Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পথশিশুদের মৌলিক অধিকারের কথা ভাবতে হবে


৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৪

ফাইল ছবি

পথশিশু শব্দটি শুনলেই আমদের হৃদয়পটে ভেসে ওঠে রাস্তার পাশে বা রেলস্টেশনে অসহায় শিশুগুলোর কথা। আমাদের দেশে সরকারিভাবে পথশিশুদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন খণ্ডিত গবেষণা ও জরিপে এ দেখা যায়, তাদের সংখ্যা প্রায় আড়াই থেকে চার লাখ। আর এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পথশিশুদের যথাযথ সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবছর ২ অক্টোবর দেশজুড়ে পালিত হয় পথশিশু দিবস। কিন্তু একটা দিন খুবই আড়ম্বরপূর্ণভাবে তাদের পাশে দাঁড়ালেও—তাদের অধিকার আদৌ কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়।

বিজ্ঞাপন

কোনো দেশে পথশিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে দারিদ্র্য একটি বড় কারণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সবসময়ই কি তাই? তাহলে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশ ব্রাজিলে কেন এত পথশিশু? পাশাপাশি পারিবারিক জীবনে পিতামাতার মধ্যে কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অপরিকল্পিত জন্মদানও এর পেছনে দায়ী। আমাদের দেশের অধিকাংশ পথশিশুই খাদ্য, বস্ত্র, নিরাপদ বাসস্থানসহ প্রায় সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরাপত্তা না থাকার কারণে প্রায়শই শিকার হচ্ছে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের। দু-মুঠো ভাতের অভাবে এরা জড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুশ্রম বন্ধের কথা রয়েছে এবং সরকার সেদিকে অনেকখানি এগিয়েছেও। যা আমাদের আশার আলো দেখায়। তবে একটি জায়গায় একটু বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে হয়, তা হলো আমাদের দেশে যত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে যুক্ত তাদের পূণর্বাসনসহ আর কোনো শিশু যাতে না আসতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আমরা প্রায়ই দেখি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু লোক পথশিশুদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এদের মধ্যে কেউ কয়েকজন পথশিশু নিয়ে অনুষ্ঠান করে বাহবা কুড়াচ্ছে। দিন শেষে তারা আবার তাদের আপন ঠিকানায় ফিরে যায়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘস্থায়ী কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের দ্বারা। তাই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দফতরকে আন্তরিকতার সঙ্গে পথশিশুদের সমস্ত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে, বয়স উপযোগী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে পাশে দাঁড়াতে হবে। পথশিশুরা খুব সীমিত টাকা-পয়সা বা বঞ্চনার মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠে। তাই যখনই তারা কারো কাছ থেকে একটু আন্তরিকতা, ভালোবাসা বা টাকার প্রলোভন পায়, তখন তারা যে কোনো কিছু করতে পারে। তাই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এদেরকে কাজে লাগিয়ে মাদক, চোরাচালানসহ অসংখ্য অনৈতিক কাজ করিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে, যা আগামী বাংলাদেশের জন্য খুবই আশঙ্কার।

তার উপর এখন মৃদু শীতের রেষকে উপেক্ষা করে মহামারির উত্তাপ যেন পুরো পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। এ মুহূর্তে শিশুরা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। সেখানে পথশিশুরা তো পর্যাপ্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড়-ই পায় না। শীতে যে শুধু ঠাণ্ডা লাগার কারণেই বাচ্চারা অসুস্থ হয় তা কিন্তু নয়, বরং শীতকালীন অসুস্থতার মুল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বাচ্চাদের খুব দ্রুতই আক্রমণ করে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া ও ধুলাবালি শিশুদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো ভয়ঙ্কর রোগের কারণ হতে পারে। এই করোনা মহামারিতে সুস্থ থাকতে হলে স্যানিটারি সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন যা পথশিশুদের মধ্যে একদমই নেই। পাশাপাশি শীতকালীন রোগ প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট ফলমূল, শাকসবজি, ও সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। যেখানে পথশিশুরা ঠিকমতো দুমুঠো খেতে পায় না, সেখানে সুষম খাদ্যের কথা বলা বিলাসিতা মাত্র। এদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার।

বাংলাদেশ সরকারের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে। তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু সরকারের এ যাত্রায় আমাদের সাধারণ জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, পথশিশুরা তো পথের মানুষ আর ওটাই তাদের ঠিকানা। তাই অধিকাংশ সময়েই আমরা তাদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণ করি না। এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই আমরা ক্ষুধামুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।

লেখক: শিক্ষার্থী

পথশিশু

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর