বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে চিনিয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৩৮
সারাবিশ্বে অটিস্টিক শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে ইতিমধ্যে সুনাম কুঁড়িয়েছেন বেশ। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি সায়মা ওয়াজেদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা।
আজ ৯ ডিসেম্বর। তার জন্মদিন। শুভ দিনে তাই তাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন সায়মা ওয়াজেদ।
মানুষের সেবা করতে রাজনীতি করতে হবে কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকতে হবে— এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের অটিস্টিক শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
সায়মা ওয়াজেদ একজন লাইসেন্সধারী মনোবিজ্ঞানী। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। আন্তর্জাতিক বিশ্বে তিনি পরিচিত একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে। ২০০৮ সালে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পায়। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ওয়াজেদকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন সায়মা ওয়াজেদ। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পরিচালিত ‘ফাইভ অন ফ্রাইডে’ মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক অবদানের জন্য কাজ করা নারী নেতৃত্বের যে তালিকা তৈরি করে সেখানে ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে তার পরিচালিত সূচনা ফাউন্ডেশন। তার উদ্যোগেই ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রথমবারের মতো -‘Autism Spectrum disorders and developmental disabilities in Bangladesh and South Asian’ এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১ দেশের অংশগ্রহণে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়। যা অটিজম শিশুর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। যেখানে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অংশগ্রহণ করেন। গঠিত হয় ‘South Asian Autism Network (SAAN)’। যার সদর দফতর করা হয় বাংলাদেশে।
সায়মা ওয়াজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভলোপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস হয়। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ কাজ করছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একজন ট্রাস্টি সায়মা ওয়াজেদ।
সুযোগ্য মায়ের সুযোগ্য কন্যা। মা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেমন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, কন্যা সায়মা ওয়াজেদও সমাজের বিশেষ শ্রেণি অটিস্টিক শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
মহীয়সী এই নারীর জন্মদিনে তাকে জানাই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
লেখক: সংবাদকর্মী