কর্মসংস্থান প্রাধান্য বাজেট— আগামী বাংলাদেশ
৩১ মে ২০২১ ১০:৪১
তারুণ্যের উৎকণ্ঠা
অর্থব্যবস্থার গতি স্তব্ধ হলে মানুষ কাজ খোয়াবে, বাজার ব্যবস্থায় তা অনেকটা স্বতঃসিদ্ধ। আমাদের দেশে সেই ঘটনাই ঘটেছে। সমাজের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত হিসেবে যারা নিজেদের দাবি করেন, তাদের অনেকেই আয়ের পথ হারিয়েছেন। কাজ হারিয়েছেন। দীর্ঘকাল যাপন করতে হবে দুঃসহ জীবন। এসবতো বাস্তবতা। পুঁজিবাজার অর্থনীতির অতিমারির বাস্তবতা। যতো কঠিনই হোক তা মোকাবেলা করতে হবে। আগেই কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাসের শ্লথগতি, আমদানি-রপ্তানি হ্রাস ও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতির চিহ্ন ছিল।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিপুলসংখ্যক কর্মী কাজ হারিয়েছেন। অনেকে নতুন করে হয়েছেন কর্মহীন। অনেকে কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ অবস্থায় বেকারের তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। কর্মহীন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। কাজে ফিরতে না পারা এসব মানুষ আরো দরিদ্রতার শিকার হচ্ছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে ঋণগ্রস্ত হচ্ছে অনেকে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনীতিতে এক ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় সব চাকরির পরীক্ষাই আটকে গেছে। সরকারি চাকরির ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫১টি পদ শূন্য আছে বলে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বরে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন। অনেকেই আছেন, যাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স আর বেশিদিন নেই। আয়-রোজগারের পথ বন্ধ থাকলে সমাজে যে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে তরুণ প্রজন্ম। প্রথম আলো একটি তারুণ্য জরিপে জীবনের লক্ষ্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিয়ে তাদের বেশি উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণরাই এসব নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন। এই উদ্বেগের পেছনে কারণ হচ্ছে, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট ও চারটি সুপারিশ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সভার সূত্রে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গিয়েছে। আসন্ন বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বেশি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেট ঘাটতি অনুমান করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এতো বড় বাজেট ঘাটতি সুদূর অতীতে দেখা যায়নি।
বাজেটে চারটি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করছি— স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং কর্মসংস্থান। এ জন্য অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এমন ব্যয় রেখে, অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল ব্যয় কাটছাঁট করা যেতে পারে।
কার স্বার্থে বাজেট
পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার চেয়ে, অনেক বেশি খরচাপাতি হয়, একে ধ্বংসের মাল-মশলা তৈরিতে। আমরা তো মেনেও নিয়েছি। অতিমারি নতুন করে আমাদের কেবল এটুকুই শিখিয়েছে— নিরাপত্তার নামে, সার্বভৌমত্বের নামে, ক্ষমতাসীনদের সকল খরচাপাতি জায়েজ। কেবল জীবন রক্ষার বেলায় টান পড়ে রাষ্ট্রের কোষাগারে। সে ধনী হোক কিংবা গরিব যে-ই হোক না কেনো। সর্বত্র মানুষ, মানুষের বাঁচামরা সবই ব্যবসার স্বার্থে।
বেকার : সংজ্ঞায় কি বলে?
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কাজপ্রত্যাশী হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসাবে ধরা হবে। সাধারণত জরিপ করার সময়ের আগের সপ্তাহের যেকোনো সময়ে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাকে বেকার বলা যাবে না।
অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম উন্নয়ন ভাবনায় কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার গ্রন্থে বেকারত্বের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন যে ব্যক্তি কোনো কর্মসংস্থানে নিয়োজিত নন এবং কাজের খোঁজও করছেন না, তিনি সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকার নন। এ ধরনের বেকারত্বকে বলা হয় স্বেচ্ছাবেকারত্ব। আর যিনি কাজ খুঁজেও পাচ্ছেন না, তাঁকে বলা হয় বাধ্যতামূলক বেকারত্ব। বাধ্যতামূলক বেকারত্ব আবার তিন প্রকারের। যেমন সামঞ্জস্যহীনতাজনিত বেকারত্ব, বাণিজ্য চক্রজনিত ও কাঠামোগত বেকারত্ব।
শ্রমবাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কিছু অসামঞ্জস্য থাকায় বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। অনেকে পছন্দমতো কাজ খোঁজার জন্য কিছু সময়ের জন্য বেকার থাকতে প্রস্তুত থাকতে পারেন। অথবা কেউ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ খুঁজতে পারেন। এ ধরনের বেকারত্ব হচ্ছে সামঞ্জস্যহীনতাজনিত বেকারত্ব।
কখনো অর্থনীতির ওঠানামার কারণে বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারে। যেমন মন্দার সময় বেকারত্ব বাড়ে, তেজিভাব ফিরে এলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সমস্যা দেখা যায় মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে। একে বলা হয় বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব। আবার চাহিদা ও সরবরাহের পরিবর্তনের ফলে শ্রমশক্তির চাহিদায়ও পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে কিছু শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলেও বেকারত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের বেকারত্বকে কাঠামোগত বেকারত্ব বলা হয়।
কারা বেকার
কত দিন বেকার থাকলে একজনকে দীর্ঘমেয়াদি বেকার বলা যাবে, এর কোনো সংজ্ঞা বাংলাদেশে নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় বেকারদের দীর্ঘমেয়াদি বেকার বলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এক বছরের বেশি সময়কে দীর্ঘমেয়াদি বেকার ধরা হয়।
সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে বেকার না বলার সংজ্ঞাটা উন্নত দেশের জন্য যতটা প্রযোজ্য, অন্যদের ক্ষেত্রে তা নয়। কারণ, উন্নত দেশে বেকার ভাতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মতো দেশে জীবনধারণের জন্য কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। যদিও সেসব শোভন কাজ নয়, মজুরিও কম। ফলে জীবনধারণের ন্যূনতম আয় না করেও কর্মে নিয়োজিত বলে ধরে নেওয়া হয়। আবার বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেতন-ভাতা নির্ধারণের কোনো নিয়ম নেই।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বাংলাদেশের জন্য একটি মানদণ্ড মাঝেমধ্যে অনুসরণ করে। সেটি হচ্ছে, যারা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না, তাঁদের ছদ্ম বেকার বলা হয়। দেশে এমন মানুষ প্রায় ৬৬ লাখ, যারা পছন্দমতো কাজ পান না। ফলে এদের বড় অংশই টিউশনি, রাইড শেয়ারিং বা বিক্রয়কর্মীসহ নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করতে বাধ্য হন।
তিন বছরে জরিপ হয়নি
করোনা সংকট দেশে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এ সময়ে কত লোক কাজ হারিয়েছেন কিংবা কোন শ্রেণির মানুষ বেশি চাকরি হারিয়েছেন, এসব নিয়ে পর্যাপ্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কাছেও নেই হালনাগাদ তথ্য। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় সুবিধাভোগী চিহ্নিত করে সঠিক উদ্যোগও নেওয়া যাচ্ছে না। তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কারণে সঠিকভাবে নীতি প্রণয়নও করা যায় না। গত তিন বছরে দেশে শ্রমশক্তি নিয়ে নতুন জরিপ করা হয়নি। এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরপর দুই বছর ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ করা হয়েছিল। তারপরেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্পের আওতায় পরপর দুই অর্থবছর জরিপটি করা হয়। প্রকল্পে বিদেশি সাহায্য আসা শেষ, প্রকল্পও বন্ধ। তা ছাড়া আরেকটি মুশকিলও হয়েছিল। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কর্মে নিয়োজিতদের সংখ্যা জানা যেত বলে একবার দেখা গেল, হঠাৎ বেকারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একবার মৌসুমি বেকারত্বের সেই তথ্য জানার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপের কাজ। কর্মসংস্থান কমে গেছে, তার চেয়ে তথ্য না জানাটাকেই হয়তো শ্রেয় মনে করছে বিবিএস।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করার পরামর্শ করা প্রয়োজন। প্রণোদনার অর্থ ঠিকমতো দেওয়া যাচ্ছে না কেন? সরকারিভাবে ৪ শতাংশ বেকার দেখানো হয়। কিন্তু প্রকৃত চিত্র এটি নয়। বিবিএসের দেখানো ৪ শতাংশ বেকারত্বের চিত্র আমাদের কোনো উপকারে আসছে না। কত লোক গরিব হয়ে গেছেন, এর কোনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। তথ্যÑউপাত্ত তৈরিতে বিবিএসকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
কাজ হারালেন কতজন?
২০২০ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন ‘ট্যাকলিং দ্য কভিড-১৯ ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট ক্রাইসিস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’-এ জানা যায়, বাংলাদেশের কৃষিখাতে কাজ হারানো তরুণদের হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশ, খুচরা বাণিজ্যে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কাজ হারানো তরুণদের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ খাতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা খাতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের নির্মাণ খাতে কাজ হারাতে পারে এমন তরুণের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প খাত বস্ত্র ও পোশাকে কাজ হারানো তরুণদের হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশের সাতটি খাতে কাজ হারাতে পারে এমন মোট তরুণের হার ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় কৃষিখাতে কাজ হারিয়েছেন ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ পুনরায় কাজে ফিরতে পারেননি। এছাড়া শিল্পখাতে প্রায় ৯৩ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যার ৩৭ লাখ শ্রমিকের তাদের কাজ হারানোর শিল্পে ফেরার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সেবা খাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬১ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।
করোনায় কর্মহীন জনগোষ্ঠী নিয়ে তাঁর গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ১ কোটি ৪৪ লাখ কর্মী কাজ হারিয়েছেন অর্থাৎ এখনও কাজে ফিরতে পারেননি। শুধু লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ মোট কর্মগোষ্ঠীর ৫৯ শতাংশ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছে সেবাখাতে।
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনষ্টিটিউট অব গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের তথ্য বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে মার্চে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ তাদের বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার সার্মথ্য তলানিতে নামছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে যাবে প্রায় ৪১ ভাগ মানুষ। ২০১৯ সালে এটা ছিল ২০.৫ ভাগ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য জিরো লেভেলে নামিয়ে এনে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও সুইডেন ওয়েজ ইন্ডিকেটর ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউআইএফ) অনানুষ্ঠানিক জরিপে জানা যায়, তৈরি পোশাক, চামড়া, নির্মাণ ও চা-এই চার খাতে ৮০ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি কমেছে। ৭৭ শতাংশ নারীর মজুরি পুরুষের তুলনায় কম। এ করোনা পরিস্থিতিতে ৬৬ শতাংশ শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। ২৩ শতাংশ সরকারের দেওয়া খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। আবার ২০ শতাংশ শ্রমিক ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এছাড়া ৯ শতাংশ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে রেশন পেয়েছেন।
৩ মে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অন্যতম জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালপ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি তিন জন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প ম্যাপড ইন বাংলাদেশ’র (এমআইবি) সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৫০ শতাংশের বেশি কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে, প্রায় ৫৬ শতাংশ কারখানা বিভিন্ন স্তরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এবং ১১ শতাংশ কারখানা অনেক বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৩ কর্মীর মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ৪৫০ জনের মতো চাকরি হারিয়েছেন, যা মোট শ্রমিকের প্রায় ১৪ শতাংশ।
সিপিডি এপ্রিল ২০২১-এ সমাপ্ত একটি জরিপে বলেছে, করোনায় দেশে দেড় কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
বিদেশফেরতদের কর্মসংস্থান
‘বাংলাদেশে লকডাউন প্রত্যাহারের পরের মাসগুলোতে ফিরে আসা অভিবাসীরা চাকরি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য এবং মনোসামাজিক সমস্যা কমেছিল এবং উন্নত হয়েছিল পরিবারিক পর্যায়ের খাদ্য সুরক্ষা। তবে একটা পর্যায়ে তাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায়। ঋণের বোঝাও বৃদ্ধি পায়। ঋণ পরিশোধে টাকা ধার করতে হয়। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমাতে হয়।’—আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২ : নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’— শীর্ষক গবেষণাটি বাংলাদেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসনপ্রবণ জেলায় দুই ধাপে পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে ১৫৮৪ অভিবাসী এতে অংশ নেন যার মধ্যে ৮৭৫ জন বিদেশ ফেরত ও ৭০৯ জন অভ্যন্তরীণ অভিবাসী।
প্রথম দফায় ২০২০ সালের জুনে ২৭৬৫ জনের ওপর গবেষণাটি করা হয়েছিল যেখানে দ্বিতীয় ধাপের সবাই ছিলেন। গবেষণার ফল বলছে, দ্বিতীয় ধাপে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ২০ ভাগ বেড়েছে প্রথম ধাপের চেয়ে। প্রথম ধাপের গবেষণায় এ হার ছিল ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে যা দাঁড়ায় প্রায় ৭১ শতাংশে।
বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জগুলো হলো-চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যা (৪৭ শতাংশ), অর্থনৈতিক সমস্যা (২৯ শতাংশ) এবং লোন পরিশোধের বোঝা (২১ শতাংশ)। দ্বিতীয় ধাপের জরিপে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ, যা আগের ধাপে ছিল ৭৪ শতাংশ।
মৃতপ্রায় গ্রামীণ শিল্প
কর্মসংস্থান সংকোচনের ধাক্কা লেগেছে গ্রামীণ ক্ষেত্রেও। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিমারির প্রকোপে মৃতপ্রায়। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রবল হারে কমেছে; স্বনিযুক্ত কর্মীরাও বেরোজগার হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে। শহরাঞ্চলও বাঁচে নি, সেখানেও বহু লোক কর্মহীন। বাস্তব কোনও পরিসংখ্যানের ধার ধারে না। মানুষের দুর্দশা দৃশ্যমান। গত বছর অতিমারির হামলায় দেশের অর্থব্যবস্থা যতোটা বিপর্যস্ত হয়েছিলো, এক বছরের যাবতীয় অভিজ্ঞতাসহ এই দফাতেও বিপর্যয়ের পরিমাণ তার তুলনায় কম নয়। তাকে ‘দুর্ভাগ্য’ বললে ভাগ্যের প্রতি অকারণ দোষারোপ করা হয়। সরকার অতিমারির বছর হতে কোনো শিক্ষা নিতে পারেনি। আমরা যারা করোনার অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। তার ছিঁটেফোটা চিন্তাও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের নেই। তাদের যদি কিছুটা দুঃখবোধ থেকে থাকে, তবে তা বাজার হারানোর। এক্ষত্রে সৎ উদ্যোক্তা ও শিল্পপতিরা কমজোরি হলেও ফাটকা ব্যবসায়ী, ঋণখেলাপি ও মাফিয়া অর্থনীতি আরো সবল হয়েছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমি মডেলিং (সানেম) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক যৌথ জরিপে জানা যায়, করোনাকালে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ৬৯ শতাংশই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পায়নি।
কর্মসংস্থান সংকটে নারী
কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তাদের ১০ জনের ৯ জন কোভিড-১৯ মহামারিতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে অনানুষ্ঠানিক খাতে ১০ জনের মধ্যে ৮ জন নারী কর্মী এ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা-কর্মীদের অনেকে সঞ্চয় ভেঙে চলেছেন। অনলাইন ব্যবসায়ী, পোশাকশিল্প কারখানা এবং এ-সংক্রান্ত সামগ্রীর উদ্যোক্তারা, নির্মাণশ্রমিক ও ভাসমান হকাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বরাবরই নারীরা অনেকটা পিছিয়ে। করোনাকালে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক কর্মজীবী নারী। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশে নারীদের সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিলো তৈরি পোশাক খাত, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সেবা খাত, আবাসন, কৃষিখাত এবং গৃহকর্মী হিসেবে। করোনা নারীদের এই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো ওলট-পালট করে দিয়েছে। করোনাকালে নারীদের প্রতি অর্থনৈতিক চাপ ও পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে ব্যাপক মাত্রায়।
ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়, করোনায় নারী নেতৃত্বাধীন পরিবারের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ। মে মাসে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থাটির গবেষণায় বলা হয়, মহামারিতে নারীপ্রধান পরিবারের ৫৭ শতাংশেরই কোনো উপার্জন নেই। এছাড়া স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস) এবং জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্সের (গ্যাড অ্যালায়েন্স) তথ্যানুযায়ী লকডাউনের সময় থেকে ৮০ শতাংশ গ্রামীণ ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা তাদের চলমান ব্যবসা বা উদ্যোগ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। এমনকি করোনায় নারীদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেড়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী মহামারিতে পোশাকখাতের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। বেসরকারি খাতে কমর্রত নারী কর্মকর্তাদের কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন। কারও কারও বেতন কমানো হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের (ডিআইএফই) দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ১৫ হাজার ৯৬৫টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ শ্রমিক। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ১ হাজার ৯১৫টি। তৈরি পোশাক খাতে দেশে বর্তমানে ৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এর ৮০ শতাংশই নারী। বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগও বলছে, করোনার কারণে সারা দেশের গার্মেন্ট কারখানা থেকে ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন, যার ৭০ শতাংশ নারী। কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশে ফিরে আসা প্রবাসী নারী শ্রমিকরাও। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি নারী।
কর্মসংস্থান কমিশন গঠন করা যেতে পারে
যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথম ধাপ; সমস্যাটি যে আছে, তা স্বীকার করতে হয়। কিন্তু সরকার সমস্যার কথাটি স্বীকার করতেই রাজি নয়। তাদের ব্যর্থতার দুইটি দিক। এক দিকে, দেশ-বিদেশের কার্যত সব বিশেষজ্ঞই যেখানে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখানে গত বছর জুড়ে রাঘবোয়ালদের ব্যাংকের ঋণকে সহজলভ্য করবার চেষ্টা করে গেলো। সাধারণ মানুষকে ‘অকারণে’ টাকা দিতে হবে, এই কথাটি তারা সম্ভবত হজম করতে পারেনি। ফলে বাজারে চাহিদা ফেরে নি। অর্থব্যবস্থায় চাহিদার অভাবটি করোনা আগে থেকে চলছিলো, তা অর্থব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিলো। অন্যদিকে, ব্যবসা টালমাটাল হলেই যেন কর্মীদের উপর কোপ না পড়ে, তা নিশ্চিত করবার বিভিন্ন উপায় বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়েছিলো। সরকারও কর্মীদের বেতনের সিংহভাগ বহন করেছিলো, যাতে তাদের চাকরি ছাঁটাই না হয়।
একটি কথা স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। যতোগুলো বিপন্নতার সম্মুখীন, তার কার্যত সবগুলোর মূলে রয়েছে একটিই কারণ—নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কী কর্তব্য, সে বিষয়ে দেশের সরকার গা-ছাড়া। তারা ছোটো লাভ-ক্ষতির অংকের বাহিরে দেখতে অক্ষম। কিন্তু, তারাই যখন ক্ষমতায়, তখন তাদের কর্তব্যগুলোর কথা স্মরণ না করালেও নয়। এই মুহূর্তে কর্তব্য মানুষের বোঝা লাঘব করা। যারা কাজ খোয়াচ্ছেন, এই মুহূর্তে তাদের জন্য বেকার ভাতার ব্যবস্থা করবার কথা ভাবা যেতে পারে।
করোনায় বিদ্যমান শ্রমবাজারের সংকট নিয়ে একটি কর্মসংস্থান কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ওই কমিশন বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঢেলে সাজানো এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় উদ্বেগ হলো—করোনা পরবর্তী বিনিয়োগ পরিবেশ স্বাভাবিক না হলে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে না। তাই সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া গ্রামীণ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সহায়তা দিলে বেশি কর্মসংস্থান হবে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কী হবে
২০২১ সাল অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বছর। তাতে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা আছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে শ্রমশক্তি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে, আর কর্মসংস্থানও বাড়বে একই হারে। অর্থাৎ শ্রমশক্তির যত প্রবৃদ্ধি, ততই কর্মসংস্থান। আর এই সময়ে বিদেশে চাকরির সুযোগ হবে দশমিক ৫ শতাংশ হারে, আর অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
ধরে নেওয়া হয়, দেশে প্রতিবছর ২১ লাখ মানুষ নতুন করে কর্মসংস্থানের বাজারে প্রবেশ করেন। নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাই কাজ পাবেন। তাদের মধ্যে একটি অংশ দেশের ভেতরে চাকরি করবেন, আরেকটি অংশ জনশক্তি হিসেবে অন্য দেশে রপ্তানি হবেন, আর বাকিরা নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নেবেন। সুতরাং এখন যে ২৭ লাখ বেকার, তা আরও কমে আসবে। যদিও প্রবৃদ্ধি বাড়লেই কর্মসংস্থান বাড়বেÑএমনটি দেখা যাচ্ছে না বাংলাদেশে।
প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নমুখী বাস্তবসম্মত রূপরেখা দরকার
যুবকরা কাজ করতে চায়, আয় করতে চায়, জীবনে দাঁড়াতে চায়। কাজ না পাওয়া থেকে যে হতাশা তৈরি হবে তা এই যুবকদের সৃজনশীলতা, কর্মউদ্যোগ, ভালো কিছু করার ইচ্ছা, সমাজের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা, প্রতিভা, সততা সব নষ্ট করে দেবে। এই ব্যাপক সংখ্যক জনশক্তিকে কাজ দিতে পারবো না তখন এই শক্তি পরিণত হবে আপদে। হতাশা থেকেই যুব শক্তি হয়ে যেতে পারে পথচ্যুত ও মাদকাসক্ত।
এই যুবকদের কাজের পরিবেশের মধ্যে রাখার জন্য হতাশা থেকে মুক্তির জন্য কী করতে পারি? ধনী দেশগুলো ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসছে। যুবকদের কাজের সুযোগ, শ্রমবাজার, বেকারত্ব, অভিবাসী শ্রমিক, নারী শ্রমিক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পেশাগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। যুবকদের ঋণ মওকুফ করতে হবে, সুদবিহীন ঋণ দিতে হবে, এবং বেশি বেশি কাজে নিয়োগ দিতে হবে। করোনার প্রভাবে আগামীতে কর্মসংস্থানের প্যাটার্নও পাল্টে যাবে। যেখানে গুরুত্ব বাড়বে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থানের।
জাতীয় বাজেটে কর্মসংস্থান নামে কোনো খাত নেই। কর্মসংস্থানের সংকট সমাধানের জন্য ঘুষছাড়া চাকরি ও সহজ শর্তে ঋণের নিশ্চয়তাসহ আসন্ন বাজেটের কর্মসংস্থান খাতে পৃথক বরাদ্দ দেওয়ার আহবান রাখছি। আসন্ন বাজেটে কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়নে বাস্তবসম্মত রূপরেখা দেখতে চাই। আমরা যদি এখনই যুবকদের অবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ও দ্রুত উদ্যোগ না নিতে পারি, তাহলে এই ভাইরাসের দায় আমাদের দশক ধরে বয়ে বেড়াতে হবে।
লেখক : সহকারী সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় কমিটি