Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপত্তা আইনের অ-নিরাপত্তায় সাংবাদিকরা

জুনাইদ আল হাবিব
১৫ জুলাই ২০২১ ২০:১৭

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছে নাগরিকদের ডিজিটাল সুরক্ষার জন্য। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে সাইবার অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের যে কোন একজন নাগরিকের অধিকার আছে, তার আইনের আশ্রয় নেয়া। যে আইনের মাধ্যমে ওই নাগরিকের মানহানি, সামাজিক মর্যাদা রক্ষা হয়। সে জন্য এমন একটি ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শুরু থেকেই এ আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আইন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের মাঝেও। আইনটি প্রয়োগের শুরু থেকেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার, হয়রানি, স্বাধীন সাংবাদিকতার গলা চেপে ধরার মতো ঘটনা কেবলই গণমাধ্যমকর্মীদের নয়, পুরো দেশবাসীকে আহত করেছেন। দাবি উঠেছিল, এ আইনটি বাতিলের।

গত ২১শে এপ্রিল খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সম্মানহানির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান আবু তৈয়ব মুন্সিকে। অভিযোগ আনা হয়, ফেসবুকে এক পোস্টে ওই সাংবাদিক তার মানহানি ঘটিয়েছে। একই মেয়রের মামলায় এ মাসের শুরুতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রামপাল প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ সবুর রানাকে। তাও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন!

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের বাক-স্বাধীনতা হননের মাত্রা অহরহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতেই চাপা পড়ছে রাঘব বোয়ালদের দুর্নীতি। এ আইনের কারণে অনেক সাংবাদিকই ঘটনার সত্য চিত্র উদঘাটনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োগ করতে পারছেন না।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন রিপোর্টার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন প্রয়োগ করা হয়, তখন এক রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজেই এ আইনের বিরোধিতা করেছেন। অথচ, তার বিরুদ্ধে নিউজ প্রচারের পর তিনি আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। মরিয়া হয়ে পড়েছেন আমার কণ্ঠস্বর দমানোর।

সম্প্রতি যে ঘটনাটি মানুষের মাঝে আলোড়ন তুলেছিল সেটি হচ্ছে, ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের ৩০০টাকার খাবার দেয়া হচ্ছে মাত্র ৭০টাকায়। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে ১১জুলাই রাতে। যদিও আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে। বিষয়টি এখন দেশে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কথা হচ্ছে, যে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী কোন তদন্ত করা হয়েছিল? উল্টো কেন সাংবাদিককে গ্রেফতার, হয়রানি? সেখানে সাংবাদিক জনস্বার্থেই নিউজটি করেছে। যদি সাংবাদিকের প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হতো, তবে উপকার হতো দেশেরই। এভাবে সাংবাদিকদের মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার করে কী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন সম্ভব?

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতি নিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যে প্রতিবেদনগুলো করেছেন, তার জন্য সচিবালয়ে আটকে রেখে ওই সাংবাদিককে হেনস্থা, আটকে রাখার মতো ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবেও আলোড়ন তুলেছিল। পরে কী করা হলো, ওই সাংবাদিককে বানোয়াট একটি ধারায় মামলা দেয়া হয়েছিল। যেখানে এত নির্যাতন, ওই সাংবাদিকতো সেখানে আইনের সহযোগিতা পাবার কথা। অথচ, সেটা না হয়ে হয়েছে তার ব্যতিক্রম। ওই সাংবাদিককে থানায় আটক, মামলা, ঘটেছ আরো অনেক ঘটনা। অথচ বিষয়টা হতে পারত, দুর্নীতির অভিযোগে রোজিনা ইসলামের করা রিপোর্টটি অনুসন্ধান করে স্বাস্থ্য খাতের আবর্জনা দূর করা। কিন্তু তা হয়নি। তবে দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের প্রতিবাদের মুখে রোজিনা ইসলামকে জামিন দেয় আদালত।

দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি – জুন ২০২১) দেশে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশ গণমাধ্যম পরিস্থিতি শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে তারা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ৩৬টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলা দায়ের হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এই সব মামলায় আসামি করা হয়েছে কমপক্ষে ৮০ জন গণমাধ্যমকর্মীকে।

সবশেষ কথা হচ্ছে, দেশে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণোয়ন করতে হবে। এতে দেশের মানুষেরই কল্যাণ হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর