Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিডও নিয়ে তারুণ্যের জনমত


১১ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৫১

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতার আইজাক (AIESEC), উইমেনভিউ ( WeMenView) এবং বন্ধুসভা নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য অবসান সনদের (সিডও) বিষয়ে তরুণদের ধারণা বোঝার জন্য একটি মূল্যায়ন সমীক্ষা করেছে। এসব তুরণদের বয়সসীমা ছিল ১৮ থেকে ২৫ বছর। সিডও সনদটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারী পুরুষের সমতা উপলব্ধির ভিত্তি তৈরি করে। এই জরিপটি সিডও সনদের দ্বিতীয় এবং ষোড়শ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। এই অনুচ্ছেদ দুটির ভিত্তি হলো—নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইনের অপসারণ।

বিজ্ঞাপন

এই জরিপটির মূল লক্ষ্য ছিল, আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম সম্পত্তিতে নারীর অসম উত্তরাধিকার কী ভাবেন, এবং এই ভাবনায় এগিয়ে যাওয়ার উপায়সমূহ তুলে ধরা।

সর্বমোট ৭২৭ জন অংশগ্রহণকারীর থেকে প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫২.৩ শতাংশ নারী, ৪৭.২ শতাংশ পুরুষ এবং ০. ০৫ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

এই সমীক্ষাটি করতে অংশগ্রহণকারীদের একটি সম্মতি ফর্ম দেওয়া হয় যাতে প্রত্যেকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। এই জরিপটির প্রথম তথ্য ছিল তাদের বয়স সংগ্রহ করা। যেখানে ২১ বছর বয়সীদের থেকে সর্বাধিক সংখ্যক ১২৩টি প্রতিক্রিয়া, ২৩বছর বয়সীদের থেকে ১০৯টি এবং ২২ বছর বয়সীদের কাছ থেকে ১০৬টি প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। এছাড়াও জরিপটি বিভিন্ন বয়সের বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছেও পৌঁছেছিল।

তবে উপরোক্ত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী। বাকি অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন স্নাতকোত্তর ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের। এছাড়া কিছু সংখ্যক মাধ্যমিক পাস তরুণও ছিলেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। এদের মধ্যে ২০০ জনের বেশি ঢাকা থেকে এবং বাকিরা অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দা।

জরিপের প্রথম প্রশ্ন ছিল, দেশে নারী পুরুষের সমানাধিকার আছে কিনা।  ৫৫০ জন(৭৫.৭ শতাংশ) উত্তরদাতার এখানে সম্মতিসূচক উত্তর দেন। ২১.৭ শতাংশ জানান, সমানাধিকার নেই। এবং খুব অল্প কিছু তরুণ (১৯ জন) এখনো নারী পুরুষের সমানাধিকার রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন।

প্রায় অর্ধেকের বেশি তরুণ ৫৩.৮ শতাংশ (৩৯১ জন) জানিয়েছেন তারা সিডও সনদের সম্পর্কে অবগত আছেন। বাকি ৩০.৯ শতাংশ (২২৫ জন) জানিয়েছেন তারা অবগত নন এবং ১৫.৩ শতাংশ (১১১ জন) এখনো এই বিষয়ে ভাসাভাসা জানেন বলে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সিডও সনদ সম্পর্কে তাদের তথ্যের উৎস কোথায়, এ প্রশ্নের জবাবে ৪৪.৮ শতাংশ জানিয়েছেন যে তাদের তথ্যসূত্র ইন্টারনেট। এবং মাত্র ২৬ শতাংশ জানিয়েছেন তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জেনেছেন।

এরপর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সিডও সনদের কিছু অনুচ্ছেদের উপর বাংলাদেশের আইনে কিছু সংরক্ষণ রয়েছে, যেগুলো নারীর অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে। বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৪৭.৫%) এ বিষয়ে অবগত নন, মাত্র ৩৮.৪% জানিয়েছেন তারা এ বিষয়ে অবগত আছেন। এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে জানিয়েছেন এ আইনগুলো সত্যিই নারীর অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে।

এরপর জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন সিডও সনদকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়? এর জবাবে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ৫২৯ জন (৭২.৮%) জানিয়েছেন বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে নারীরা সাধারণত বৈষম্যের শিকার। অন্য ১৭৩ জন (২৩.৮%) জানিয়েছেন এটা একমাত্র বৈশ্বিক দলিল যা নারীর অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। এবং সর্বশেষ ২৫ জন (৩.৪%) জানিয়েছেন নারীদের পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই তাই সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অংশগ্রহণকারীদের পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তারা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বাংলাদেশি আইন সম্পর্কে অবগত কিনা। ৪২১ জন (৫৭.৯%) ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। ১৯১জন (২৬.৩%) ভাসাভাসা প্রতিক্রিয়া এবং ১১৫জন (১৫.৮%) জানিয়েছেন যে তাদের এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই।

এরপর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিদ্যমান আইনগুলো নারী পুরুষকে সমানভাবে দেখে কিনা। ৫১.৩ শতাংশ না বাচক উত্তর দেন। এবং ১৬.৪ শতাংশ ইতিবাচক ও ৩২.৩ শতাংশ এ বিষয়ে যথেষ্ট অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

যখন তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ছেলেমেয়ে উভয়ের পিতার সম্পত্তিতে সমান অংশীদার হওয়া উচিত কিনা— তখন ৫২১ জন ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। চূড়ান্ত প্রশ্ন ছিল, যেসব আইন নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সেগুলো বাতিল হওয়া উচিত বলে বিশ্বাস করেন কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৫.৫ শতাংশ ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন।

উক্ত পর্যবেক্ষণের আকর্ষণীয় বিষয় হলো– বিভিন্ন ধরনের মতামত থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তারা নারী পুরুষের উভয়ের সমানাধিকার নিশ্চিত করে এমন আইন দেখতে চান।

এ থেকে উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে, সিডও সনদের সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের কাছে এখনো পর্যাপ্ত সঠিক তথ্য নেই।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর