Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দক্ষিণ এশিয় রাজনীতি এবং চীনের মুক্তো কুড়ানোর প্রচেষ্টা


১১ জানুয়ারি ২০২১ ২০:১১

এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বললে সবার আগে আসে ভিন্ন রাজনৈতিক হালচাল নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস। অত্যন্ত বিচিত্র আর জটিল এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে বিশেষ কিছু কাঠামো নিয়ে। যেখানে সাংবিধানিক কাঠামো, সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, পরম রাজতন্ত্র, একদলীয় শাসনব্যবস্থা, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা, অধীনস্থ প্রশাসনিক অঞ্চল, উদারপন্থী গণতন্ত্র, সামরিক একনায়কতন্ত্র রাজনৈতিক পাঁচমিশালি এই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে বিশ্বে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। যে কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকে এই অঞ্চলের মানুষ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির আন্দোলন শুরু করে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই আন্দোলন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই এই আন্দোলন দমাতে ব্রিটিশ সরকার হিমশিম খেতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার তাদের সাম্রাজ্যগুলো পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় যার কারণে ভারতবর্ষে তাদের আর টিকে থাকা সম্ভব হয় না। সেই থেকে ব্রিটিশদের বিদায়ের পর দক্ষিণ এশিয়া নিজেদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিজেদের মতো গড়ে তুলেছে। যেখানে এই অঞ্চলের মানুষের বাসস্থান-জীবনব্যাবস্থা-চিন্তাশীলতা-ধর্ম-বিশ্বাস-প্রগতি আর শৃঙ্খলা রাজনীতির ময়দানে উঠে এসেছে। আর তাতেই রাজনৈতিক বৈশিষ্টের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, জাতীয়তাবাদ, ব্যক্তিতান্ত্রিক দলগোষ্ঠী, অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার প্রচেষ্টা আর একগুঁয়েমি রাজনীতি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভাষা হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

তবু এই দক্ষিণ এশিয়ায় কিছু মহান নেতারা এই অঞ্চলের রাজনীতি দিয়ে বিশ্বপরিমণ্ডলে নিজেদের ক্ষমতা আর সাহসিকতার প্রমাণ রেখেছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পতনের জন্য প্রতি দেশে কিছু রাজনৈতিক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে গত কয়েক দশকে। যারা তাদের রাজনৈতিক বুদ্ধি ও সম্মোহনী ক্ষমতা দিয়ে দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যুক্ত করেছেন। তেমন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভারতের মহাত্মা গান্ধী, মায়ানমারের ইউ মিন, পাকিস্তানের জিন্নাহ, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়া আরও অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

তবে বর্তমানে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে কৌশলগত পরিবর্তন আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বড় দেশ ভারত যেমন বিশ্বের একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বিশ্বে যে অল্পকটি পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র আছে তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত আর পাকিস্তান রয়েছে। নিঃসন্দেহ তাতে করে বিশ্বে একটি সমীহের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলো।

সম্প্রতি চীন এই অঞ্চলের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের গোয়াদার এবং শ্রীলংকার হাম্বানটোটায় তারা ইতিমধ্যে বন্দর স্থাপন করেছে। ভারতীয় কিছু চিন্তাবিদ যার নাম দিয়েছেন ‘মুক্তার মালা’।

এই মুক্তার মালার বিশ্লেষণ করা যায় এইভাবে, চীন তার আধিপত্যবলয় সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ভারত মহাসাগরকে মুক্তার মালার মতো বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত নৌবন্দর দিয়ে ঘিরে ফেলবে আর তাতে করেই এই অঞ্চলে তাদের একটি আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ আসবে। সেই পরিক্রমায় হয়তো তাদের পরবর্তী দৃষ্টি পড়বে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের দিক থেকেও চীনের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্তো ঝরছে, সেখানে চীন মুক্তো কুড়াবে না সেটা কি হয়?

অন্যদিকে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরোক্ষ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করা চেষ্টা করছে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করলেও পানি প্রাপ্তি নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে সংশয় আছে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যা নিয়মিত ঘটনা। রোহিঙ্গা বিষয়েও ভারতের অবস্থান কোনোভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপালের নতুন সংবিধান প্রণয়ন, নির্বাচন নিয়ে ভারত বিভিন্ন সময় মন্তব্য করে অবস্থান পরিষ্কার করেছে। মালদ্বীপেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটে ভারত একই আচরণ করেছে। শ্রীলংকায় বন্দর নির্মাণ ও বন্দরের নিরাপত্তার নামে চীনাদের জমি দেওয়ার বিষয়টি ভারত ভালোভাবে নেয়নি। সব মিলিয়ে ভারতের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে আর তাদের প্রধান দেওয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীনের এই অঞ্চলের প্রতি আগ্রহ আর মুক্তো কুড়নোর চেষ্টা।

লেখক:  শিক্ষার্থী, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট

চীন দক্ষিণ এশিয়া

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর