Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একুশের যাত্রায় মনে পড়ে যায় ভিশন ২১


৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:২২

২০২১ সাল বাঙালি জাতির জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তির বছর হতে যাচ্ছে। কেন প্রাপ্তির বছর, সেই প্রশ্নের অনেক উত্তর আছে। তবে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বলতে চাই তা হচ্ছে—২০২১ সাল স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করবে। যা একজন বাঙালির জন্য অনেক বড় পাওয়া। এছাড়াও এই বছরে বাংলাদেশের মানুষ একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবে বলে আশা রাখতেই পারে। কারণ এই সালটাই যে আজ থেকে দশ বছর আগে একটি লক্ষ্য ছিলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভিশন ২০২১-এর ঘোষণা দেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

জাতির জনক ও বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শন ছিলো অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তি-মধ্যস্থতাকারী উন্নয়ন দর্শন, যা বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে জনগণ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সমবায়কে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। আর সে কারণেই দেশকে ২০২১ সালে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছিলো রূপকল্প-২০২১।

বিজ্ঞাপন

ভিশন-২০২১ বা রূপকল্প-২০২১ নেওয়ার কারণ, ২০২১ সালে বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরে পা রাখবে। সুবর্ণজয়ন্তীর এই লগ্নে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে আমরা কোন অবস্থানে দেখতে চাই, সেটাই বস্তুত ভিশন ২০২১-এর মূল কথা।

ভিশন ২০২১-এর প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা, যেখানে চরম দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে বিমোচিত হবে। সেজন্যে একগুচ্ছ সহায়ক কাজ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা করা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক পক্ষপাত-বিবর্জিত আইনের শাসন নিশ্চায়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন করা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করা, এমনভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা যাতে মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা থাকে, জনগণ ও শ্রমশক্তির সুরক্ষার বন্দোবস্ত থাকে, দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে, জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা থাকে, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, পরিবেশ, পানিসম্পদের নিরাপত্তা থাকে, এবং সার্বিকভাবে জনজীবন ও সম্পদের সুরক্ষা থাকে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করা, যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকে, জাতীয় সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্রনীতি দৃঢ়তর হয়।

ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ২২টি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, প্রতি গ্রামে সমবায় সমিতি গড়ে সমিতির সদস্যদের সন্তান কিংবা পোষ্যদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। এভাবে ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা। ২০১০ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা। ২০১৩ সালে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই হার ১০ শতাংশে উন্নীত করে অব্যাহত রাখা। ২০১৩ সালে বিদ্যুতের সরবরাহ হবে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালে ৮ হাজার মেগাওয়াট। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৩ সালে পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ২০১৪ সালে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ২০১৫ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা। ২০১৫ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিস্যা কৃষিতে ২২, শিল্পে ২৮ ও সেবাতে ৫০ শতাংশের পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫, ৪০ এবং ৪৫ শতাংশ করা। ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২১ সালে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। ২০১১ সালে শিল্পে শ্রমশক্তি ১৬ থেকে ২৫ শতাংশে এবং সেবা খাতে ৩৬ থেকে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামবে। ২০২১ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ নাগরিকের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ২১২২ কিলো-ক্যালরির উপর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সকল প্রকার সংক্রামক ব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা। ২০২১ সালে গড় আয়ুষ্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত করা। ২০২১ সালে শিশু মৃত্যুর হার বর্তমান হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা। ২০২১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ৩.৮ থেকে কমে ১.৫ শতাংশ হবে। ২০২১ সালে প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা। এই ২২টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু এর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছি। তবে যে লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার এগিয়েছে সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও তার কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে। এর মধ্যে বেশকিছু পয়েন্টের দিকে সরকারের নজর দিতে হবে নতুন বছরে। এর মধ্যে তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান, সেবা খাতে উন্নয়ন, দুর্নীতি থেকে জনগণকে রক্ষা করা, সংক্রামক ব্যাধি নির্মূলে কাজ করা ইত্যাদিতে বিশেষ নজর প্রয়োজন।

বর্তমানে করোনাও একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রেখে উক্ত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে সরকারের নজর দিতে হবে বলে আমি মনে করি। তবেই একুশের যাত্রা হবে সার্থক। আমি আশাবাদী বাংলার মানুষের কাছে এই সালটা প্রাপ্তির সাল হতে পরে। ২০২০ সালের এই কঠিন সময় পার হতে পারে একুশের হাত ধরে। দীর্ঘদিনের এই অসুস্থ সময় থেকে মুক্তি পেতে এমন প্রত্যাশা করতেই পারে ১৮ কোটি বাঙালি। একটি সুন্দর আধুনিক বাংলাদেশ পাওয়ার স্বপ্ন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে আছে। এবার পালা স্বপ্ন পূরণের।

লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম

ভিশন ২১

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর