Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পছন্দের পেশা নির্বাচন, সফলতা ও আর্থিক সমৃদ্ধি


১ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৩১

জীবিকার জন্য আমাদের কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত থাকতে হয়। এটাই নিয়ম। যা করতে ভালো লাগে, তাই করা উচিত। অন্যের পছন্দের জন্য, নিজের ভালো লাগার কাজ বাদ দেওয়া অদৌ উচিত নয়। এতে করে আর যাই হোক, সাফল্য আসে না। পেশা নির্বাচনের সময় অবশ্যই নিজের ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন, এতে করে কাজের প্রতি যেমন একাগ্রতা তৈরি হয়, স্বীকৃতিও পাওয়া যায়। সৎ থেকেই মোটামুটি আর্থিক সমৃদ্ধি, পদন্নোতি, ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধি, বিদেশে প্রশিক্ষণ, নতুন কিছু উদ্ভাবন ইত্যাদি পাওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

অথচ আমাদের ঘটে ঠিক তার উল্টো। অবুঝ সন্তানটির ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তে ভালো লাগে না, কিন্তু বাবা-মায়ের তথাকথিত স্ট্যাটাস বৃদ্ধির জন্য সন্তানের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে সেই ছোট বয়স থেকে। লেখাপড়া তো নিজের কাছে। নিজে লেখাপড়া না করলে বিশ্বের কোন স্কুল আপনাকে শিক্ষিত করতে পারবে না। আমাদের দেশে যারা শীর্ষ ব্যক্তিত্ব রয়েছেন (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, আমলা, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী) প্রায় সবাই গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে শহরে এসেছেন। বড় হবার মানসিকতা থেকেই তাঁরা আজ দেশের দশ জনের একজন। আর্থিক স্বচ্ছলতার মধ্যেই জীবন পার করছেন।

বিজ্ঞাপন

আবার যারা শিক্ষিত ঘরের সন্তান, টাকা পয়সার মধ্যে বড় হয়েছেন, তারা অনেক সময় নিজেদের সেইভাবে মেলে ধরতে পারেন না। কি বলবেন, এই সন্তানরা সুযোগ সুবিধা কম পেয়েছে? বিষয়টা তা নয়। দেখা যাচ্ছে, এই সন্তানদের উপর তাদের অভিভাবকদের সবকিছুতে চাপ থাকে। কোন স্কুলে পড়বে, কোন বিভাগে পড়বে, কোন পেশায় যাবে ইত্যাতি ইত্যাদি। সব কিছু যদি নীতি নির্ধারক মহল ঠিক করে দেয়, তবে নতুন কিছু আশা করা ভুল হবে। একজন কৃষক কখনও তার সন্তানকে বলে না, তোমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। সন্তান তার পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। তারা নিজের পছন্দের কাজকে ভালোবাসে তাই সফল হয়।

আমাদের দেশে আরেকটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। সবাইকে বিএ, এমএ ডিগ্রীধারী হতে হবে। এটা ভালো লক্ষণ না। যার পুঁথিগত বিদ্যা ভালো লাগে না, তাকে কেন জোর করে বই পড়তে হবে। অনেকের কারিগরি কাজে প্রচন্ড আগ্রহ থাকে। তারা কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী নিজ নিজ বিষয়ের উপর হবে অত্যন্ত দক্ষ। আমরা আমাদের দক্ষ মানব সম্পদ বিদেশে রফতানি করতে পারব। দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে আমাদের দেশের বৈদেশিক রেমিটেন্সের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

বাবা জীবনে ডাক্তার হতে পারেন নি, সন্তানকে ডাক্তার বানিয়েই ছাড়বেন। সরকারি, না হলে বেসরকারি, সেটাও না হলে বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়িয়ে আনবেন। সন্তানের কি ইচ্ছা, সেটা জানার প্রয়োজন কয়জন পিতা-মাতা করেন? এই প্রতিফলন কর্মজীবনেও দেখা যায়। অমুকের ছেলে সরকারি চাকরি করে, তোমাকেও করতে হবে। কি দরকার, আপনার সন্তান যদি ব্যবসা করতে চায়, তবে তাকে সেই সুযোগ দিন। যে কাজই করুক, শীর্ষে উঠতে হবে। এই মানসিকতা তৈরী করতে সহায়তা করুন। স্ট্যাটাস নিয়ে চিন্তা করবেন না। সেটা এমনিতেই চলে আসবে। অনলাইন ভিত্তিক খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান ২০০৬ সালে আকর্ষণীয় চাকরি ছেড়ে একাডেমির কাজে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। কি বলবেন আপনি, সালমান খানের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? এখন বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ত্বের তিনি একজন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি বেল গেটস। আমাদের আমাদের দেশে বিল গেটসের জন্ম হলে, পাড়া প্রতিবেশিরা সবাই বলত, ছেলে উচ্ছন্নে গেছে। পড়ালেখাই শেষ করতে পারল না। অথচ সেই বিল গেটস এক যুগ ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। আর যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারেন নি, সেই হার্ভার্ডসহ বিশ্বের প্রথম সারীর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। জীবনের সফলতার আর কি বাকি রইল।

বাচ্চাদের ব্যাগের ওজন বৃদ্ধি করে, কখনো তাদের শিক্ষিত করা সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে এর প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের অভিভাবকদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। নিজেদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া এখন যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্মের পরেই যেন সন্তানের ভবিষ্যত নির্ধারণ করা যাচ্ছে। সন্তান কি চায়, তার খোঁজ খবর কে রাখে? সন্তানের ভালো লাগে ইতিহাসের বিষয়াদি, শিল্পকলা, অথচ বাবা-মায়ের জন্য তাকে পদার্থ বিজ্ঞানের তত্ত্ব পড়তে হচ্ছে। পেশাগত জীবনে কি আশা করা যায় সেই সন্তানের কাছ থেকে?

ভারতের গ্রেট ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার তাঁর বিদায়ী ম্যাচে বলেছিলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন আমার বাবা। ১১ বছর বয়সে উনি আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমার উচিত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া আর আমি যেন জীবনে চলার পথে কোন শটকার্ট পথ বেছে না নেই। উনি আমাকে সবার আগে ভালো মানুষ হতে বলেন, সেটা আমি সবসময় পালন করেছি। প্রত্যেকবার আমি যখন বিশেষ কিছু করেছি আর নিজের ব্যাটটি আকাশের দিকে উঁচু করে দেখিয়েছি, সেটা আমার বাবার জন্য ছিল।

মুচির ছেলে যদি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারে, মাঝির ছেলে যদি দেশসেরা বিজ্ঞানী হতে পারে, রাখাল বালক যদি গভর্নর হতে পারে, ৫০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ব্যক্তির যদি মূলধন যদি ৮০,০০০ কোটি টাকা হতে পারে, তবে আপনার সন্তান কেন পারবে না? আপনার দায়িত্ব ভালো মানুষের মূলমন্ত্র তার মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া। সেটা যদি সঠিকভাবে করতে পারেন, তবে আপনার দায়িত্ব শেষ। এরপর ছেড়ে দিন তার নিজের পছন্দের জগতে। সফলতা আসবেই। সাথে আসবে আর্থিক স্বচ্ছলতাও।

লেখক- যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

কারিগরি শিক্ষা পেশা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর