Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শীতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয়


১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৫৪

আজকের দিনটি শুরু হয়েছে মর্মান্তিক এক খবরে। সকাল পৌনে সাতটার দিকে জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় রেলক্রসিংয়ের গেল খোলা ছিলো। এতে জয়পুরহাট থেকে পাঁচবিবিগামী বাসটি কোনো বাধা ছাড়াই রেললাইনে উঠে পড়ে। এ সময় রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলে আসলে ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসটি গিয়ে পড়ে ৫০০ মিটার দূরে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাসের ১১ যাত্রী। গেটম্যান ঘুমিয়ে ছিলেন বলে ধারণা পুলিশের। খবরটি সারাবাংলা ডটনেটের

বিজ্ঞাপন

একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। অথচ এই দুর্ঘটনাই যেন আমাদের প্রতিদিনের নিত্যসঙ্গী। প্রতিনিয়ত এসব দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে হাজারো তাজা প্রাণ।তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুলের মতো সাজানো স্বপ্নগুলো এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কত নারী অকালে স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। সন্তান হারাচ্ছে পিতা-মাতা, আবার পিতা-মাতা হারাচ্ছে সন্তান। ভাই হারাচ্ছে বোন আর বোন হারাচ্ছে ভাই। স্বামী হারাচ্ছে স্ত্রী আর স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামী। বর্তমান পরিস্থিতিতে— এ যেন নিষ্ঠুর মরণ খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমাদের একটু সচেতন এবং দায়িত্বশীল হলেই এ মরণ খেলা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ জন ব্যক্তি প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে আর আহত হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ করে— শীত মৌসুম আসলেই সড়ক দুর্ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শীতের ভোরে শিশির কণা, শীতল মৃদু হাওয়া আর কুয়াশা ধূমজালে মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে উঠে দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক। শিশির কণা আর মৃদু ধোঁয়াশা পরিবেশের কারণে ঘটে ভয়াবহ হৃদয়বিদারক এবং মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বিশেষ করে— পাহাড়ি এলাকার আঁকাবাঁকা মোড়গুলো একেকটি মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়ে যায়। কুয়াশাচ্ছন্ন ঘোলাটে পরিবেশে বিপরীত দিক থেকে আগত গাড়ির প্রকৃত গতি নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যার ফলে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আঁকাবাঁকা পথের মোড়গুলোতে নেই কোনো দর্পণ এবং লাইটিংয়ের ব্যবস্থা। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। শীতের কুয়াশার এমন পরিস্থিতিতে গাড়ি চালকদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। এসব সতর্কতাই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে। গাড়ি চালকদের যেসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—

১. গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
২. ভোরে কিংবা রাতে কুয়াশার জন্য কিছু না দেখতে পেলে গাড়ি বন্ধ করে রাস্তার পাশে সুরক্ষিত জায়গায় দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
৩. গাড়ি চালানোর পূর্বে লুকিং গ্লাসগুলো সঠিক অবস্থানে আছে কি-না তা দেখে নিতে হবে।
৪. গাড়ির উইন্ডশিল্ড কিছুক্ষণ পরপর পরিষ্কার করতে হবে।
৫. কুয়াশার মধ্যে ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
৬. লেন পরিবর্তনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে বেসরকারি পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায় থেকে ব্যক্তিগত পর্যায় সর্বস্তরে, অর্থাৎ— প্রত্যেককে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় মহাদুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে— ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১ হাজার ৫৯৯ টি বেশি হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৯ জন ও ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হয়েছিল।

এ পরিসংখ্যান যেমন দুঃখজনক তেমনি উদ্বেগের কারণও বটে। দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩% ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে, ৩৭% চালকের বেপরোয়ার কারণে এবং ১০% গাড়ির ত্রুটির কারণে। আমাদের সচেতনতার বড় অভাব। এমন পরিস্থিতি রোধকল্পে আমাদের কিছু করণীয় আছে।

১. মালিকপক্ষকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক নিয়োগ দিতে হবে।
২. লাইসেন্স নেই এমন গাড়ির রোড পারমিট বাতিল করতে হবে।
৩. লাইসেনস-বিহীন চালকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৪. ফিটনেস-বিহীন ও যান্ত্রিকত্রুটিযুক্ত গাড়ির রোড পারমিট বাতিল করতে হবে।
৫. চালকদের ডোপ টেস্ট করে, গাড়ি চালানোর অনুমতি দিতে হবে।
৬. ট্রাফিক ব্যবস্থায় গতি আনতে হবে।
৭. গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ট্রাফিক কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
৮.ওভারটেকিংয়ের মনোভাব পরিহার করতে হবে।
৯.চালকের গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোনে বা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
১০.পথচারীদের ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হবে।
১১. যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সেফটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। যেমন— সিট বেল্ট, হ্যালমেট, মাস্ক ইত্যাদি।
১২.ঝুঁকিপূর্ণ মোড়গুলোতে দর্পণ এবং লাইটিংয়ের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।
১৩.বিশেষ করে— শীত মৌসুমে চালক ও পথচারীদের বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

সর্বোপরি, চালক, পথচারী, যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।

লেখক: শিক্ষার্থী, এমবিবিএস ১ম বর্ষ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর