Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু, আমাদের বিজয় ও বাংলাদেশ


১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:০৫

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ মাতৃকার জন্য যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন তা অনস্বীকার্য। অগ্নিঝরা ভাষণ ও আপোষহীন দৃঢ় মনোবল নিয়ে বাঙালির স্বপ্নে লালিত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে আর ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। বাংলার পাখির গানে, বাতাসের উচ্ছ্বাসে, আকাশের নীলে, জারি-সারি ভাটিয়ালির সুরে, বৈশাখের ভৈরবীতে, বাঙালির হাসি-কান্নায় এবং মিলন-বিরহে আজও তিনি জাগ্রত। নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগই ছিল তার একমাত্র ব্রত। বঙ্গবন্ধু আর ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ নয় মাসব্যাপি যুদ্ধ করা মুক্তি সংগ্রামীদের ভুমিকা যে ভুলে যাবে বা অশ্রদ্ধা জানাবে সে দেশ ও জাতির শত্রুদের উত্তরসূরী।

বিজ্ঞাপন

শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ১০ মাসের মধ্যেই বাঙালির জন্য রচনা করেছিলেন অসাধারণ সংবিধান। সেই সংবিধানে বাঙালির সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পুরো কাঠামোকেই ঢেলে সাজানো হয়েছিলো। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মুজিব চরিত্র মাধুর্য্যে ফুটে ওঠে আপোষহীনতা। আমৃত্যু অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আলোর দিশারী মুজিব ছিলেন আপোষহীন। বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতার দৃঢ় সংকল্প, আত্মবিশ্বাস ও কঠিন আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা পেয়েছি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে বাঙালির নবজীবনের সূচনা হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাভূত হয় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। এ যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের জীবনাবসান, ২ লাখ ৭৬ হাজার মা-বোনের মর্যাদাহানীর ফলাফল আমাদের বিজয়। পেয়েছি এই লাল সবুজের পতাকা। এই দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হয় একটি জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ‘বিজয়’ শব্দটা শুনলেই আনন্দ লাগে ভিতরে। যে কোন বিজয়ই সাধারণভাবে আনন্দের হয় তবে বিজয়ের পিছনে থাকে বৃহত সংগ্রামের ইতিহাস৷ ডিসেম্বর আসলেই বিজয় দিবসের আনন্দের বাতাস বয় ভেতরে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এই বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, আছে নানা চ্যালেঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল দেশের তরুণ সমাজ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, গড়ে তুলেছে ‘মুজিব বাহিনী’। ধ্বংস করেছে হানাদার বাহিনীর একের পর এক পরিকল্পনা। এনে দিয়েছিলেন গৌরবময় বিজয়। দিয়েছে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয়। কষ্টার্জিত এই বিজয় তাই আমাদের অস্তিত্ব, এগিয়ে যাবার প্রেরণা। কোনভাবেই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই মহান মুক্তিযুদ্ধের। বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সেই চেতনা আর দেশান্তবোধ। আর আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে, যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ হাসি ফুটাবে। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি, থাকবে না কোনো অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ। বিজয়ের সমুন্নতায় সামগ্রিকভাবে আমাদের আরো অনেক বেশি তৎপরতা প্রয়োজন। সর্বোপরি স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুফল পেতে আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষ এগিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনতে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দূর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রিয় বাংলাদেশে। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে আর সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহন করে বঙ্গবন্ধু তথা আমাদের সকলের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হোক আমাদের এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

যে আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন আর চেতনা নিয়ে বাংলার মানুষ একাত্তরে জীবন দিয়েছিল, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের দামাল ছেলেরা চেয়েছিলো এমন একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ যার সর্বত্র আইনের শাসন থাকবে, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আসবে, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের সোনার বাংলার প্রতিটি পরতে পরতে দানা বেঁধেছে দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানিসহ নানা অরাজকতা। তবুও একাত্তরের আত্নোৎসর্গকারীদের সাথে একাত্ম হয়ে একটা স্বনির্ভর সোনার বাংলার পুরো জাতির স্বপ্ন।

দেশের এমন কেন খাত নেই যেখানে দুর্নীতির থাবা লাগেনি। যেদিকে তাকাই শুধু ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ঘটনা সহ নানা সমস্যা। এ সংকটকে সম্ভাবনায় তৈরি করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব। তরুণরাই পারে এ দেশের হাল ধরতে। দেশে সুশাসন, নাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্য সুষ্ঠভাবে পালন, গুণগত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া ও তরুণ প্রজন্মকে শক্তিতে রূপান্তর করার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভব৷ আর এতেই স্বার্থকতা লাভ করবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত। সার্থকতা লাভ করবে স্বাধীনতা। বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পাক দেশবাসী। অন্যথায় এ বিজয় অর্থহীন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে নাগরিকদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, অধিকারের সমতা, পরমতসহিষ্ণুতা নীতি মেনে চললে বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ।

অন্যদিকে প্রতিবছর আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এনে জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আরও উন্নতি করতে হবে। গোটা দেশ থেকে অপরাধ ও অপরাধীকে শক্তহাতে নির্মূল করতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর এ যুগে বাংলাদেশের সব প্রান্তে ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অগ্রসর বিষয়গুলোকে যথাযথ গতিতে রেখে অসামঞ্জস্যতার দিকগুলোতে কঠোর নজরদারি করে আমাদের অর্জিত বিজয়কে সমুন্নত রাখায় জোর দিতে হবে। সর্বোপরি এই বিজয় দিবসে চাওয়া ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বের মানচিত্রে একটি আদর্শ দেশে রূপান্তরিত হোক।

লেখক- শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর