দু’টি অক্ষরের একটি নাম স্বর্ণ অক্ষরে লেখা
১৮ জানুয়ারি ২০২১ ২১:২৩
১৯ জানুয়ারি যে ক্ষণজন্মা মানুষটির ৮৫তম জন্মদিন, তিনি হলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবক্তা, আধুনিক স্ব-নির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠা শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাজের মধ্যে মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তন এনেছিলেন। তার ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে ১৯ দফা কর্মসূচি হাজার বছর ধরে ধারণ করার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার কার্যকর সময়ের মধ্যেই দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ গড়ার এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন। পায়ে হেঁটে নিজ চোখে তিনি মানুষের সমস্যা দেখেছেন, দেশের সমস্যা অনুধাবন করেছেন। দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছেন। জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশবাসী তার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গড়ে তুলেছিলেন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য।
উন্নয়ন কার্যক্রমে সঞ্চারিত হয়েছিল দূর্বার গতি। সন্ত্রাসের করাল ছায়া থেকে মুক্ত স্বদেশে প্রথমবারের মতো বইলো শান্তির সুবাতাস, অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণ হলো স্থিতিশীলতায়। অবসান হলো রাজনৈতিক শূণ্যতার। তিনি প্রায় ১০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো— ১. সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, ২. জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ৩. বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া, ৪. দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব, ৫. সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন, ৬. গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লাখ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান, ৭. হাজার-হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, ৮. সাড়ে ২৭ হাজার পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ, ৯. নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা দূরীকরণ, ১০. কলকারখানায় শ্রমিকের কাজ তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, ১১. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রফতানি পর্যায়ে উন্নীতকরণ, ১২. যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ, ১৪. ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ, ১৫. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন। হাইস্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রথম রঙিন টেলিভিশন সম্প্রচার, ১৬. তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ১৭. জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জয় লাভ, ১৮. তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি, ১৯. দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ, ২০. বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিতকরণ। জনশক্তি রফতানি, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যের রফতানির দ্বার উন্মুক্তকরণ।
একটি সামগ্রিক জাতীয় পরিচয় সূচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি সংখ্যালঘু সাঁওতাল, গারো, মনিপুরী এবং চাকমাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি সংবিধান ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিচায়ক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি স্থাপিত করেন। সাংস্কৃতিক সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ জিয়া ১৯৭৬ সালে একটি পার্বত্য উন্নয়ন কমিশন প্রতিষ্ঠা ও নিয়োগ করেন। সরকার এবং বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ সংঘটনের লক্ষ্যে তিনি একটি উপজাতীয় কনভেনশন আয়োজন করেন।
তার আমলেই বাংলাদেশ পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয় এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ৯০,০০০ উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, অপরাধ দমন ও প্রতিরোধকল্পে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। সারাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক ও যুব শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টস-এর সূচনা এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসি প্রথা প্রবর্তন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্রুত শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্টকরণ ও উন্নয়ন, সৌদি আরব ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগীকরণ, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, সকল ইসলামী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশে সুনাম বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শীর্ষ সংগঠন সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ, ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ সফর করে আঞ্চলিক ফোরাম গঠন করার প্রস্তাব শহীদ জিয়ার অন্যতম সাফল্য।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলসমূহ ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্যে তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠাতে শুরু করেন। প্রথম চিঠি পাঠান ১৯৮০ সালে ২৪ এপ্রিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কাছে চিঠি নিয়ে যান বাংলাদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী জালালউদ্দিন আহমেদ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের কাছে কৃষি মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) নুরুল ইসলাম শিশু, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইউমের কাছে মন্ত্রী কেএম ওবায়দুর রহমান।
জিয়াউর রহমানকে ‘প্রথম সার্ক অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয় ২০০৪ সালে। প্রথম সার্ক অ্যাওয়ার্ড ঘোষণায় সার্ক চেয়ারম্যান ভুটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়নপো স্যানগে নিধুপ বলেন, ‘সার্কের ২০ বছর পূর্তিতে আমরা আপনার (প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার) স্বামী মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যার দূরদৃষ্টিতে এবং উদ্যোগের ফলে আমাদের এই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। তাকে সার্কের প্রথম অ্যাওয়ার্ড ২০০৪ ঘোষণা করে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সংহতি অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের কথা পূর্ণব্যক্ত করলাম।’
লেখক: সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী