বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জীবনের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষালয়
২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৫০
নিজের কথা দিয়েই শুরু করি। আমি ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করি ২০১৮ সাল থেকে। সে বছর কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ করে ছাত্র ইউনিয়নের যুক্ত হই। এছাড়াও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের যে কোন আন্দোলনে সব সময়ই অংশ নিয়েছি। পত্রিকার পাতায় ও অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে শিক্ষার অধিকার, মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম’সহ চলমান রাষ্ট্র ও রাজনীতির নানা ইস্যুতে দু’হাতে লেখালেখি করি। যার খুব অল্প দিনেই ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর টার্গেট বনে যাই। আমি তখনও ছাত্রলীগের সাথেই ছিলাম। ক্রমেই বুঝতে পারলাম আমার সামনে ঘোর বিপদ। এভাবে একা লড়তে পারবো না। এমন একটা সংগঠন আমার প্রয়োজন আমি যে লক্ষ্য ও চিন্তাকে ধারণ করে কাজ করছি সেই সংগঠনও আমার লক্ষ্য ও চিন্তাকে স্থান দিবে। প্রথমে ক্যাম্পাসে বিরাজমান বাম সংগঠনগুলো নিয়ে স্টাডি করি। তখন দুটা সংগঠনের কার্যক্রম ছিল। একটি ভালো চলছিল- ছাত্র মৈত্রী, অন্যটির কাঠামো ছিল কিন্তু কোনো কার্যক্রম তেমন ছিল না- ছাত্র ইউনিয়ন। আমি দুটো সংগঠন নিয়ে স্টাডি শুরু করি। অবশেষে আমি ছাত্র ইউনিয়নকে বেছে নিই। তাদের সাথে কাজ শুরু করি এবং সংগঠনকে গতিশীল করি। ছাত্র ইউনিয়নকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের পথে অটল থাকতে গিয়ে অনেক ব্যারিয়ার ভাঙতে হয়েছে আমাকে। ভাঙার সাহস আমি ছাত্র ইউনিয়ন থেকেই পেয়েছি।
ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করার পর অনেকের কাছে যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হয়েছি সেটা হচ্ছে, ‘হঠাৎ ছাত্র ইউনিয়ন কেন শুরু করলেন/করলে/করলি?’ আমি সোজা যে উত্তরটা দিতাম এবং এখনও দিই সেটা হচ্ছে, ‘আমি ছাত্র ইউনিয়ন করা শুরু করেছি নিজের জন্য তারপর মানুষের জন্য।’ নিজের জন্য এই কারণে যে আমি হলে থাকার নামে যে দাসত্বের বুঝা বইছিলাম এবং নিরাপত্তার নামে যে শৃঙ্খলাকে ঘাড়ে নিয়েছিলাম সেটা আমাকে মানসিকভাবে চরম পীড়িত করছি এবং প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হতো এই স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। বিবেকবান মানুষ কখনই এই দাসত্বের শিকল পড়ে থাকতে পারে না। আমি সেই শিকল ভাঙার মন্ত্র ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষণাপত্র পড়ে পেয়ে যাই। তাই আমি ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করি। এটা আমার নিজের জন্য। দ্বিতীয়, মানুষের জন্য। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র থেকে শুরু করে অসংখ্য শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি। তাদের যে ক্ষোভ সেটা আমাকে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি ধাবিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কিম্বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের দখলদারিত্বে থাকে। হলে সিট পেতে হলে তাদের দাসত্ব মেনে নিতে হয়। পছন্দ না হলেও, মন থেকে গ্রহণ করতে না পারলেও তাদের মিছিল, মিটিং ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে হয়। সিট রক্ষার দায়ে এই দাসত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়। কেবল সিট নয় জান রক্ষার তাগিদও থাকে। একইভাবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব চলে। আবাসিক হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগের টিকিট লাগে। পছন্দ না হলেও কিম্বা তাদের কার্যক্রম মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও মিছিল, মিটিং ও তাদের দলীয় প্রোগ্রামে যেতে হয়৷ নিজের অধিকারের কথাটাও মুখ ফুটে বলতে পারে না। সিট রক্ষার তাগিদ ও জীবনের নিরাপত্তা দুটোই জড়িত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে সিট পাওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ন্যায্য অধিকার। তার পছন্দ মতো মতাদর্শ বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সেই অধিকার বিএনপি-জামায়াতের আমলে ছাত্রদল কিম্বা ছাত্র শিবির কেড়ে নেয় উগ্র-জাতীয়তাবাদ ও ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার নামে। আর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ সেই স্বাধীনতা কেড়ে নেয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম করে। আমি এই দুটোকেই সমান ঘৃণা করে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলার জন্যই ছাত্র ইউনিয়নকে বেছে নিয়েছি। কারণ আমি যা বলতে চাই ছাত্র ইউনিয়ন তার জন্ম (১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল) থেকেই সেই কথা বলে আসছে।
আমি এমন একটা ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে চাচ্ছিলাম যে সংগঠনের একজন কর্মী তার সংগঠনের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল তথা সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব কিম্বা কাজের অবহেলার জন্য জবাবদিহি করার অধিকার রাখে। আমি ছাত্র ইউনিয়নের মাঝে সেই গণতান্ত্রিক চর্চা দেখেছি। আমি এমন একটা সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে চাচ্ছিলাম যারা বড় কিম্বা ছোট কোনো রাজনৈতিক দলের তাবেদারী বা হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে না। এমনকি নিজেদের গঠনতন্ত্রের চর্চায় কাউকে ন্যূনতম ছাড় দিতে রাজী নয়। ছাত্র ইউনিয়নকে নিয়ে যখন স্টাডি শুরু করি তখন আমি তাকে সেই রকমই পেয়েছি।
যে মানুষের জীবনে যখন আত্মসম্মান বোধ বলে কিছু থাকে না তখন সে মানসিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগে। তার মানসিকতা ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই জীবনে কখনও এমন কাজ করি নাই কিম্বা মেনে নিতে পারি নাই যে কাজে আমার আত্মসম্মান খোয়া যাবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি একজন শিক্ষার্থী কতটা নিচু মানসিকতার লালন করে তারই সমকক্ষ অন্য আরেকজন ছাত্রকে ভয়ে কিম্বা আর কোনো কারণে হোক ‘পূজো’ দিয়ে চলছে। ‘সহমত’ বৈ দ্বিমত করতে পারছে না। ভাইয়ের নামে স্লোগান দিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। বড় নেতা রাস্তা দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে যাবে তার প্রটোকল দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে এনে নিজের ক্ষমতা ও আধিপত্য জাহির করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই নেতার নামে স্লোগান দিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়া করিয়ে রাখছে। হলে সিট কিম্বা একটু দাপট কিম্বা কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগের জন্য এমন করে আত্ম বিকানো, আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দেয়া আমি কখনও মেনে নিতে পারি নাই। আমি গরীব হতে পারি, আমার বাবা গরীব হবে পারে কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তথাকথিত সেই ‘ভাই’ যে যোগ্যতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে আমিও সেই যোগ্যতা নিয়েই ভর্তি হয়েছি। আমার সামনে পৃথিবী উন্মোচিত, মেধা ও যোগ্যতা খাটিয়ে আমি আমার লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবো। কেন আমাকে আমার সমকক্ষ একজনের নামে রাতদিন নমনম করতে হবে? কেন তার নামে স্লোগান দিতে যাবো? কেন আমি বড় নেতাকে প্রটোকল দিতে গিয়ে পড়াশোনা সব বাদ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সেই নেতার নামে স্লোগান দিবো? এটা কিসের আদর্শ? আমি এমন আত্মসম্মানহীন কাজ ও নোংরা আদর্শ মেনে নিতে পারি নাই। আমি মুক্তির অন্বেষণ কর ছিলাম। যখন ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষণাপত্র পড়েছি তখন মুক্তির পতাকার সন্ধান আমি পেয়ে যাই। সেই পতাকা তলে আসতে মুহূর্ত সময় নষ্ট করি নাই।
আমি আজন্ম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে ঘৃণা করি। চরম ঘৃণা করি। কারণ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকার করতে চায় না। সে আপন স্বার্থে মানুষগুলোকে বস্তুর মতো ব্যবহার করে। আমি ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার স্লোগানরত মিছিলে যুক্ত হতে চাইলাম। যখন ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষণাপত্র পড়ি আমি সেই মিছিলের যাত্রীদের সন্ধান পেয়ে যাই। আলোর পথযাত্রীদের সাথে যুক্ত হতে সময় নষ্ট করিনি।
যে ব্যবস্থা কৃষক, শ্রমিক, মজদুর ও মেহনতি মানুষের অধিকারের কথা বলে এবং যারা শোষকের কালো হাত ভেঙে দিতে উদ্যত বেয়োনেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সেই রকম একটা আদর্শের কর্মীদের মিছিলের সন্ধান করছিলাম। আমি একটা অংক বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম যে, কৃষক ধান ফলায় সেই কৃষকের ঘরেই কেন ভাতের অভাব হয়। আমি বুঝতে চেষ্টা করছিলাম যে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক, মজদুর ও খেটে খাওয়া দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের। তারাই টাকা বানায়, ফসল ফলায়, শিল্পোৎপাদন করে। রাষ্ট্রের অর্থের জোগান দেয় কিন্তু আমি দেখলাম হাসপাতালে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে তারাই সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রেণি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কিম্বা মেডিক্যালে এই শ্রেণি সন্তানরা পড়ছে না। ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনের ক্যাডার, ডাক্তার হচ্ছে ধনির ছেলে। কারণ তাদের টাকা আছে তারা পড়তে পারছে। অথচ সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক, শ্রমিক, মজদুর ও খেটে খাওয়া মানুষের ট্যাক্সের টাকায়। আর সেখানে তাদের সন্তানই পড়তে পারে না। তারাই সেবা পায় না। এই যে ব্যবস্থা এর বিরুদ্ধে আমি দাঁড়াতে চাইলাম। এমন একটা সংগঠনের খোঁজ করছিলাম যারা এই নিপীড়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সবার জন্য সমতার ব্যবস্থা চায়। ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষণাপত্রে আমি সেই ব্যবস্থার সন্ধান পেয়ে যাই।
আমি এমন কিছু মহত্তর ও গুরুত্বপূর্ণ কারণে ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করি। শুরু হয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষালয়ের সাথে আমার যাত্রা। যখন আমি ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করি তখন আমি জীবনের নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করি। তবে সবটাই পঙ্কিল নয় কিছু জরাজীর্ণতা আদর্শের আলোকিত পথের লড়াইয়ে কালো দাগ দিতে চায়। কিন্তু তারা সর্বদাই ব্যর্থদের দলভুক্ত। তাদেরকে আদর্শের সংগ্রামের সব সময়ই ব্যর্থ করে দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার জন্ম থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, ট্যান্ডারবাজী, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ ও অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। বাংলাদেশের এমন একটা সোনালী অর্জন নেই যেখানে ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্ব দেয়নি বা সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। ‘৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ‘৭২ তে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ এ সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন, ২০১৫ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, এগুলো তার কতিপয় উদাহরণ মাত্র। ছাত্র ইউনিয়ন যে আদর্শের প্রেরণা থেকে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন করেছিল আজও সেই নীতিতে আটল রয়েছে। যে আদর্শের টানে ‘৭১ সালে সর্ববৃহৎ গ্যারিলা বাহিনী তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি সেই আদর্শের লড়াই এখনও করে যাচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়ন তার নীতি আদর্শের প্রশ্নে আপোষহীনভাবে এখনও লড়াই করে টিকে আছে, থাকবে।
আজ ২৬ এপ্রিল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৬৯টি বসন্ত পেড়িয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ২০২১ সালে পৌঁছেছে। লাখো লাখো স্বপ্নবাজ বিপ্লবীর সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সময়ের শ্রেষ্ঠতম সন্তান বের হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকেই। ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শকে ধারণ করে শহীদ মতিউল, শহীদ মির্জা কাদেরুল, সঞ্জয় তলাপাত্ররা যেমন জীবন দিয়েছে তেমনি ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ চ্যুত হয়ে ফ্যাসিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সাতে হাতও মিলিয়েছে অনেকেই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্র ইউনিয়ন ৫০ হাজার কর্মী নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার সম্মেলন করে ছিল। শুধু বাংলা নয় পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম প্রগতিশীল ও সব ধর্ম-বর্ণের ছাত্রদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ছিল ছাত্র ইউনিয়ন। পাকিস্তান আমলে ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশে যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউই আদর্শিকভাবে টিকতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর প্রথম ভিপি হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সেই ছাত্র ইউনিয়নের জৌলুস অনেক কমেছে। পতন ও পঁচনের সমাজে সবাই যেখানে বিকিয়ে গেছে ছাত্র ইউনিয়ন এখনও তার আদর্শে অটুট আছে। সংখ্যায় কম হলেও মনোবলে কখনও কমেনি লড়াইয়ের গতি। প্রত্যেক নীল পতাকার সৈনিকের দৃঢ় বিশ্বাস ‘আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হব।’
জীবনের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষালয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক। নীল পতাকার সকল সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জিন্দাবাদ। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক: সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাধারণ সম্পাদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন