ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয়— বাস্তবতা
১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:০৩
বিজয়ের প্রায় অর্ধশত বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ রোপণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কেবল স্বপ্ন নয়— বাস্তবতা। তথ্যপ্রযুক্তির বাহনে চড়ে দুরন্ত গতিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল সেবা। শহর থেকে শুরু করে দুর্গম প্রান্তিক এলাকার পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জীবনেও লেগেছে ডিজিটাল স্পর্শ। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন যাপিত জীবনকে বদলে দেওয়ায় সফল এক অভিযাত্রার নাম।
তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এ যুগে বাংলাদেশ আজ সামনের সারির একটি দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার। প্রযুক্তিনির্ভর এ পৃথিবীতে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, পড়াশোনা সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কল্যাণে এখন ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী খুব সহজেই পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। ডিজিটাল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ ও তরুণদের প্রচেষ্টায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের হাত ধরেই দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে পাচ্ছেন কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। প্রতারণা বা সহিংসতার শিকার হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় জরুরি সেবা। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যও এখন ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল কমিউনিকেশনের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসা, উদ্যোক্তা তৈরি, পণ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটানো যায় খুব সহজেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ঘরে বসেই নগদ, বিকাশ, ইউ ক্যাশ, শিউর ক্যাশ প্রভৃতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তেই টাকা পাঠানো যায় আপনজনদের কাছে। বিদ্যুৎ বিলও ঘরে বসেই দেওয়া যায়। গ্রামীণ মায়েরা সন্তানের উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছেন ঘরে বসেই। এখন আর কয়েক কিলোমিটার দূরে ব্যাংকে যেতে হয় না। ডিজিটাল বাংলাদেশে বড় পরিবর্তন এসেছে ‘উবার-পাঠাও’-এর মতো রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায়। এতে যুবসমাজের কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি যাতায়াতে সুবিধাও বেড়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম জাতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অগ্রাধিকার থাকতে হবে। সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। প্রতিটি ঘরকে তার বা বেতার-পদ্ধতিতে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক-ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে। দেশের সব অঞ্চলের জনগণকে ডিজিটাল যন্ত্রে সজ্জিত করাসহ ডিজিটাল ডিভাইস প্রণয়ন করা জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া আরও যেসব বিষয় অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে তা হলো— জনগণের নিজস্ব সংযুক্তি, জনগণের সঙ্গে সরকারের সংযুক্তি, সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি, কৃষি, শিল্প ও ব্যবসার রূপান্তর। এসব সেবা এখন দেশের প্রতিটি জনগণের দ্বারপ্রান্তে। আর এরই মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনগণের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ ওয়েবসাইট ভিজিট করে পাওয়া যাচ্ছে যাবতীয় সকল তথ্য। স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদানের কারণেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরাই এ আয়োজনের লক্ষ্য। দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ছয় কোটির বেশি। গড়ে উঠেছে ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা। এর বাইরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি বড় অংশ ফ্রিল্যান্সার। দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। এর বাইরে রয়েছেন সফটওয়্যার খাতের উদ্যোক্তারা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় অগ্রগতি হয়েছে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত করায়। সব মিলিয়ে ডিজিটাল কমিউনিকেশন বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে উদ্যোক্তা তৈরিতে, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে যা ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। ডিজিটাল বিপণন প্রতিটি স্মার্টফোনকে শপিং ব্যাগে পরিণত করেছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম মানুষের জীবনকে অনেক সহজ ও আধুনিক করেছে।
বাঙালির স্বাধীনসত্তা বিকাশের বড় প্রতীক জয় বাংলা খচিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’। দেশের সবকটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ১৯ মে থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করছে। এছাড়াও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ সেবার সূচনা হয়েছে। অন্যদিকে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের উপরে। সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে পতিত আবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে যে শিল্পোন্নয়নের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে। আর এজন্য প্রয়োজন প্রযুক্তিবিদ্যার অবাধ প্রসার ও প্রয়োগ।
বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ এনে দিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে প্রজন্মের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বর্তমান বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপান্তরের পথে, আর এই স্বপ্ন এবার তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে সত্যি হতে চলেছে। প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবনকে সুখী সমৃদ্ধশালী করা এখন আর স্বপ্ন নয়। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। মানুষের জরুরি সেবাগুলোর প্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং এরই মধ্যে তা জনগণের দাঁড় গোঁড়ায় পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা।
লেখক: উপ দফতর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা