নতুন বছর শুরু হোক নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে
১ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৪৮
জগতের সবকিছুই নিয়মের অধীন। নিয়ম-ব্যতীত কোনো কিছুই চলে না। চন্দ্র-সূর্য নিয়ম মেনেই উদিত হয় এবং অস্ত যায়। নিয়ম-মাফিক দিন ও রাত হয়। সেই নিয়মের ধারাবাহিকতায় শেষ হচ্ছে একটি বছর। আসছে নতুন বছর । নতুন মানেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের। আর পুরাতন অর্থই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও যোগ-বিয়োগের। নতুন বছর শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পাওয়ার উৎসব। নতুন বছর তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন ক্লাসে ওঠার প্রয়াস। নতুন বছর শিক্ষকের কাছে নতুন বই পড়ানোর আনন্দ। নতুন বছর চাকরিজীবীদের কাছে পদোন্নতি পাওয়ার আশ্বাস। আর কৃষকের কাছে নতুন বছর নতুন ফসল ও ন্যায্য মজুরী পাওয়ার প্রত্যাশা। সকলের জীবনেই নতুন বছর অর্থই যেন নতুন প্রাপ্তি। সবকিছুই একটি লক্ষ্য আছে। আর লক্ষ্যকে নিয়েই গড়ে ওঠে প্রত্যাশার জায়গা।
আমরা যে সবুজ-সোনালী শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশে বাস করি এই অপরূপ দেশের প্রকৃতিরও একটি লক্ষ্য রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি ঋতু। গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল। প্রত্যেকটি ঋতুরই কিন্তু একটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে। যেমন গ্রীষ্মকাল আসলেই আমরা গরম অনুভব করি। প্রকৃতিতে প্রখর সূর্যের তাপে বেড়ে যায় তাপমাত্রা। আম-জাম-কাঁঠাল পাকে। গ্রীষ্মের কথা ভাবতেই যেন মনে হয় কোন কোন ফল প্রকৃতিতে পাবো। তারপর আসে বর্ষা। বর্ষা মনে করতেই যেন বৃষ্টির আভাস মনে চলে আসে। চলে আসে কাদা-মাখা শৈশবের স্মৃতি। এভাবেই চলে শরৎ ও হেমন্ত। তারপর শীত মানেই যেন রুক্ষ ত্বক আর শীতল অনুভূতি। ছিন্নমূল মানুষের অসহায় জীবন। শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্টকর জীবন। তারপরই আসে বসন্ত। বসন্তে মনে আনে সতেজতার ছাপ। গাছে-গাছে নতুন পাতা সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি সাজে অপরূপ রূপে। তাই বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ।
যে কথাটি পূর্বে বলেছিলাম আর যে কারণে প্রকৃতির ঋতুর বর্ণনা। আসলে আমাদের প্রত্যেকের জীবন সময়ে-নিয়মেই বাধা। আমরা কেউ ইচ্ছে করলেই কিন্তু পূর্বের জীবনে ফিরে যেতে পারি না। সেই কারণে প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা পরিকল্পনা নিয়ে জীবনকে সাজাতে হয়। আর পরিকল্পনাবিহীন জীবন নাবিকবিহীন জাহাজের মতো। গল্পে পড়েছি—নাবিকবিহীন জাহাজ কিন্তু সঠিক গন্তব্যে পৌঁছায় না বা সঠিকপথে চলে না। ঠিক মানবজীবনও তেমনি। লক্ষ্যটা ঠিক বা নির্দিষ্ট না হলে জীবনে কিন্তু সফলতার মুখ দেখা কঠিন। জাহাজের লাইন থেকে আমরা কিন্তু এমনটাই ইঙ্গিত পাই। জীবনে চলার পথে সকলে যে সফল হয় তা কিন্তু নয়। আবার সকলে যে বিফলে যায় তাও কিন্তু নয়। তবে পরাজয়ের গ্লানি জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আমরা হয়ত রাজা রবার্ট ব্রুশের কাহিনী জানি। তিনি বার বার যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন শত্রুপক্ষের দ্বারা। এক পর্যায়ে তিনি আশাহত হয়েছিলেন। এমন সময় তিনি দেওয়ালে একটি মাকড়সাকে দেখলেন বার বার বেয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাতে। সাত বার মাকড়সাটি উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু মাকড়সাটি থেমে থাকেনি। অদম্য মনোবলের কারণে অষ্টমবার মাকড়সাটি দেওয়াল বেয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। মাকড়সার সেই প্রচেষ্টা রবার্ট ব্রুশের মনে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। মাকড়সার সেই মনোবল তার মনোবলকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সে কারণে শেষ প্রচেষ্টায় রাজা জয়ী হয়েছিলেন। এই যে একটি ছোট্ট প্রাণীর থেকে উৎসাহ তাকে অনেক সফল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা দিয়েছিল, সে কারণে তার কথা আজ আমরা জানছি, পড়ছি।
বাস্তব-জীবনেও আমাদের শেখার অনেক জায়গা আছে। প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণী থেকেই আমরা শিক্ষা নিতে পারি। কিন্তু আমরা সেই শিক্ষাগুলো নিতে চাই না। আমরা যদি একটি জিনিস থেকে শিক্ষা নেই অথবা একটি কিছু ভালো করে করি, আমার বিশ্বাস তাতে আমরা ভালো কিছু উপহার দিতে পারব সমাজ বা দেশকে। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি লক্ষ্যটা নির্ধারণ করতে পারি না। ফলে লক্ষ্যহীনভাবে চলি। পাই না কোনো দিশা। সত্যই আজ যারা বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়েন আমার বিশ্বাস তারা আমার সাথে একমত হবেন যে, সফলতা আশে স্থির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে।
একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের চূড়ান্ত চূড়ায়। একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বদলে দিতে পারে জীবনের গল্প। একটি প্রচেষ্টা হতে পারে জীবনের সেরা গল্প। হয়ত আপনার সেই গল্প পড়েই অনুপ্রেরণা পাবে আগামীর প্রজন্ম। চলুন নতুন বছরে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নতুন বছর শুরু করি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট