দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অভিবাসীদের ভূমিকা
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৩৬
গতকাল ১৮ ডিসেম্বর ছিলো— আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০০০ সালে সমগ্র বিশ্বে ৫৫/৯৩ প্রস্তাবে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্যভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের অধিকারের কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালে— জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অভিবাসী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষার জন্যে আন্তর্জাতিক চুক্তি ৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে তিনটি সেক্টরের যথা— অভিবাসন খাত, সেবা ও গার্মেন্টস-এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এর মধ্যে অভিবাসন খাত সবচেয়ে বড়। সাধারণভাবে গার্মেন্টস শিল্পকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে ধরা হয়। তবে গার্মেন্টস খাতের কাঁচামাল আমদানির খরচ বাদ দিলে দেখা যায় অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে মোট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন গার্মেন্টসের চাইতে অনেকগুণ বেশি । দেশে নারী কর্মীদের অবস্থান আগের তুলনায় অনেক উন্নত। বাংলাদেশের পুরুষ এবং নারী কর্মীরা মূলত অদক্ষ শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ করে। পুরুষেরা নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা এবং সেবা খাতে বেশি কাজ করেন। কিছু নারী গার্মেন্টসে কাজ করলেও অধিকাংশ নারী কাজ করেন গৃহকর্মী হিসেবে।
প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে বাংলাদেশের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিক প্রেরণ করা হয়েছে ৫১ লাখেরও বেশি। বিশ্বের ১৬২টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন, যারা বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। বর্তমান সরকারের দক্ষ ও সফল কূটনীতির কারণে ১৬৫টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে। নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসনের জন্য সরকার মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ২৯টি শ্রম ব্যুরো কাজ করছে।
বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। স্বল্পসুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে তাদের শাখা স্থাপন করেছে। যার মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ থেকে বিদেশে যেতে আগ্রহী জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রবাসীদের কারিগরি দক্ষতা আরও বাড়ানো হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা প্রধানত রাজমিস্ত্রি, শ্রমিক, বাবুর্চি, নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন কম দেওয়া হয়— যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না। অভিবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দেওয়া হলে তাদের জ্ঞান ও যোগ্যতা বাড়বে, ফলে আরও ভালো জায়গায় চাকরি করার সুযোগ তারা পাবেন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট