Saturday 12 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুুক্তিযোদ্ধারা কি বিজয় উপভোগ করছেন?


২২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:২১

ডিসেম্বর মাস, এক গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশকে বিজয়ের মর্যাদা দান করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ত্রিশ লাখ শহীদ হয়েছেন। দুই লাখেরও বেশি নারী অসহ্য নির্যাতিত হয়েছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে তাদের নিঃস্বার্থ আত্মদান অতুলনীয় ও অবিস্মরণীয়।

স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে— যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, যারা স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছিল, সেইসব মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য ঊনপঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশ কী করেছে?

বিজ্ঞাপন

প্রচণ্ড কষ্ট লাগে যখন পত্রিকার খবরের শিরোনাম হয়— কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কোনো অসভ্য, বর্বরদের দ্বারা জাতির বীর সেনা-মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হয়— তখন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সত্যিই লজ্জিতই হতে হয়।

আবার এমনও কষ্টদায়ক বিষয়, এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে অনেক রাজাকারদের নামও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এমন এক সেনসিটিভ ইস্যুতে এ ধরণের ত্রুটি পাওয়াও অতি দুঃখজনক। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কেমন দায়িত্ব পালন করেছি, কোথায় আমাদের ব্যর্থতার পদ চিহ্ন সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। যদিও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটির জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় হতে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।

কিন্তু স্বাধীনতার এতো যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন জাতি হিসেবে আমাদের এমন খবর শুনতে হয়— এদেশে এক শ্রেণির ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী বিদ্যমান— এজন্যও জাতি হিসেবে আমাদের ক্ষুব্ধতার সাথে লজ্জিত হতে হয়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কৃতিত্ব নিয়ে এক শ্রেণির গুপ্ত অসাধু ও মুনাফা লোভীরা যেনো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিকৃত বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। আর এরকমটা তখনই শুরু হয়েছে, যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো সামরিক শাসক— যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে।

বিজ্ঞাপন

সেই পঁচাত্তরের পরবর্তী সময় হতে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ এ ‘ভুয়া সনদপত্র’ ব্যবহার করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করে আসছে। এমন অসংগতিগুলোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

যাই হোক, এতো কিছুর পরেও আশাব্যঞ্জক বিষয়টি হচ্ছে— দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার’ প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ধারণের সিদ্ধান্তে এসেছে। নতুন এ নিয়মানুসারে মুক্তিযোদ্ধার উপাধি বা সনদ পাওয়ার জন্য প্রাথমিক ৮ ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে। সে শর্তে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সনদপত্র বাতিল করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী ‘ডিজিটাল সনদপত্র’ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার ‘মায়ের নাম ও ডাকঘর’ সংযুক্ত করে তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। অলরেডি পৌনে ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে ওয়েবসাইটের দ্বারা ফের তথ্য হালনাগাদ করা হবে। এরপরই চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতে তাঁদেরকে ডিজিটাল সনদপত্র দেওয়া হবে।

এ পদ্ধতিতে দেরিতে হলেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করা সম্ভব হবে— এটা নিশ্চিত। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, সেটি হলো— মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারিভাবে একটি সেল গঠন করে এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গল্প, প্রবন্ধ, নাটক ও কবিতা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিশু, কিশোর, যুবক ও পেশাজীবী সংগঠন তৈরিতে নিশ্চিতভাবে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শে দীক্ষিত করতে এ পদক্ষেপের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, ৭ই মার্চের ভাষণটি ছোট-ছোট বাচ্চাদের হাতে বই আকারে বা ডিজিটাল ডিভাইস আকারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা যেতে পারে। কারণ, যে জাতি যত বেশি সঠিক তথ্য নির্ভর, সে জাতি ততটাই শক্তিশালী। বিশ্ব আজ প্রযুক্তি নির্ভর। তাই আমাদের সেদিকে পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগুতে হবে। আর দেশাত্মবোধ কিংবা দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে অঙ্কুর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ অপরিহার্য।

পরিশেষে বলবো, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও উদ্যোগে শীঘ্রই বিতর্কিত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র বাতিল হবে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সুষ্ঠু তালিকা প্রকাশিত হবে। আর বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পার করার আগেই সরকারি উদ্যোগে দেশের অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে বের করে তাদের প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেবে, তাদের সুষ্ঠু জীবন যাপনের ব্যবস্থা করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের সরকার তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, নর্দান ইউনিভার্সিটি  এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বোয়াফ

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা

বিজ্ঞাপন

দেশের বাইরে ‘বরবাদ’
১২ এপ্রিল ২০২৫ ২১:২০

ধর্ষণের অভিযোগে প্রেমিক আটক
১২ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০৪

আরো

সম্পর্কিত খবর