যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব; পরশের পরশ ছোঁয়ায় জেগে উঠুক কোটি তরুণ
২৩ নভেম্বর ২০২০ ২০:৩৩
“আমার চেষ্টা থাকবে যুব সমাজ যেনো ‘আই হেটস পলিটিকস’ থেকে বেরিয়ে এসে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বলে দেশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে”– এইতো সেদিনের কথা, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে সপ্তম কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এভাবেই যুবসমাজের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলূল হক মণির সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ ফজলে শামস পরশ।
চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই — এমন বক্তব্যে প্রথম দিনেই যুব সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হন গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা পেশায় জড়িত থাকা শেখ ফজলে শামস পরশ। মাত্র ৬ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই কলঙ্কিত রাতে হারান প্রিয় মা-বাবাকে। বাবার হাতে গড়া সংগঠন যুবলীগের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই যুব সমাজের মণিকোঠায় আবেগ আপ্লুত বক্তব্যে স্থান করে নেন শেখ পরশ।
তার এই নতুন পথযাত্রায় যোগ্য জুটি হিসেবে যুক্ত হন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল। দল ক্ষমতায়। মানবতার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। রাজপথে নেই বিরোধী দলের কোনো অস্তিত্ব। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া রাজপথ পাহারার কোনো কর্মসূচি নেই। সামনে শুধু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। বছর জুড়ে যুব সমাজকে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের আদর্শে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী পরিকল্পনার ছক যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের চিন্তা-চেতনায়। সাথে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যুবলীগকে আদর্শিক ও মানবিক সংগঠনে পরিণত করতে একটি স্বচ্ছ কমিটি উপহার দেওয়ার প্রত্যয়।
মানুষ চাইলেই সব স্বাভাবিকভাবে হয় না । চলার পথে অনেক বাধা অনেক বিপত্তি। সামনে কোনো আন্দোলন সংগ্রাম না থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ নতুন পথে পরিচালিত করে যুবলীগকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের চেয়ে তখন যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব গুরুত্ব দেয় মানুষের পাশে থাকাকে। আন্দোলন-সংগ্রামে, সংকটে নেতৃত্বদানকারী যুবলীগ পরিণত হয় মানবিক সেবামূলক সংগঠনে।
অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির শ্রেষ্ঠ দার্শনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি প্রতিষ্ঠা করেন আদর্শিক যুবলীগ। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর নতুন করে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ পরশের মাঝে যুবলীগ খুঁজে পায় যুবলীগের স্বপ্ন পুরুষকে। নতুন কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ। যুবলীগের নেতাকর্মীরা শীতবস্ত্র নিয়ে মানবিক সহায়তার হাত বাড়ায় অসহায় ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের পাশে। এটা নতুন কমিটির কোনো সাফল্য নয়, আওয়ামী যুবলীগের রুটিনওয়ার্ক মাত্র। শীতার্ত মানুষের পাশে যুবলীগ সব সময় থাকে। তবে অতীতের যে কোনো কমিটির চেয়ে তৎপরতার মাত্র একটু বেশি ছিলো। কিন্তু করোনা সংকটকালে জীবন বাজি রেখে মানবিকতার যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুবলীগ নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গত এক বছরে মানবিক কর্মকাণ্ডকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব। যুবলীগ চেয়ারম্যানের নির্দেশনা আর সাধারণ সম্পাদকের মাঠপর্যায়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানবিকতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে যুবলীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। যুবলীগকর্মী নূর হোসেনরা যেভাবে রাজপথে জীবন দিতে পারে, তেমনি যেকোনো সংকটে জীবন বাজী রাখতে পারে যুবলীগ আবারো তা প্রমাণিত করোনা সংকটকালে। মানবিক কাজে দেশবাসীর আস্থা অর্জনে যুবলীগ কতটা সফল হয়েছে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বক্তব্যেই তা ফুটে উঠেছে।
গত বছর ২৬ মার্চ দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণ করে যুবলীগ। কর্মহীন, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশনায় জীবন বাজী রেখে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা। শুধু সাধারণ মানুষ নয় সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ অসহায় মানুষকে চাল, ডাল, তেল , আলু, লবণ , সবজী, দুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি নগদ অর্থ পৌঁছে দেয় যুবলীগ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই সহায়তার আওতায় আসে । যে কর্মসূচি এখনো অনেক জায়গায় চলমান। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১ কোটিরও অধিক মানুষের কাছে করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও সাবান পৌঁছে দিয়েছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। শুধু মানবিক সহায়তার হাত বাড়ানো নয়, করোনা আক্রান্ত মৃতব্যক্তির লাশ দাফন ও সৎকারেও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অনন্য ভূমিকা রাখে, যা একদিন অন্দোলন-সংগ্রামের মতই সোনালী ইতিহাস হয়ে থাকবে মানবতার ইতিহাসে।
বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করতে না হলেও গত এক বছরে কম ধকল যায়নি যুবলীগের নতুন নেতৃত্বের উপর দিয়ে। করোনাকালে অসহায় কৃষক পরিবারের ধানকাটা কর্মসূচি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যা কবলিত মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ তৎপরতা সব মিলিয়ে যুব রাজনীতির ইতিহাসে যুবজাগরণ সৃষ্টি করেছে আওয়ামী যুবলীগ। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে আদর্শিক যুব সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্নবীজ রোপণ করেছিলেন যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণি। আজ তার গর্বিত সন্তান শেখ পরশের যাদুময়ী পরশে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জহুরী রতন চিনেন শেখ হাসিনা তা আবারো প্রমাণ করেছেন, শেখ ফজলে শামস পরশ আর মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে যুবলীগের নেতৃত্বে এনে।
একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতা, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মেধাবী তরুণদের সমন্বয়ে ১৪ নভেম্বর যে বিতর্কমুক্ত কমিটি উপহার দিয়েছে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব পরশ- নিখিল পরিষদ, নিঃসন্দেহে বলা যায় মেধা ও তারুণ্য নির্ভর যুবলীগ পরিণত হবে এ দেশের যুব সমাজের প্রাণের সংগঠনে। পরশ পাথরের স্পর্শে সীসা বা ধাতু যেভাবে সোনা কিংবা রুপায় পরিণত হয়, তেমনি যুবরত্ন পরশের ছোঁয়ায় যুবলীগের নেতাকর্মীরা খাঁটি সোনায় পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির আদর্শিক যুব সংগঠন যুবলীগের নেতা কর্মীরা শুধু মানবিক কাজেই নয়, যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করবে— এমন প্রত্যাশা মুজিবপ্রেমী সকল সৈনিকদের।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য