Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুজিববর্ষে তারুণ্যময় হোক বাংলাদেশ


২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:০৪

দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর কেটে গেছে পাঁচ দশক। তবুও আমরা আজ কতটা স্বাধীন? পাশাপাশি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। যার মূল লক্ষ্য— বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা। বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেমন তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো তেমনি পিতা মুজিব তারুণ্যময় অবস্থাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশের জন্য। সুতরাং, দেশের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনে কিংবা অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে তরুণদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তারাই আগামীর শক্তি, দেশকে মেলে ধরার মূল চালিকাশক্তি।

বিজ্ঞাপন

প্রথমত, বাস্তব জীবনে তরুণদের চলার পথ মোটেও মসৃণ নয়। পদে পদে বিপত্তি বা বাধা সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রেই তাদের নিজের লালিত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে ছুটতে হয় প্রথাগত সাফল্য লাভের আশায়। ফলে সমাজ, দেশ বা রাষ্ট্র উভয়ই হয় ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক তরুণরাই প্রথাগত পাঠ চুকিয়ে চাকরির বাজারে দৌড় মারার স্বপ্ন দেখে না, বরং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্য তাদের। সক্ষমতা অনুযায়ী দাঁড়ানোর পথে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজ। নানা যুক্তিতে প্রমাণ করার চেষ্টা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ মসৃণ নয়, রয়েছে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা, এর চেয়ে বরং প্রথাগত পথে হাঁটাই শ্রেয়। অথচ, বঙ্গবন্ধু নিজ পায়ে দাঁড়াবার বা এগিয়ে চলার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত বাল্যকালেই দেখিয়েছেন। শত বছর পরে আজও যা ধারণ করতে পারিনা আমরা। এ ব্যর্থতার দ্বায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আমাদের।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ থেকে মুজিবের নাম মুছে ফেলার সময়ে তরুণরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এমনটাও চিরন্তন সত্যি। কেননা, তখন বিশ্বদরবার থেকে বিচ্ছিন্ন এক অন্ধকার জনপদ ছিলো বাংলাদেশ। অন্যায়ের প্রতিবাদ নয় বরং অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার অপকৌশল রপ্ত করেছে সে সময়ের তরুণরা। ফলশ্রুতিতে মুজিব আদর্শের থেকে তারা হয়েছে বিচ্যুত। লোপ পেয়েছে নিজস্ব সত্ত্বা। বিগত দশকে অবস্থার উন্নতি যথেষ্ট দৃশ্যমান হলেও দুধের বালতিতে এক ফোঁটা গো-চনার মতো রয়ে গিয়েছে অবস্থা। পাঁচ ধাপ এগোলে যা দুই ধাপ দেয় পিছিয়ে। অবস্থার উত্তরণে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই চূড়ান্ত সময়। তবেই পথ হারাবে না মুজিবের বাংলাদেশ, তরুণরা হবে সত্যিকারের চালিকাশক্তি।

দ্বিতীয়ত, আইনের শাসন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে আমাদের। তরুণদের হতে হবে অধিকার সচেতন। অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার অপকৌশলে লিপ্ত না হয়ে শিখতে হবে মুজিবের ন্যায় প্রতিবাদ। সৃষ্টি করতে হবে নিরপেক্ষতার নজির। নিজের জীবন হবে শেষ, ক্যারিয়ার হবে বিধ্বস্ত— এমনটা না ভেবে চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে সকলের জন্য। মানুষ মানুষের জন্য ভাবাদর্শে হতে হবে উদ্বুদ্ধ।

তৃতীয়ত, সুন্দর বাংলাদেশকে সাজানোর স্বার্থে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শে হতে হবে একাত্ম। যেন না থাকে বৈষম্য, সৃষ্টি হয় উদারতা, নিরপেক্ষতা কিংবা প্রগতিশীলতা।

চতুর্থত, বিদেশী সংস্কৃতির অপচর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। দেশীয় সংস্কৃতির সুস্থ চর্চার মাধ্যম তাদেরকে দেশাত্মবোধের চেতনায় বিকশিত করতে হবে।

পঞ্চতম, সরকার ও প্রশাসনকে তরুণদের সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, অপরাধ কর্মকাণ্ড এবং অন্যান্য সকল অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে রাখতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। তরুণদের করতে হবে সচেতন। তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে সময়োপযোগী চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। যাতে করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যর ঘটে উন্নতি। তারা হয় সুস্থ, স্বাভাবিক পথের পথিক।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন তা ঘাতকের বুলেট স্তিমিত করে দিলেও ধ্বংস হয়নি তার আদর্শিক জয়যাত্রা। আলোর মাঝে আঁধার এসে হঠাৎ করে অগ্রযাত্রা স্তব্ধ হলেও মাথা উঁচু করেছে আবারও প্রিয় মাতৃভূমি। সেই অগ্রযাত্রাতেও রয়েছে তরুণদের দক্ষতা বা নিপুণতা। চলার পথের নানা বন্ধুরতার মতোই নানা সমস্যা রয়েছে বাসা বেধে। সেই গর্ত থেকে বেরোতে পারলেই সম্ভব দেশকে এগিয়ে নেওয়া। তরুণদের থাকতে হবে সচেষ্ট, হতে হবে উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মুজিববর্ষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর