Monday 23 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিবৃত্তির একাল-সেকাল


১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৩০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের মেধাবী পেশাজীবীরা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ফলশ্রুতিতে তাদের স্মরণে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমরা যদিও অল্প কয়েকজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম শুনে থাকি; বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১ হাজার ২২২জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনন্য ভূমিকার জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

১৯৭১ সালে যেসব বুদ্ধিজীবী জীবন দেন তাদের প্রায় সবারই কোনো না কোনোভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ ছিল। অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক, গবেষক। যারা সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতেন সমাজের নানাক্ষেত্রে। এবং তারা যে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়েই কাজ করেছেন তা নয়, ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটি গঠনমূলক, সচেতন ও স্বাধীনতাকামী জাতি তৈরির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের উত্তাল বাংলাদেশ আদতেই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র যেন বেশ কয়েকযুগ ধরেই ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিজ্ঞাপন

সেই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াতেন তারা কীভাবে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতেন তা বোঝা যায় তাদের প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষোভ দেখলেই। সেই সময়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতেন এমন বিশ-ত্রিশজন শিক্ষকের নাম অবলীলায় যে কেউ বলে দিতে পারবে, আজ ৪৯ বছর পরেও। কারণ এটাই স্বাভাবিক ছিল। এবং সেই কারণেই, ওই মানুষগুলো বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে খাটো করে রাখার যে পাকিস্তানি প্রয়াস, সেটি যে সফল হবে না, তা বাতলে দিয়েছিল তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদররা।

আজকে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ত্রিশজন তো দূরের কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকের নাম বলুন যারা দেশকে কোনো একটি অঙ্গনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত এমন শিক্ষক আছেন, যাদের হার্ভার্ড, এমআইটি সাদরে আমন্ত্রণ জানাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য (হয়ত বলছি কারণ আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে)। হয়ত এমন অনেক বোদ্ধা শিক্ষক আছেন যারা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নে, অর্থনীতিতে মৌলিক অবদানও রাখছেন (এখানেও ঘোরতর সন্দেহ আছে)। কিন্তু বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা যা বুঝি, শ্রেণীকক্ষের ভিতরে ও বাইরে সমানভাবে সক্রিয় থেকে রাষ্ট্রে ও সমাজে ভূমিকা রাখা, গঠনমূলক, প্রগতিশীল ও নিদর্শনযোগ্য নেতৃত্ব দেওয়া ও নেতা গঠন করা, দেশের নানা সময়ে, নানা অঙ্গনে বিপ্লবী চিন্তার প্রসার ঘটানো, এমন কাউকে দেখেন কি?

অজুহাত দেওয়া খুব সহজ। খুব সহজে অনেকেই বলে দিতে পারেন দেশে এখন কথা বলার সুযোগ নাই, কাজ করার সুযোগ নাই, বিপ্লব করার সুযোগ নাই। কিন্তু আমরা ১৯৭১-এ যেসব বুদ্ধিজীবীকে দেখেছি তারা কী পরিস্থিতিতে পাকিস্তান শাসন ও শোষণের সময়, যুগের পর যুগ, ক্রমাগত কাজ করে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তা কারও অজানা নয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। এখনও বাংলাদেশের যেসব সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্প নিয়ে গর্ব করা যায়, তার অনেকগুলোই সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদেরই অবদান।

২০২০ সালে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই পরিষ্কার বোঝা যায়— ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবেই সফল হয়েছে। শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যায়, সারা বাংলাদেশের দিকে তাকানো লাগে না। আজ ১৯৭১-এর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা যেমন জরুরি, তেমন এটাও জরুরি— আমাদের বর্তমান সময়ের অন্তঃসারশূন্য “বুদ্ধিজীবী-সদৃশ” নেতৃত্ব থেকে বের হয়ে দেশকে সঠিক পথে যারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।

লেখক: সোশ্যাল এন্ড বিহেভিয়ারাল হেলথ সায়েন্টিস্ট, ডক্টরাল রিসার্চার, ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টো

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর