Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র রফিক-উল হক


২৫ অক্টোবর ২০২০ ১২:১৮

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের চলে যাওয়ার এখনো ১ মাস হয়নি। এর মাঝেই আইন অঙ্গনে নতুন শোকের আবহ। দেশের আইনাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক ৮৫ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। শনিবার সকালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থবোধ করলে গত ১৭ অক্টোবর সকালে পল্টনের বাসায় ফিরে যান তিনি। তবে ওই দিনই দুপুরের পর তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার পর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৯ অক্টোবর তার করোনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন থেকে অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল এই প্রবীণ আইনজীবীর।

বিজ্ঞাপন

রফিক-উল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালে কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। মা নূরজাহান বেগম। তার বাল্যকাল কেটেছে কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন চেতলা স্কুলে। রফিক-উল হক ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৫৮ সালে এলএলবি করেন। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন রফিক-উল হক।

বিজ্ঞাপন

১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে তৎকালীন পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন রফিক-উল হক। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়েছিল তাকে।

রফিক উল হক একজন মানবিক মানুষ ছিলেন। তিনি আদ দ্বীন হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল তৈরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। বারডেম হাসপাতালের একটি বিশেষ বিভাগ তৈরিতে বড় অঙ্কের অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ঢাকার বাইরে কয়েকটি সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালের জন্যও তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছেন।

দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন প্রয়াত স্বনামধন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি একাধারে যেমন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন, তেমনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষেও আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন তিনি। দেশের ইতিহাসে ও আইন পেশায় এমনটি বিরল। বাংলাদেশের আর কোনো আইনজীবীর ক্ষেত্রেও এমন নজির নেই।

তিনি লড়েছেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনারও আইনজীবী ছিলেন। নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন সম্পর্কে জীবিত অবস্থায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক জানিয়েছিলেন, “বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে পেরেছি। তার কন্যা শেখ হাসিনাকেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেল থেকে মুক্ত করে এনেছি। আবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াকেও জেল থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। এটাই বড় পাওয়া। এখন আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই”।

২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মিথ্যা মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। তখন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি সহায়তার জন্য অনেক ঘুঘু আইনজীবী এগিয়ে আসেননি। অথচ আইন জগতের কিংবদন্তি প্রিয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক নানা পরামর্শ দিতেন”।

তিনি জানান, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করেন। সেই দুঃসময়ে ব্যারিস্টার রফিকুল হক তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে আসেন। শেখ হাসিনা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সে কথা স্মরণ করেন।

অসময়ে আইনজীবী রফিক-উল হক চলে যাওয়া শুধু আইনাঙ্গনে নয়, দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তবুও অকাল মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ  

ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর