Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি বিরোধী মহাকাব্য’


২৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১৯

সাহিত্যে মহাকাব্য একটি অনন্য সৃষ্টি। লেখকের দূরারোহী কল্পনা ও অনন্য সাধারণ মননশক্তি গুণে কোনো জাতির ওই সময়কার চিত্রটি ইতিহাসে চিরন্তন হয়ে থাকে মহাকাব্যে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে, ‘কালে কালে একটি সমগ্র জাতি যে কাব্যকে একজন কবির কবিত্বশক্তি আশ্রয় করিয়া রচনা করিয়া তুলিয়াছে, তাহাকেই যথার্থ মহাকাব্য বলা যায়’। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এই মহাকাব্য রচনার শুরুটা তার দূরারোহী কল্পনারই চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বগুণে অসাধারণ মননশক্তিরই ফসল। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর পর একমাত্র শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ছন্দেই গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতির বিরুদ্ধ স্পষ্ট প্রয়াশ দেখেছে।

বিজ্ঞাপন

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে জাতিকে স্বাধীনতার অমৃত স্বাদ ভোগের সুযোগ সৃষ্টিকারী মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ণগঠনে দ্বিতীয় বিপ্লবের যে মহাপরিকল্পনা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন তাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়াটা ছিল ওই সময়কালের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভিশনারি ডিসিশন। ধারণা করা হয় এই রাষ্ট্রকে লুটপাট করে সম্ভোগ করার পরিকল্পনাকারীরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল কুশীলব। বাঙালি জাতির স্ব-প্রহসনের চূড়ান্ত দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছিল ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কৃতঘ্ন ঘাতকদের নৃশংস চরিত্রের মধ্য দিয়ে। ১৫-ই আগস্টের ঘাতক বুলেটগুলোই পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির পথকে প্রশস্ত করেছে। ওই বুলেটগুলোই ছিল দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের বিপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী আঘাত। যেই আঘাতের ক্ষত এখনও দগদগে।

বিজ্ঞাপন

শেখ মুজিবুর রহমানের এই অসমাপ্ত গল্পের শেষ থেকেই তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মহাকাব্যের রচনার সূত্রপাত। সুদীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার সরকার সংসদীয় কমিটিগুলোকে স্বচ্ছ রেখে দুর্নীতি বিরোধী দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ৩৫টি সংসদীয় কমিটিতে নিজ দলীয় মন্ত্রীদের পরিবর্তে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি করেন। যা ওই সংসদের ‘সেফটি বাল্ব’ হিসাবে কাজ করেছিল।সুশাসন নিশ্চিত করতে রুলস অব বিজনেসের পরিবর্তন ও আইন সংস্কার কমিটি গঠন করেছিলেন।

পরবর্তীতে ২০০১-০৬ সাল, বিরোধী দলে অবস্থান করে বিএনপি-জামাত জোটের আকাশচুম্বী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিএনপি হাওয়া ভবনকে রাষ্ট্রক্ষমতার প্যারালাল কেন্দ্রে পরিণত করে দুর্নীতি ও লুটপাটের কন্ট্রোলার হাউজে পরিণত করে।জোটের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতাকর্মী এবং দলীয় প্রশাসনের লাগামহীন বেপরোয়া দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজির ফলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে পরপর পাঁচবার বিরামহীনভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিদ্যুৎখাতের উন্নয়ন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বিদ্যুতের দাবী জানাতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে ২০ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করে বিএনপি-জামাত জোটের পুলিশ বাহিনী। অথচ বর্তমানে সেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের গল্প ভুলিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার।

বিএনপি জামাত জোটের ওই পাঁচ বছরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন তদন্তে সংবাদ আসতে থাকে— ‘দুর্নীতিতে শীর্ষে যোগাযোগ ও পুলিশ’, ‘ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে কাজ পাওয়া নাইকোর কাছ থেকে বিএনপির প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনের কোটি টাকার গাড়ি নেওয়ার প্রমাণ’, ‘এক বছরেই এগারো হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি’ এসব তথ্য উঠে আসে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দুর্নীতিতে ফাইবার ক্যাবল স্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়ার পর দোষীদের রক্ষা করতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। পৌরসভা সেবা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি—তিনটি প্রকল্পে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা অনিয়ম হওয়ায় প্রকল্পে বরাদ্দের টাকা ফেরত চায় বিশ্বব্যাংক, ‘দুর্নীতিতে ফার্স্ট নাজমুল হুদা’ শিরোনামে সংবাদ আসে। খবর আসে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেয় ওবায়দুল করিম-কায়েস সামি সহ বিএনপি নেতারা।

সালাউদ্দিন, পিন্টু, গিয়াসউদ্দিন, টুকুর ক্যাডার বাহিনী শীতলক্ষ্যা-তুরাগ দখল করে। বিমান বাংলাদেশকে নিঃস্ব করে সম্পদের পাহাড় গড়েন শামীম এস্কেন্দার। গিয়াসউদ্দিন মামুন, আব্দুল আওয়াল মিন্টু গাজীপুরে বনের জমি দখল, তিতাসের এক কর্মচারী ২১০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, খালেদার সম্মতিতে বসুন্ধরার কাছে ১০০ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়া, গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দিতে কোকোর অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, বিএনপি জামাত জোটের নেতাকর্মী কর্তৃক ঢাকা ও আশপাশে ৫০০ বিঘা জমি দখল, নিজের ভাই-ভাগিনা-বন্ধু দিয়ে সিন্ডিকেট করে মির্জা আব্বাসের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় লুটপাটের ইতিহাস, মামুনের খাম্বা সিন্ডিকেট লুটে নেয় বিদ্যুতের হাজার কোটি টাকা, দুর্নীতির দায়ে এডিবি বন প্রকল্পের সহায়তা বাতিল করে।

মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, সৌদি আরব, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ ১৭ দেশে তারেক-মামুনের ২২ হাজার কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ, লন্ডনে নাজমুল হুদার স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল এপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া যায়। ৬৩ কোটি টাকায় ক্যানসারের মেশিন কেনার নামে হয়ে যায় লুটপাট। জোট সরকারের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় লুটপাট হয়ে যায় সমবায় ব্যাংক। ৪২ কোটি টাকার নোয়াখালী টেক্সটাইল মিল দুর্নীতি করে বিক্রি হয় দুই কোটি টাকায়। বড় পুকুরিয়া কয়লা প্রকল্পে হয় ১৫২ কোটি টাকার দুর্নীতি। জমি দখল আর লুটপাট করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান নাসির উদ্দীন পিন্টু। ৫ বছরে ৯০০ দিন সফর করে ১১ কোটি টাকা তসরুফ করেন জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। রাডার মেরামতের নামে ১১ কোটি টাকা বিনা দরপত্রে লুটপাট, ঘাস কাটতে ব্যয় করা হয় কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জে ১০৪ বিঘা জমি দখল করে সংসদ সদস্য মঞ্জু শুরু করে বাণিজ্য। হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির শোভাবর্ধনে সরকার ব্যয় করে দুই কোটি টাকা। এই সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও জনসাধারণকে সাথে নিয়ে হরতাল অবরোধ কর্মসূচিসহ নানাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন দেশটাকে হায়েনাদের কবল থেকে মুক্ত করতে। শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান বিরোধী দলে যেমন সংগ্রাম মুখর সরকারি দলে থাকাকালীন তেমনি আপসহীন।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয়ের স্তম্ভ ছিল শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প-২০২১’ অর্জনে ‘পরিবর্তনের সনদ’ নামক বিস্তারিত ইশতেহার। যে ইশতেহারের পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালীকরণ এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বার্ষিক সম্পদ-বিবরণী জমা দেওয়ার বিধানসহ দুর্নীতি দমনে বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ। পরবর্তীতে সরকার গঠনের পর বিএনপি জামাত জোটের শুষে নেওয়া অর্থনীতি জাগ্রত করতে কাজ শুরু করে শেখ হাসিনা। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ করতে হাতে নেন পদ্মাসেতু প্রকল্প। পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে নেন, যদিও পরবর্তীতে তদন্তে এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিএনপির আগুন সন্ত্রাস রুখে দিয়ে শুরু হয় উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার পথচলা। দুর্গম পথে চলমান থেকেই শেখ হাসিনা অবিরত রচনা করে চলেছেন দুর্নীতিবিরোধী উন্নয়নের মহাকাব্য।অবিকল যেন দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে সমাজের অন্যায় রুখে দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আনমনে মহাকাব্যের রচয়িতা শেখ হাসিনা। এই কাব্যের প্রতিটি শব্দ স্বরূপ অগ্রগতি যেন দেশরত্নের হৃদয় নিংড়ানো দেশপ্রেম থেকে নিঃসৃত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বর্ণমালা।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা তার বিচক্ষণ নেতৃত্বগুণে দেশকে ইতিমধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। উন্নয়ন অগ্রগতির আলোকতীব্রতা বাধাগ্রস্ত করতে যে অপশক্তি বিন্দুমাত্রও দৃষ্টিগোচর হয়েছে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তাদের কাউকেই ছাড় দেননি শেখ হাসিনা। জন্মলগ্ন থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জমতে থাকা প্রতিটি শব্দক্ষোভ সময়ে সময়ে কখনও যেমন প্রতিবাদী ছন্দে গর্জে উঠেছে কখনও আবার আপসহীনভাবে তিনি স্পষ্ট জানান দিয়েছেন—দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। অবৈধ অর্থের ফুটানিতে বৈষম্যের সুযোগ এই রাষ্ট্রে নেই। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে প্রত্যেককেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলমান রেখেছেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শৈশব থেকে পারিবারিক আবহে ন্যায়-সততার যে আদর্শিক শব্দ পুঁজি করে বেড়ে উঠেছেন, ক্রমাগত সেই শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আওয়াজ উঠেছে সভা মঞ্চে শোষিতের পক্ষের কাব্য হয়ে। সময়কালটা হোক সরকারি দল বা বিরোধীদলে থেকে। হোক নিজ দলের নেতাকর্মী বা ভিন্ন কেউ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শব্দচয়ন তীব্র ঝাঁঝালো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; উপ বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দশম গ্রেড দাবি করায় ৬৪ অডিটরকে বদলি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৫

সম্পর্কিত খবর