Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: লীলা নাগ ও সুষমা সেনগুপ্ত

লাবণী মণ্ডল
১ জুলাই ২০২১ ১৯:০৯

১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই থেকে এ বিদ্যাপীঠ নানা ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট-গাঁথাতেই যেন হাজার স্মৃতি। অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাক্ষী বটতলা, মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, শহিদ মিনার। এমন কোনো জায়গা নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের, যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছোঁয়া নেই। পূর্বসূরীদের জীবন আর ইতিহাস পড়লে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পূর্ব বাংলার মানুষ এ পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েন। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইন বাস্তবায়নের ফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। তাদের মধ্যে নারী ছিলেন মাত্র একজন।

কিন্তু ইতিহাসের অতলেও লুকিয়ে থাকে ইতিহাস। সেই ইতিহাসের গভীরেই হারিয়ে যাওয়া একটি নাম সুষমা সেনগুপ্তও, ‍যিনি ছিলেন লীলা নাগের সঙ্গে। এটি আমাদের অজানা ইতিহাস। কিন্তু যা কিছু অজানা, যা ইতিহাসে নেই, সেটি খুঁজে বের করাই তো অনুসন্ধিৎসুদের কাজ, যেটি আমাদের এখানে খুব একটা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেরই এই নামটি জানার কথা। কিন্তু কতটুকু জানেন? লীলা নাগের যে পরিচিতি, তা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে। কিন্তু লীলা নাগ যে একজন বিপ্লবী এবং সংগ্রামী জীবনের অধিকারী ছিলেন, সে কথা জানেন ক’জন? সাংবাদিকতা, জনহিতৈষী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ সক্রিয় কর্মী ছিলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী হিসেবে পর্যন্ত কাজ করেছেন— এই ইতিহাস জানেন ক’জন? ওই সময়ের ইতিহাস যারা জানেন, তারা বুঝতে পারবেন একজন নারীর এরকম একটি জীবন কাটানো কতটা দুঃসাধ্য কাজ ছিল। কিন্তু সেটি করে দেখিয়েছিলেন লীলা নাগ। কিন্তু আজ আমাদের ছাত্রীদের অবস্থা কী?

লীলা নাগের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন স্কুলে। ১৯১৯ সালে ২০ টাকা বৃত্তি পেয়ে আইএ পাস করেন। এরপর ১৯২১ সালে বেথুন কলেজ থেকেই বিএ পাস করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ‘পদ্মাবতী’ স্বর্ণপদক লাভ করেন। তখন ঢাবিতে সহশিক্ষার প্রচলনের চিন্তাভাবনাই ছিল না। কিন্তু লীলা নাগের জেদ, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়বেন। মেয়েরা কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না— এই মর্মে আচার্য (বাংলার গভর্নর) ও উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ঢাবিতে পড়ার আবেদন তুলে ধরেন। সহশিক্ষার সুযোগ না থাকলেও লীলা নাগের মেধা ও আকাঙ্ক্ষা-আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে উপাচার্য ড. পি জে হার্টস তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বিশেষ অনুমতি দেন। ১৯২১ সালেই ঢাবি’র ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমএ) শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। তার ভর্তি ক্রমিক নম্বর ছিল ২৫। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী।

শিক্ষা জীবন থেকেই লীলা নাগের মধ্যে বিপ্লবী চেতনার স্ফূরণ ঘটেছিল। কলেজে অধ্যয়নের সময়ে বড়লাটের পত্নীকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানানোর প্রথা বাতিলের আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আবার বিএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষার অধিকারও প্রতিষ্ঠা করেন তিনিই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন একমাত্র ছাত্রী হিসেবে লীলা নাগের কথা সবাই জানলেও ওই সময় আরও একজন ছাত্রী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ১৯২১-২২ শিক্ষাবর্ষেই ঢাবির অর্থনীতি বিভাগে বিএ (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হন সেই ছাত্রী, নাম সুষমা সেনগুপ্ত। তিনি ছিলেন সেই সময় ঢাবির আইনের অধ্যাপক ও জগন্নাথ হলের প্রথম প্রাধ্যক্ষ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের মেয়ে। সুষমা সেনগুপ্তের নিজস্ব স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ‘আইএ পড়তে পড়তে আমার বিয়ে হয়ে গেল। ঢাকায় ইউনিভার্সিটি হলো। বিএ পড়তে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। সে বছর লীলাও এমএ ক্লাসে ভর্তি হলো। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আমরা দু’জন প্রথম ছাত্রী। এক কমন রুমে বসতাম দু’জন। ক্লাসে যাবার সময় অধ্যাপক আমাদের ডেকে নিয়ে যেতেন।’ অর্থাৎ ঢাবি’র প্রথম ছাত্রীর তকমা লীলা নাগ ও সুষমা সেনগুপ্ত দু’জনকেই দেওয়া যায় বৈকি।

লীলা নাগ কর্মজীবনে মহিয়সী ছিলেন, বিপ্লবী হিসেবেও তিনি পরিচিত। অন্যদিকে সুষমা সেনগুপ্ত একজন সাধারণ ছাত্রী ছিলেন। বিএ পাস করার পর তিনি আর পড়ালেখা করেছেন কি না, তাও জানা যায় না। তাই লীলা নাগ এককভাবে বারবার এসেছেন আলোচনায়, লাভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রীর মর্যাদাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, এর পরের তিন শিক্ষাবর্ষে আর কোনো ছাত্রী ভর্তি হননি। এরপর ১৯২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি’র তৃতীয় ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন ফজিলাতুন্নেসা। এরপর ১৯২৭-২৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্রীরা আসতে শুরু করেন। ১৯২১ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৭১১ জন ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

গৌরবজ্জ্বল অতীত, হতাশাময় বর্তমান

১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদের পদচারণায় ধন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন। প্রতিষ্ঠালগ্নে এখানে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ সি টার্নার, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, জিএইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিএ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিরা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা অগ্রগামী ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রছাত্রী শহিদ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। এর পরপরই ঢাকায় পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। সে আন্দোলনগুলোতও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশভাগের ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনেও যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তাতেও অন্যতম নিয়ামক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো স্মৃতির কথা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কী? খুবই লজ্জাজনক এবং হতাশাজনক। এরকম পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা কী? বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে এখন গুণ্ডামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। নারী নির্যাতন-নিপীড়ন-ধর্ষণের মদতদাতাও আবার ওইসব নামধারী ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত ছাত্ররাই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের অবস্থাই যদি এরকম নাজুক হয়, তাহলে আর প্রত্যাশার জায়গা থাকে কী?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় একটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র। নতুন প্রজন্ম তৈরি করা, সেই প্রজন্মের সঙ্গে নিত্য নতুন জ্ঞান, গবেষণার সংযোগ স্থাপনের জন্যই তো বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তখনই সফল হতে পারে, যখন সেখানে জ্ঞান উৎপাদন হয়, চর্চা হয়, গবেষণা-শিক্ষা প্রাধান্য পায়। আমাদের দেশে সমস্যাটা হলো— বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার যে চোখে দেখে, সেখানে জ্ঞানচর্চা বা গবেষণার গুরুত্ব নেই। সেখানে গুরুত্ব পায় একটি অধীনস্ত এবং অনুগত জনগোষ্ঠী তৈরির বিষয়টি। আর অনুগত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে গেলে সেখানে শিক্ষকদের মেরুদণ্ডহীন করতে হয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অনুগত গোষ্ঠী তৈরি করতে হয়। যেকোনো ভিন্ন চিন্তা বা নতুন চিন্তাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে হয়। এগুলোর মধ্য থেকেই জন্ম নেয় দুর্নীতি, ভুল নিয়োগ— যাদের শিক্ষক হওয়ার কথা না, তারা শিক্ষক হয়। এর কারণে সমাজের প্রত্যাশা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূরে।’

তিনি আরও বলছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ আছেন, যাদের মেধা ও যোগ্যতা আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এখানে গবেষণায় গুরুত্ব ও যথেষ্ট বরাদ্দ না থাকা এবং সন্ত্রাসী ও অনুগত বাহিনীর আধিপত্যের ফলে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশই তৈরি হয়নি। প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, সরকার প্রশাসনকে বাছাই করে এমন সব লোকদের দিয়ে, যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম নয় কিংবা যারা দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করবে। এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠানে কিভাবে মুক্তচিন্তার চর্চা হবে, কিভাবে শিক্ষা-গবেষণার চর্চা হবে, কিভাবে নতুন চিন্তার যোগ হবে! এই সমস্যা সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরও বেশি বেদনাদায়ক। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতে পারেনি— এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘এ কথা বলার আগে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ বা সরকার এটি কখনো চেয়েছে কি না! এর সঙ্গে বাজেটের বিষয় যুক্ত, পরিকল্পনা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি যুক্ত। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুখে মুখে শ্রদ্ধা-সম্মান ছাড়া কার্যত এ ব্যাপারে কখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি আমাদের সমাজ বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র। এর প্রমাণ গবেষণা কার্যক্রমের অনুপস্থিতি। সারাবিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে কাজ হয়, তার কোনো ধরনের কাঠামো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। গবেষণায় ঢুকতে হলে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে। সেই পরিবর্তনের দিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কখনো আকাঙ্ক্ষা দেখায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না, বিশ্ববিদ্যালয় পারে না— এসব একদম বানোয়াট কথা। ওই ধরনের ব্যাপারের মধ্যে আমরা আসলে কখনোই যাইনি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অক্সফোর্ডে যে গবেষণা হচ্ছে, তা যদি কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাশা করেন, তা হবে ইতর সামাজিক প্রত্যাশা। যেভাবে অক্সফোর্ড কাজ করে, যেভাবে গবেষণা প্রকল্প নেয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে বা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে, বা বাজেট পায়; সেইসঙ্গে পিএইচডি গবেষণা, মাস্টার্সে গবেষণা, শিক্ষকদের প্রকল্পে গবেষণা— এই লম্বা প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র বা পুঁজিপতিরা কখনো ভাবেনি। কখনো খবর নেয়নি। এখন হঠাৎ করেই একটি আকাঙ্ক্ষা জেগেছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিছু করবে। এর মানে তারা গবেষণা বলতে কিছু জানে না।’

সমাজ-রাষ্ট্রের যে অবস্থা থাকে, তার ছাপই পুরো সমাজব্যবস্থার ওপর পড়ে। বর্তমান চরম পুঁজিবাদী, অগণতান্ত্রিক একটি সমাজব্যবস্থায় শুধু ছাত্রসমাজই সংকটে আছে তা নয়, সব ধরনের শ্রেণিপেশার মানুষকেই সংকটকাল কাটাতে হচ্ছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবর্ষে একটি কথাতেই জোর দিতে হবে, সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হলে, সুন্দর-সাম্য-ভালোবাসার সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: কবি লেখক

সারাবাংলা/টিআর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লীলা নাগ শতবর্ষ সুষমা সেনগুপ্ত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর