ক্যাম্পাসে বন্ধুত্ব— অটুট থাকুক এ বন্ধন
৯ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৩১
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মানেই অদ্ভুত বন্ধুত্বের গল্প। মানে প্রাণখুলে হাসি, আড্ডা, খেলাধুলা আর বিভিন্ন তর্ক-বিতর্ক। বন্ধুত্ব হলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক। আত্মার শক্তিশালী বন্ধন বন্ধুত্ব ।
দেশের ভিন্ন-ভিন্ন জায়গা থেকে আসা, ভিন্ন মন-মানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো এক হয়ে যায় ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বে। সম্ভবত এখানেই ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বর সবচেয়ে বড় সার্থকতা। এই বন্ধুত্ব মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা।
‘বন্ধুত্ব’, এই শব্দে গঠনগত জটিলতা যতখানি, সম্পর্কটা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি সহজ আর সুন্দর। বিশ্বাস, ভালোবাসা, স্নেহ এসব একসাথে নিয়ে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব কারও কাছে অনেক ভারী আর কারও কাছে ভরসার শব্দ।
বন্ধুত্ব— সে তো বিরান মরুভূমিতে চাতকের চোখে বৃষ্টির ন্যায়। বন্ধুত্ব— সে তো বর্ষণমুখর দিনে এক ছাতার নিচে কয়েকজন। বন্ধুত্ব— পরীক্ষার হলে আশার একমাত্র অবলম্বন, আর পরীক্ষায় খারাপ করলে সহানুভূতির হাত। বন্ধু শব্দটির মাঝে মিশে আছে নির্ভরতা ও বিশ্বাস। একজন ভালো বন্ধু শুধু একজন ভালো বন্ধুই নয়, ভালো অভিভাবকও বটে। ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে আপনজন তো এরাই। সময়-সুযোগ পেলেই যাদের সঙ্গে জমে ওঠে গল্প, আড্ডা, গান।
ক্যাম্পাস জীবনের বন্ধুত্ব একটু অন্যরকম। একটু আলাদাভাবেই অন্যরকম। সারা দিনের হাজারো ব্যস্ততা সত্ত্বেও এক ডাকেই কাছে পাওয়া যায় সবাইকে। যেন কারোরই কোনো ক্লান্তি নেই, ব্যস্ততা নেই। প্রতিদিনই জমে ওঠে গল্প-আড্ডা-গান। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা, রাজনীতি-অর্থনীতি, প্রেম-ভালবাসা, ক্লাস-পরীক্ষা সবই উঠে আসে এই আড্ডাবাজিতে। গল্পে আর আড্ডায় কাটে সময়। কাকে কিভাবে পচানো যায়, চলতে থাকে আরও কতকিছু। আর ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপার তো আছেই।
ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপারটা হলো ক্লাস করা। সঙ্গে আবার বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আরও কতকিছু। কিন্তু এতকিছুর পরও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কোনো কমতি থাকে না। ক্লাসের ফাঁকে একটু সময় পেলেই তাই বসে পড়ি রেললাইনে, কখনও বা লাইব্রেরিতে বা কখনও ডিপার্টমেন্টেরই করিডোরে। দুষ্টামি আর খামখেয়ালিপনাতেও জুড়ি নেই এ বন্ধুদের। প্রত্যেক বন্ধু সার্কেলেই হয়ত এমন কেউ থাকে যে খেতে একটু বেশি পছন্দ করে, বা এমন কেউ থাকে যে ঘুরতে বেশি পছন্দ করে, আবার এমনও কেউ থাকে যে সবসময় সেজেগুজে টিপটপ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। আর প্রতিদিনের আড্ডায় পচানির খোরাক হয় এরাই। সব মিলিয়ে প্রতিদিনের জীবন যেন নতুনভাবেই শুরু হয় প্রতিদিন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মীম রিয়া বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাস জীবন হাসি, তামাশা, সুখ, দুঃখ মিলেই। ক্যাম্পাসে সময়-সুযোগ পেলেই তো তাই মেতে উঠি আড্ডায়, ঘুরতে যাই বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এসব আর হচ্ছে না। মিস করি সব বন্ধুদের। খারাপ সময় পেরিয়ে গেলে নিশ্চয়ই সবার দেখা হবে আবারও। সত্যি কথা বলতে, ক্যাম্পাস থেকে যখন চলে যাব, তখন এ দিনগুলো খুব মিস করব”।
ইতিহাস বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী যুথি বলেন, “বন্ধুত্ব সে তো বর্ষণমুখর দিনে এক ছাতার নিচে কয়েকজন। বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিনের পূণর্মিলনী আমাদের এই আড্ডা ও স্মৃতিগুলো। ছোট ছোট অনুভূতির সম্মিলিত প্রকাশ এ বন্ধুত্ব। ক্ষুদ্র স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে কখনই আমরা আমাদের এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে চাই না। আমরা চাই আমাদের এ বন্ধুত্ব যেন আজীবন এমনই অটুট ও অমলিন থাকে। দেখা হবে ক্যাম্পাস খুললে”।
বন্ধুত্ব সম্পর্কে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ বলেন, “ভালোবাসার অভিন্ন সত্তার নাম এই বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে এগিয়ে চলে স্বীয় গন্তব্যে”।
ক্যাম্পাসের দিনগুলো যেন বন্ধু ছাড়া কেবল এক নির্জন ভূমি ছাড়া আর কিছুই নয়। অঞ্চল, সংস্কৃতি, জাতি, ধর্মকে উপেক্ষা করে বাঁচার নামই তো বন্ধুত্ব। বন্ধু মানে কিছু স্বপ্নের ভাগাভাগি, বন্ধু মানে ঝগড়ার পর কাঁধে কাঁধ রাখা। বন্ধুত্বেও সম্পর্কই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। বন্ধুত্ব হওয়া উচিত অনেক সুন্দর। বিশ্বাস থাকা দরকার সঙ্গে ভালোবাসাও। আসল কথা হলো— বন্ধুত্ব হলো যে পাশে থাকে শুধু ভালো সময়গুলোতে নয়, খারাপ সময়েও। এখন মিস করি বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো। পরিস্থিতি ঠিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে আবারও আমাদের বন্ধুত্বের আড্ডা জমে উঠবে।
খামখেয়ালি আর দুষ্টুমিতে ভরা বন্ধুত্ব হলেও যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতায় সবার আগে পাশে থাকে এ বন্ধুরাই। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভাগ বসায় যারা, যে কোনো বিপদ-আপদে ছায়ার মতো পাশে পাওয়া যায় সেই তাদেরকেই। এটাই তো ক্যাম্পাস জীবন, যেখানে বন্ধুরাই অভিভাবক, বন্ধুরাই আত্মীয়স্বজন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সবসময়ের সঙ্গী।
একদিন শেষ হয়ে যাবে ক্যাম্পাস জীবন। চলে যেতে হয় সবাইকে। অশ্রুজলে ভাসিয়ে প্রত্যেকে বিদায় জানাবে তার প্রিয় ক্যাম্পাসকে। নতুনরা আসে। তারাও গড়ে তোলে একই রকম নতুন বন্ধুত্ব। হাসি-আড্ডায় কাটায় দিন। দিনশেষে তারাও চলে যায়। শুধু রেখে যায় স্মৃতি, রেখে যায় ভালবাসার কিছু মুহূর্ত। কিন্তু তারপরও সবসময় মুখর থাকে ক্যাম্পাস। নতুনদের নতুন বন্ধুত্বকে ঘিরে। ভালো থাকুক সবার সেই বন্ধুত্ব, অটুট হোক এ বন্ধুত্বের বাঁধন। এই দুঃসময়ের অবসান ঘটিয়ে নতুন কোনো পরিবেশে, নতুন রূপে দেখা হবে সবার।
লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- গোপালগঞ্জ