সীমাবদ্ধতা নিয়েও বাংলাদেশ যেভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে সফল
২৯ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫৯
বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ ম জনবহুল দেশ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১০ ম। অথচ, কোভিড আক্রান্তের মোট সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৩১ তম এবং কোভিডে মোট মৃত্যুর সংখ্যার অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদশের অবস্থান ৩৮ তম। প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৪ তম এবং প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যায় কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ তম।
অর্থনৈতিক সক্ষমতার নানা ধরণের ইন্ডিকেটর রয়েছে। তিনটি মেজর ইন্ডিকেটর অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নরূপ-
১. দেশের মোট জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৩ তম
২. মাথাপিছু গড় জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭ তম
৩. বার্ষিক বাজেট অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯ তম
অদ্যবধি মাত্র ২৩ টি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কোভিড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর বাইরে আরও প্রায় ৩০ টি দেশ/টেরিটোরিতে ট্রায়াল ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান আছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই (২৭ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে কোভিড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুধু ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু করাই নয়, বরং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে ৩ কোটি এবং কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ৭ কোটি অর্থাৎ মোট ১০ কোটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে যার মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা যাবে। এর মাঝে সরকারি ক্রয়কৃত ৫০ লাখ এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছেছে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে দেশের সকল মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যেই বিস্তারিত কর্ম পরিকল্পনা সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে।
একজন স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ উপরের ডাটাগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, নানান প্রতিকূলতা এবং সীমিত সামর্থ্য নিয়েও বাংলাদেশ কোভিড প্রতিরোধ কার্যক্রমে কি দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষত ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যে দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ দিয়েছে সেটিকে অনন্যসাধারণ বললেও কম বলা হয়। যেখানে আমেরিকা, ইউরোপসহ সারা দুনিয়াজুড়েই ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিয়ে হাহাকার চলছে। সৌদি আরবের মতো দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই মিলিয়ন ভ্যাকসিন ক্রয় চূড়ান্ত করলো এই সেদিন। ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ধীরগতির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অথচ আমাদের হাতে ইতোমধ্যেই ৭ মিলিয়ন ভ্যাকসিন রয়েছে।
কোভিড প্রতিরোধ কার্যক্রমের এই সফলতার পুরোটাই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। উনার বিচক্ষণ নির্দেশনা এবং নানা শ্রেণী-পেশার নাম না জানা অসংখ্য মানুষের দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে শুরুর দিকের কিছু বিশৃঙ্খলা দূর করে আজ আমরা কোভিড মহামারি চূড়ান্তভাবে প্রতিরোধের দাঁড়প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। সীমিত অর্থনৈতিক সক্ষমতার একটি দেশের জন্য এটি যে কত বড় অর্জন তার বিচার ইতিহাস করবে।
দুঃখ লাগে এটা ভেবে যে, তারপরও কিছু মানুষের মন ভরবে না। তারা ডাটায় বিশ্বাস করবে না। তারা বিশ্বাস করবে নানা ক্লিকবেইট নিউজ আর কিছু জ্ঞানপাপীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রপাগান্ডাকে। বিশেষত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম নিয়ে যে ধরনের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে হয়েছে এবং হচ্ছে তা পরিষ্কারভাবেই দেশবিরোধিতার সামিল।
রাজনীতির একজন মনযোগী ছাত্র হিসেবে একথা ভালভাবেই জানি এবং মানি যে, রাজনীতিতে নানা দলের মাঝে মতবিরোধ ও পারস্পরিক সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু কোভিডের মতো একটি বৈশ্বিক মহামারির সময়েও দেশের কতিপয় রাজনৈতিক দল ও কথিত সুশীল সমাজের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ যেভাবে মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই হয়নি।
এতো প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা নামের একজন লৌহমানবীর ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার কারণে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা আমার পরম সৌভাগ্য যে আমার প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কোভিড প্রতিরোধ কার্যক্রম কোভিড ভ্যাকসিন কোভিড ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড কোভিড ভ্যাকসিনেশন কোভিশিল্ড