Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষাখাতে শেখ হাসিনার পদক্ষেপ ও অন্যান্য


২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৫৬

সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের প্রখ্যাত উক্তি ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও,আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দেব’। এটি আমরা স্কুলে পড়ার সময়েই প্রাথমিক শিক্ষায় জেনেছি। বাস্তবতার নিরিখে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে শিক্ষার হার উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে এই সূত্র শতভাগ কার্যকর। কিন্তু শিক্ষিত জাতি তৈরির মতো যথাযথ শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার দায় নিশ্চয়ই সম্রাট নেপোলিয়নের নয়, কাজটি রাষ্ট্র এবং আমাদেরকে সম্মিলিতভাবেই করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে মূল প্রতিবন্ধকতা দারিদ্র্যতা ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরির ব্যর্থতা। বিশেষত নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কুসংস্কার, নারীবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারা প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষার সহজ সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রথমত সরকারকে উদ্যোগী হতে হয়, পরবর্তীতে প্রয়োজন পারিবারিক ও ব্যক্তি প্রচেষ্টা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিগত এক দশকে শিক্ষাখাতে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে— তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অর্জন হিসেবে কতটুকু প্রশংসার যোগ্য তা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার প্রায় শতভাগ এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় চার কোটি শিশু বছরের প্রথম দিনে ৩৬ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে পাচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে এক কোটি ৩০ লাখ শিশু পাচ্ছে উপবৃত্তি। সাক্ষরতার হার বেড়ে বর্তমানে ৭৪.৭০ শতাংশ।

বাল্যবিবাহ রোধে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায়ও অর্জিত হয়েছে জেন্ডার সমতা। কর্মমুখী তরুণ প্রজন্ম তৈরির পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর হার ১৪ শতাংশ। শিক্ষা খাতের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে ‘সবার জন্য শিক্ষা’র উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির করে নারীশিক্ষার উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে ভূমিকার জন্য ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অবকাঠামোগত দিক বিবেচনায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নত আধুনিকভাবে নির্মাণ করে চমকপ্রদ পরিবর্তন এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও বাস্তবতা। ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৩ হাজারের অধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় স্থাপন করা হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এমন সুবিধাসম্পন্ন ক্লাসরুম করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ডিজিটাল কনটেন্ট, ভিডিওচিত্র ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে শহর-গ্রাম সব অবস্থানের শিক্ষার্থীরাই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পড়ালেখা করছে।

বিজ্ঞাপন

পূর্বে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা, কলেজে ভর্তি ও ক্লাস শুরু হওয়া এবং ফলাফল প্রকাশের অপরিকল্পিত সময়ের প্রক্রিয়াকে অনলাইনের আওতায় এনে রুটিনমাফিক সল্প সময়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষায় অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে নতুন পর্যাপ্ত সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ফলে গবেষণায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আনুপাতিকভাবে। শিক্ষাখাতের অগ্রগতির এরূপ মহাপরিকল্পনা শিক্ষিত জাতি গঠনে টেকসই ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ মিলছে।

‘শিক্ষিত মা’ যে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে, সম্রাট নেপোলিয়নের রূপক এই উক্তির আদর্শ এবং বাস্তব উদাহরণ আমাদের একজন শেখ হাসিনা। একজন শিক্ষিত নারী যেমন তার সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখতে পারেন, শিক্ষিত নারী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাঙালি জাতিকেই শিক্ষিত করে মমতাময়ী আদর্শ মা হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী এক অনবদ্য উদাহরণ তৈরি করে চলেছেন। তবে শিক্ষাখাতে যুগপোযোগী পরিকল্পনা প্রনয়ন, দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নিশ্চিতকরন, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগদান ও শিক্ষা উপকরণের আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষাখাতের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা নয়— এ খাতের অনান্য সকলের সম্মিলিত ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা টেকসই ও যুগপোযোগী শিক্ষাখাত গঠনের অবিকল্প পদক্ষেপ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; উপ বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

শিক্ষা খাত শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর