ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অঙ্গীকার হোক বেকারত্বের অবসান
৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৫০
ছাত্রলীগকে এক সময় বেকার তৈরির কারখানা বলা হতো। এখন সময় বদলেছে, কিন্তু অবস্থা বদলায়নি, সমস্যা বরং আরও বেড়েছে। রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা সবসময় দাবার গুটি, শাকের আঁটি ও নেতাদের খুঁটি হয়ে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের অনিবার্য পরিণতিই হলো শিক্ষিত বেকার সাজা ও পরিবারের বোঝা হওয়া, কারও ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন হলে বড়জোর ঠিকাদারিটা আয়ত্ত করতে পারে। কিন্তু সেটাও যে পরিচয় দেওয়ার জন্য খুবই গৌরবের—তা কিন্তু নয়।
আমাদের দেশে কোনো কোটিপতির সন্তান ছাত্রলীগ বা ছাত্র রাজনীতি করতে আসে না। যারা আসে তারা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা ভালোবাসা ও ভালো লাগা থেকেই রাজনীতিতে আসে। তাই বলে রাজনীতিই তাদের জীবনের সর্বশেষ সত্য নয়। এর বাইরেও তাদের জীবন আছে, পরিবার আছে, সংসার আছে।
পরিবারের নানা প্রয়োজন থাকে, সংসারের খরচ থাকে। সেই প্রয়োজন ও খরচ মেটানোর জন্য নিজেকে সাবলম্বী হতে হয়। বাবা-মা একজন সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বড় করার পরও সন্তানের কাছে আশা করে না; বরং সন্তান নিজে থেকেই এগিয়ে যায় পরিবারের হাল ধরতে। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচ একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, স্বাবলম্বীটুকু পর্যন্ত হতে দেয় না।
গঠনতন্ত্র নামক একখানা বই বাধা দেয় কর্মজীবন ও ছাত্র রাজনীতি একই সাথে চালিয়ে যেতে। কিন্তু যারা এই গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে তাদের হয়তো মনে ছিল না যে, এই দেশে শুধুমাত্র মুসলিম লীগ ছিল জমিদারদের দল ও জাতীয়তাবাদী দল মেজরদের দল। বাকি সব দলই জনগণের দল। বিশেষত আওয়ামী লীগ হলো এদেশের মাটি ও মানুষের দল। এই দলের সকল অঙ্গ সংগঠনে দেশের সকল শ্রেণির মানুষ আসবে, রাজনীতি করবে—এটাই স্বাভাবিক। তাই এ দলের রাজনৈতিক নিয়ম ও দলীয় কাঠামোও দেশের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি থেকে হত দরিদ্র পর্যন্ত সকলের জন্য সমানুপাতিকভাবে সহনীয় ও রাজনীতি করার জন্য উপযোগী রাখা প্রয়োজন।
যারা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে যায় ও দেখা পায় সোনার হরিণের, তাদের অতীতের কথা মনে থাকে না। যখন তারা দলের নীতি-নির্ধারক বনে যায় তখন তারা ছাত্রনেতাদের ভাবতে শুরু করে শুধুমাত্র কামলা। বেতনভোগী কামলাও নয়, বিনা পয়সার কামলা। নেতার চৌদ্দ গোষ্ঠীর আঠারো পদের বন্দনা করে ফেসবুকের প্রোফাইল ভরে রাখা হলো এমন কামলা হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা।
এর পরের যোগ্যতা হলো নেতার বাসার বাজার করে দেওয়া, নেতার পেছন-পেছন ঘোরা, নেতার গাড়ির দরজা খুলে দেওয়া ইত্যাদি। এতো রকমভাবে গতর খাটিয়ে নিতে নিতে নেতা এক সময় ভুলেই যায় যে, ছেলেটা চাকর নয়, দলের কর্মী এবং শিক্ষিত। দলের কর্মী ভাবতে নেতার তৃপ্তির ঢেকুর উদগিরিত হয় না, তাই চাকরই ভাবে নিঃসঙ্কোচে। আর এমন চাকর যাতে হাত ছাড়া না হয়ে যায় তাই সুপরিকল্পিতভাবে তাদের আটকে রাখা হয় বৃত্তের মধ্যে। গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বানিয়ে রাখা হয় শিক্ষিত বেকার। কারণ একজন শিক্ষিত ছেলে যখনই আর্থিকভাবে সাবলম্বী হবে তখনই সে তার আত্মসম্মান ও অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। দাবার গুটিই তখন হয়ে উঠবে গলার কাটা। তাই তো এতো কৌশল, এতো উদ্যোগ আর এভাবে যোগ্যতাকে চাপা দেওয়া।
এই প্রবণতা সর্বশেষ ১৫-২০ বছর হলো চালু হয়েছে; পূর্বে এমন স্বার্থপরতা রাজনীতিতে ছিল না। এক সময় রাজনৈতিক কর্মীদের সামাজিকভাবে মর্যাদা ছিল, তারা পড়াশোনা ও রাজনীতি একই সাথে করতো; উপরন্তু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য কোনো কাজও একই সাথে চালিয়ে যেতে পারতো। কেননা ছাত্রনেতারা কখনই আর্থিকভাবে আহামরি অবস্থায় ছিল না। শূন্য থেকে রাজনীতি শুরু করে যারা নিজের যোগ্যতা দ্বারা রাজনীতির উচ্চমঞ্চে আসীন হয়েছেন তারা সকলেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই সত্যটি উপলব্ধি করেছেন; অনেকে স্বীকারও করেছেন। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বারংবার ফুটে উঠেছে আর্থিক সমস্যার কথা ও নিজে কিছু করার পরিকল্পনা। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও জীবন-কর্মই আমাদের চলার পথের পথ নির্দেশিকা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমাদের ‘বাইবেল অফ পলিটিক্স’; যাকে আমরা রাজনীতির শুদ্ধতম গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করি। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পূর্বে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর আলোকে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছে এবং নির্বাচনী ইশতেহারও এই বইটির আলোকেই করা হয়েছে; যা খুবই প্রাসঙ্গিক ও ইতিবাচক উদ্যোগ।
মূল দলের এই সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়নের পর এখন সঙ্গত কারণেই সহযোগী ও ভাতৃ সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা প্রয়োজন; বিশেষত যে বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুর চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক। এমন একটি বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই এই লেখাটি লিখতে বসেছি। আমরা যারা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বাহক বলে দাবী করি— তাদের বিষয়টা আরও আগেই উপলব্ধি করা প্রয়োজন ছিল। কেননা বর্তমান বিশ্ব উন্নয়নের বিশ্ব, এগিয়ে যাওয়ার বিশ্ব। বিশ্বায়নে এ সময়টাতে যেখানে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে পিছিয়ে আছে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ কর্মীরাই। অথচ তাদেরও সাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। একটা সংগঠন করার কারণে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে না—এটা কখনও কোনো নিয়ম হতে পারে না। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো— বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ৮৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “আমাদের টাকা পয়সার খুবই প্রয়োজন। কে দেবে? বাড়ি থেকে নিজেদের লেখাপড়ার খরচটা কোনোমতে আনতে পারি, কিন্তু রাজনীতি করার টাকা কোথায় পাওয়া যাবে? আমার একটু সচ্ছল অবস্থা ছিল, কারণ আমি ইত্তেহাদ কাগজের পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলাম। মাসে প্রায় তিনশত টাকা পেতাম।”
বঙ্গবন্ধুর এ উক্তিটিই বর্তমান সময়ের লাখ লাখ ছাত্রলীগ কর্মীর মনের চিরন্তন ও শাশ্বত সত্যবাণী। এখানে তিনটি দিক বঙ্গবন্ধু স্বতঃস্ফূর্তভাবে উল্লেখ করেছেন। প্রথমত আর্থিক সমস্যার কথা, দ্বিতীয়ত পরিবারের কথা ও তৃতীয়ত ইত্তেহাদের প্রতিনিধি থাকার কথা। একজন কর্মীর আর্থিক সমস্যা ও টাকার অভাব তখনও ছিল, এখনও আছে। আজও কর্মীরা পকেটে ১০ টাকা নিয়ে বের হয়ে সারাদিন পায়ে হেটে পথ চলে রাতে ঘরে গিয়ে সেই ১০ টাকার নোটই কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে আবার পকেটে রেখে দেয়। কিন্তু ছাত্রনেতাদের এই সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ কখনওই ভাবেনি, ভাববেও না। পড়াশোনার খরচ বাড়ি থেকে আনার কথাটা আজও খুবই প্রাসঙ্গিক। এখন সময় বদলেছে ঠিকই, কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায়নি। রাজনীতি করার খরচ আজও আছে; খরচ বরং আরও বেড়েছে। কিন্তু একজন বেকার ছেলে সে টাকাটা কোথায় পাবে? আজও ছাত্ররা বাসা থেকে পড়াশোনার খরচটা শুধুমাত্র আনতে পারে, রাজনীতির খরচ নয়। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এই রাজনীতির সুফল যারা ভোগ করছে তারা কখনওই এটা ভাবে না যে, এই ছেলেগুলো রাজনীতি করার টাকা কোথায় পায়?
এই লেখার মাধ্যমে আমি বার বার দাবী জানানোর চেষ্টা করছি যে, ছাত্রলীগ কর্মীরা যেন কোনো কাজ করার গণতান্ত্রিক অনুমতি পায়। যা বঙ্গবন্ধুর জীবনের সাথেও মিলে যায়। ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু ইত্তেহাদ কাগজের পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের মধ্যে এটিও একটি আদর্শ, এটি যদি অন্যায় হতো তাহলে বঙ্গবন্ধু কখনও এমন কাজ করতেন না। আজকে যারা গঠনতন্ত্রে মারপ্যাঁচ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শিক দিকের সাথে সাংঘর্ষিক দিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ছাত্রনেতারা সাবলম্বী হওয়ার জন্য যদি কোনো ব্যবসা বা এ জাতীয় কোনো কিছু করতে চায় সেটাও নিশ্চয় অন্যায় হবে না। কারণ এ ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ৮২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “আমি ও আমার ভগ্নীপতি আবদুর রব সাহেব একটা রেস্টুরেন্ট করেছিলাম পার্ক সার্কাসে।” এ কথার মাধ্যমে আমাদের না বলা বহু কথা বলা হয়ে যায় নীরবে। বঙ্গবন্ধু সে সময় ছাত্রজীবনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে ভগ্নীপতি আবদুর রব সাহেবের সাথে যৌথভাবে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন তা জীবনের তাড়না থেকেই করেছিলেন, অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই করেছিলেন। জীবনের তাড়না ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন আজও আছে, আমাদেরও আছে। সে সময়ের সাথে এ সময়ের পার্থক্য এটাই যে, তখন পরাধীন বাংলায় ছাত্র রাজনীতিতে থেকেও বঙ্গবন্ধু যে অধিকার পেয়েছিলেন আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় বঙ্গবন্ধুরই নিজ হাতে গড়া সংগঠনের সভ্যরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।
বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সমস্যা ও এর কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে হতাশা প্রকাশ পেয়েছে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ২২১ পৃষ্ঠায়। তিনি লিখেছেন, “আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাড়ি যেতে হলো, টাকা পয়সার খুব অভাব হয়ে পড়েছে। কিছুদিন বাড়িতে থাকলাম, তারপর ঢাকায় ফিরে এলাম। ল’ পড়া ছেড়ে দিয়েছি। আব্বা খুবই অসন্তুষ্ট, টাকা পয়সা দিতে চান না। আমার কিছু একটা করা দরকার।” একথার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু প্রকাশ করেছেন তার সে সময়ের দুরবস্থা, আমাদের মনের কথা ও অর্থনৈতিক অবস্থা। তিনি ল’ পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে তার পিতা খুবই অসন্তুষ্ট ছিলেন। এখন সময় বদলে গিয়েছে। এখন রাজনীতি করলেই বরং এমনিই পিতারা অসন্তুষ্ট হয়; টাকা পয়সা দিতে চান না। কারণ বর্তমানে রাজনীতিতে দেশকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই, রাজনীতিকেও মানুষ সম্মানের চোখে দেখে দেখে না। রাজনীতি মানেই এক রকম অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কারণ পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যে পথে বেকারত্ব বরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, সন্তানের জীবনের সাথে সে পথ জড়ানোর কারণে অভিভাবকরা স্বাভাবিকভাবেই এক ধরণের শঙ্কা অনুভব করেন। লেখার শেষাংশে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—তার কিছু একটা করা দরকার। আমারও লেখার মূল উদ্দেশ্যই এটি—আমাদের কিছু একটা করা দরকার। কিছু করার ইচ্ছা যেহেতু বঙ্গবন্ধুর কলমে প্রকাশ পেয়েছে সেহেতু গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ ব্যাপারে একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর কারও আপত্তি থাকবে বলে আমার মনে হয় না। কেননা আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু একটা করা দরকার। এভাবে জীবন চলতে পারে না। বৃদ্ধ পিতার কাছে আরও কতদিন হাত পাততে হবে?
অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বঙ্গবন্ধুর কলমে প্রকাশ পেয়েছে আরও এক জায়গায়। ২২১ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “আমাদেরও যেতে হবে পিকিং-এ, দাওয়াত এসেছে। সমস্ত পাকিস্তান থেকে ত্রিশজন আমন্ত্রিত। পূর্ব বাংলার ভাগে পড়েছে পাঁচজন। আতাউর রহমান খান, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, উর্দু লেখক ইবনে হাসান ও আমি। সময় নাই, টাকা পয়সা কোথায়?” এ কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে ছাত্র রাজনীতির আরও একটি অসহায় দিক। এটা সত্য যে, আমাদের পিকিং যেতে হয় না। কিন্তু ঢাকার বাইরেও অনেক প্রোগ্রামে অনেক সময় যেতে হয়। যারা ঢাকার বাইরের তাদের ঢাকায় আসতে হয়। এজন্যও টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়। আমরা বড়জোর নিজেদের হাত খরচ ও পড়াশোনার জন্য বাসা থেকে টাকা নিতে পারি। কিন্তু এ বাড়তি টাকাটা কে দেয়? এই একই হতাশা ভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুও প্রকাশ করেছেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে কিছু উদাহরণ দিলাম। যেখানে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক সমস্যা, ব্যবসা বা অন্য কাজের মাধ্যমে উপার্জন ও কিছু করার ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। আদর্শিক পিতার কলমে যেহেতু আমাদের দাবীটিই উঠে এসেছে সেহেতু নতুন করে দাবীটি উপস্থাপন করতে হবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বক্তৃতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়ে আলোচনা করবো। যুব দিবস ২০১৯ উপলক্ষে পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, “চাকরি না করে চাকরি দেব, চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করব বা চাকরি দিতে পারবো-এ চিন্তাটাই মাথায় থাকতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে, আত্মমর্যাদা বোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে তো মনে হয় বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না। এখন আমাদের লক্ষ্য, মুজিববর্ষকে ঘিরে কেউ যেন বেকার না থাকে।” মুজিববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ বছর। এই বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু সরকারের অবশ্যই উচিত, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যুব সমাজকে সুষমভাবে কাজে লাগানো। কোনো বিশেষ অংশ যেন সামষ্টিকভাবে বাদ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শন ও দল পরিচালনার কাঠামো কখনও পৃথক হওয়া উচিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকার স্মরণকালের সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছে, আবার একই সাথে নিজ দলের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ যুবককে বেকার বানিয়ে রাখছে—এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
আমরা যদি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে লক্ষ্য করি তাহলেও দেখব সরকার উদ্যোক্তা তৈরিতে কতটা আন্তরিক। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.১০ ধারার কয়েকটি প্রতিশ্রুতি:
১. তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে।
২. তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
৩. তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রণয়ন করা হবে একটি যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’।
লক্ষ্য করুন, তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়া ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য সরকার ও দল অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এদের মধ্যে একজনও ছাত্রলীগ কর্মী নেই। অথচ এই দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের বিরাট অংশই ছাত্রনেতারা। এরাও কিন্তু এগিয়ে আসতে পারে, উদ্যোক্তা হতে পারে, মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের এসএমই খাতকে করতে পারে শক্তিশালী। তাই আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, সরকারের রাষ্ট্র দর্শন ও দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার বিবেচনা করে সবগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে মুজিববর্ষেই ছাত্রলীগের যুগান্তকারী পরিবর্তন আনুন, এখনই সময় পরিবর্তনের। কারণ এটা মেধায় বিশ্বজয়ের যুগ, বেকারত্ব বরণের যুগ নয়।
শিক্ষার্থী: সাবেক সভাপতি, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজে ছাত্রলীগ