আমার ভাবনায় আল জাজিরার ডকুমেন্টারি
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:৩৮
আল জাজিরার তথাকথিত কাঁপিয়ে দেওয়া ডকুমেন্টারি দেখতে গিয়ে বারবার কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে আমার মানসপটে। একটি গোঁজামিল দেওয়া ডকুমেন্টারি তৈরিতে যে রকম স্ক্রিপ্ট রচনা করা প্রয়োজন ছিল আল জাজিরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে সেরকম কিছু করতে। কিছু অংশে তবুও রয়ে গেছে ফোকর এবং দর্শক হয়েছে সন্দিহান।
যেমন—
এক
ভিডিওর শুরুতেই আহমেদ পরিবারকে প্রকাশ করার পরই হারিসকে পরিচয় দেওয়া হয় একজন সাইকোপ্যাথ হিসেবে, অথচ ভিডিওর পরবর্তী অংশগুলোতে হারিসের বক্তব্যগুলোকে ধ্রুব সত্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করার একটা প্রবণতা এবং প্রয়াস আল জাজিরার টিমের কাছে দেখা গেছে। প্রশ্ন থেকেই যায় একজন সাইকোপ্যাথের বক্তব্যকে আল জাজিরার দৃষ্টিতে এমন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ একটি ডকুমেন্টারিতে স্থান দেয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত?
দুই
ভিডিওটির অন্য একটি অংশে দেখা যায় জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০১৬ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থানকারী জনৈক সামিকে ই-মেইল করেন। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা নিজের পার্সোনাল ইমেইলে নিজের নামই বারবার ‘আজিজ’ লিখছেন এটা দৃশ্যটা হাস্যকর মনে হয়। যেহেতু ইমেইল জেনারেল আজিজ পাঠাচ্ছেন সেখানে প্রাপককে আলাদাভাবে নিজের নাম ‘আজিজ’ লিখতে যাওয়ার কারণ কী? ভিডিওর এই অংশে আমরা ই-মেইলের কোনো স্ক্রিনশট দেখতে পাই না শুধু মাত্র দুইটি চারটি লাইন এবং শেষে ‘আজিজ’ লেখা ছাড়া।
তিন
ভিডিওতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডকে টেনে আনা হয়েছে এবং দুই চারটি সস্তা বাক্যে শেখ মুজিবের মর্মান্তিক প্রয়াণকে ‘ক্যু’ বলে বক্তব্য শেষ করার হয়েছে অথচ শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পিছনে আছে দুরভিসন্ধিমূলক এক অপকৌশল। প্রয়াণে আলোকপাত করা হলেও শেখ মুজিবের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল যেই অধ্যায় সেই একাত্তরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া নিতান্তই পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশনের নামান্তর।
চার
হারিস যখন ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তাকে সালাম দিয়ে কথা বলেন তখন আমরা শুধুমাত্র হারিসের কথাই শুনতে পাই, আমরা জানিনা ফোনের ওই প্রান্তে আসলেই ডিজিএফআইয়ের কেউ ছিলেন, না-কি ছিলেন না। যদি থেকেও থাকেন তিনি আদৌ ডিজিএফআইয়ের কেউ কিনা আমরা তাও জানি না। কারণ এখানে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা মানুষটির নাম জানানো হয়নি।
পাঁচ
মোস্তফার ভাতিজার যে বক্তব্য নেওয়া হয়েছে তাতে মোস্তফার ভাতিজার আহমেদ পরিবারের প্রতি ঘৃণাকেই পুঁজি করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য মোস্তফার ভাতিজার ৪৮ মিনিটের বক্তব্যকে কাটছাঁট করে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাকে এই রিপোর্টের মূল উদ্দেশ্য জানানো হয়নি। এমনটা কী সংবাদ সংগ্রহের নীতি পরিপন্থী কিনা সেটা যাচাই প্রয়োজন।
ছয়
ডকুমেন্টারির মূল ভাবনা এবং শিরোনাম এই দুইয়ের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। পুরো ভিডিওর কোথাও শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো অন রেকর্ড বক্তব্য নেই। হারিস, জোসেফ, আনিস এমনকি সেনাপ্রধান প্রসঙ্গে। All The Prime minister’s men- বলে আসলে অযাচিতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাত
ডেভিড বার্গম্যানের বাংলাদেশ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি স্পষ্ট বিদ্বেষ এই ভিডিও ডকুমেন্টারিতে আরও একবার নির্লজ্জভাবে প্রকাশ পেলো। আল জাজিরায় শহিদুল আলমের মিথ্যা বয়ানকে অনুষঙ্গ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলন হিসেবে জাহির করা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে ডেভিড বার্গম্যানের আর্টিকেল মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত শহিদ সংখ্যা নিয়ে অহেতুক মিথ্যাচার এসবই বার্গম্যানের কর্ম।
সর্বোপরি, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ভিডিও ডকুমেন্টারিকে আমি আমার দেশের স্বার্থ বিরোধী চক্রের কৌশল হিসেবেই ভাবছি।
শিক্ষার্থী: ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি