলে তুলে নিয়েছেন বিশ্বনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রাম ও সাধনার প্রতিচ্ছবি কাকে না আপ্লুত করে ? শুধুমাত্র মত ও পথের পার্থক্য আছে এবং যারা জন্ম থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী তাদের কথা ভিন্ন। তাদের কাছে শেখ হাসিনা যেন গাত্রদাহ। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা বেঁচে না থাকলে অনেক আগেই তাদের পূর্বপুরুষদের পেয়ারে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরে যেতে পারতো বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বাংলাদেশ হতো জঙ্গিরাষ্ট্র। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এই বাংলাদেশ তারা তো চায়নি কখনো।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যের নির্মম মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যস্ত শেখ হাসিনা। ‘৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভ্রান্ত ইতিহাসের অন্ধকারের যবনিকা ঠেলে আলোকবর্তিকা হয়ে জাতির কাছে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
১৯৮১ সালে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবনে যবনিকা টেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এদেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীল রাজনীতি ফেরাতে দেশে আসেন শেখ হাসিনা। বাংলার আকাশের কালো মেঘের মতোই সেদিন প্রকৃতিও ছিলো কালো মেঘে ঢাকা। ছিলো কালবৈশাখী ঝড়। বাতাসের বেগ ছিলো ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। তারপরেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে নেমেছিল মানুষের ঢল। জনতার আবেগের কাছে সেদিন হার মেনেছিলো প্রকৃতিও। জন্মভূমির মাটিতে পা রেখে আবেগ আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে পিতার নির্দেশিত পথে প্রয়োজনে বাবার মতো নিজের জীবনও উৎসর্গ করবেন তিনি। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের করেন ঐক্যবদ্ধ। সেই থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান তিনি। শিশুকাল থেকেই মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মানবিক শিক্ষায় আলোকিত হন শেখ হাসিনা। বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৫৬ সালে ঢাকার টিকাটুলি নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে গবর্মেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নির্বাচিত হন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রলীগ রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। অংশগ্রহণ করেন সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন স্নাতক ডিগ্রি।
১৯৬৭ সালে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। শেখ হাসিনার দুই সন্তান, সজীব ওয়াজেদ জয় একজন খ্যাতিসম্পন্ন প্রযুক্তি বিশারদ, কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ পুতুল একজন মনোবিজ্ঞানী।
চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনবার। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার সাথে সাফল্যের পাল্লা ভারী করছেন প্রতিনিয়ত। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণসহ সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাসসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেন । বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে উদ্যোগ নেন ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করার। জাতিকে কলংকমুক্ত করার জন্য শুরু করেন জাতীয় চারনেতা হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। উদ্যোগ নেন বিদ্যুতের আলোতেও দেশকে আলোকিত করতে। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩,২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নকে ডিজিটাল সেন্টারের আওতায় আনা, মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড, ১০ টাকায় তাদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়া, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ জনগণের জীবন মান উন্নয়নে গ্রহণ করে বহুমুখী জনবান্ধব কর্মসূচি। শুধু উদ্যোগ গ্রহণ নয় তার শতভাগ বাস্তবায়নেও চেষ্টা চালায় তার সরকার।
এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ আবারও বেছে নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নীত হয় মধ্যম আয়ের দেশ। ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থনের ফলে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান ঘটে। নিজস্ব অর্থায়নে বহুল আলোচিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় এই আমলে, যা আজ স্বপ্ন নয় দৃশ্যমান বাস্তবতা।
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নিতে আর ভুল করে না বাংলাদেশের জনগণ। প্রয়োজন বোধ করেনি আর অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার। টানা তৃতীয় মেয়াদে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ পান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অনেক আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সফলতা অর্জন, স্বাস্থ্য , শিক্ষা, কৃষিসহ জনকল্যাণমুখী সকল কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ এগিয়ে নেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয় । এ পর্যন্ত ৩৯ টি আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া , বেলজিয়াম ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস, এবং মানবিক বিষয়ে অর্জন করেছেন ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী।
জাতিসংঘ ২০১০ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিশেষ করে শিশু মৃত্যুহার কমানোতে অবদানের জন্য জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে সম্মাননা প্রদান করেন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে প্রচারণায় অবদানের জন্য জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রদান করে আইসিটি সাসটাডইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেন ইউনেস্কো ও ওম্যান পার্লামেন্ট কর্তৃক ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও মহাত্মা গান্ধী পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, পার্ল এস বার্ক অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড। এই সকল পদক ও সম্মাননার চেয়ে শেখ হাসিনার বড় অর্জন দেশের জনগণের ভালবাসা। আর তাই তাঁর সকল অর্জনকে আপামর জনগণের জন্য উৎসর্গ করছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার জীবনের বড় প্রাপ্তি মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। শুধুমাত্র মানবিক কারণে নিজ দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উপেক্ষা করে ১০ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে তিনি আজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের নয় সারা বিশ্বের মানবিক নেতা। শেখ হাসিনা আজ মানবিকতার বাতিঘর। এই ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাঁর মানবিকতার আলোয় আলোকিত হোক বাংলাদেশ। আলোকিত হোক বিশ্ব। জন্মদিনে অন্তহীন শুভকামনা মানবিক নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট