কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে আমার অভিজ্ঞতা
২১ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১৭
ইচ্ছে করেই নিজে ফাইজারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার দিন তিনেক অপেক্ষা করে লিখছি। কারণ— প্রথমত: আমি ও আমার পরিচিত সহকর্মী যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের সাইড এফেক্টের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা জানলাম। দ্বিতীয়ত: এই উইকেন্ডে এদেশের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) রেগুলেটরি সংস্থা এফডিএ মর্ডানা কোম্পানির আরেকটি ভ্যাকসিনের ইমার্জেন্সি অনুমোদন দিয়েছে। আগেই বলে রাখি, আমি নিজে কোভিড ভ্যাকসিনের বিশেষজ্ঞ নই। তাই এই কথাগুলো মূলত আমার সামান্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সাধারণ নিত্যনৈমিত্তিক পেশাগত পড়াশুনো থেকে লেখা।
আমার নিজের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরের দিন সকালে কয়েক ঘণ্টা বাম হাতে ইনজেকশন স্থলে মৃদু একটি ব্যথা ছাড়া কিছু হয়নি। এক ডোজ প্যারাসিটামল খাই, তাতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একদম ফিট হয়ে যাই। আমার কয়েকজন সহকর্মীর হালকা গা-ম্যাজম্যাজ বা ছ্যাঁকছ্যাঁক, অল্প মাথা ব্যথা করেছে। কোনো ক্ষেত্রেই উপসর্গ একদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি।
যে কোনো ভ্যাকসিন সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী সাইড এফেক্ট অত্যন্ত বিরল। শুধু কোভিড ভ্যাকসিন নয়, যে কোনো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। ভ্যাকসিন ও অটিজম সংক্রান্ত যে বহুল প্রচারিত তত্ত্ব সেটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া, নকল পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে গড়ে তোলা কনসপিরিসি থিওরি। মূল পেপারটি শুধু জার্নালের প্রকাশক উইথড্র করে নিয়েছেন তাই নয়, শাস্তিস্বরূপ লেখককেও মেডিক্যাল লিটারেচার থেকে চিরনির্বাসন দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু পরবর্তীকালে অনেক সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন বড় বড় স্টাডিতে এই থিওরি সন্দেহাতীতভাবে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
এফডিএ একটি রেগুলেটরি বা নিয়ামক সংস্থা যারা ওষুধ ও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা বিচার করে তা সাধারণ মানুষের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দেয়। প্রায় প্রত্যেক দেশেরই এরকম নিজস্ব সংস্থা রয়েছে। এফডিএ ‘ইমার্জেন্সি’ অনুমোদন দিয়েছে— এর মানে এই নয় যে, প্রয়োজনীয় পদ্ধতিতে শর্টকাট বা স্টেপ-জাম্প করে তাড়াহুড়োয় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ— প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগুলো বা স্টেপগুলোর সবকটিই পরপর খুব কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তাই এই অপেক্ষাকৃত জলদি অনুমোদনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি নিজে এই ভ্যাকসিনকে এতটাই বিশ্বাস করি যে, আমার স্ত্রী-পরিবার-সহকর্মী-ছাত্রছাত্রী সকলকেই এটি নিতে অনুরোধ করেছি। যারা সুযোগ পেয়েছেন, তারা নিয়েছেন এবং সকলেই ভালো আছেন।
যে স্টাডিগুলিতে ভ্যাকসিন দু’টির মূল্যায়ন হয়েছে— তাতে শিশু-কিশোর, অন্তঃসত্ত্বা নারী বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ক্রনিক অসুখের রোগীদের (ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কেমোথেরাপি চিকিৎসাধীন প্রভৃতি) নিয়োগ করা হয়নি। তবে স্টাডি শুরু হয়েছে— আরও নিখুঁত তথ্য মিলবে কয়েক মাস পরে। এসব মানুষের ক্ষেত্রে সাজেশন দেব— নিজ নিজ চিকিৎসকের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করে ভ্যাকসিন নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন।
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ ভ্যাকসিন না পাওয়া অবধি মাস্ক, হাত ধোওয়া, সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত সাবধানতা, বিধিনিষেধ যতটা পারেন মেনে চলুন।
লেখক: পেডিয়াট্রিক রিউম্যাটোলজিস্ট, মার্শফিল্ড ক্লিনিক
উইসকনসিন