বিধিনিষিধে শিথিলের পাশাপাশি দরকার ভ্যাকসিন কার্যক্রমে জোর
১ আগস্ট ২০২১ ০১:৫৭
রোববার (১ আগস্ট) থেকে রফতানিমুখী সকল শিল্প ও কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটা ভালো পদক্ষেপ। গণপরিবহনও একই সঙ্গে খুলে দেওয়া আবশ্যক, কারণ হাইওয়েতে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট পাচ্ছে। আমরা যারা মাঠে-রাস্তায় বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছি, তারা দেখছি যে, লোকজনের মাঝে ক্ষুধার ভয় বেশি, করোনায় মৃত্যু ভয়ের চাইতেও বেশি।
কঠোর বিধিনিষেধের বিকল্প খুঁজতে হবে আমাদের, অথবা এটাকে আরও কার্যকর করতে হবে— যদিও এসব কতটুকু সম্ভব হবে জানি না। কঠোর বিধিনিষেধের বিকল্প হতে পারে গণভ্যাকসিন কার্যক্রম। জনসাধারণের জন্য যেন ভ্যাকসিন গ্রহণের উপায় সহজ হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো পার্সোনাল ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট/জন্মসনদ দেখিয়ে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্প কারখানার শ্রমিকদের আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দুই ডোজ ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং এই চ্যালেঞ্জটি সরকারকে নিতে হবে।
হোটেল-রেস্তরাঁগুলো অর্ডারে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে ব্যবসা জারি রাখুক। কারণ এতে তাদের ব্যবসা খুব একটা মন্দ হচ্ছে না। রাস্তায় দায়িত্ব পালন করার সময় অনেক রেস্তরাঁয় কথা বলেছি, তারা এটাতেই সন্তুষ্ট। শপিংমলগুলো এলাকাভেদে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া উচিত, এবং এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনেক অনেক কঠোর হতে হবে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ। এটা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে অনেক বছর। ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুমে ফেরাতে হবে। কঠোর বিধিনিষেধ থেকে বের হয়ে বিভাগ/জেলাওয়ারি বিধিনিষেধ/লকডাউন/শাটডাউন দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে করোনার প্রকোপ কম; তারা এমনিতেই শহরের তুলনায় লেখাপড়ায় পিছিয়ে; সর্বাত্মক লকডাউন দিলে ব্যাপারটা তাদের জন্য খুব ক্ষতি হবে। যে সকল জেলায় করোনার প্রকোপ কম সে সকল জেলায় অবিলম্বে সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সম্ভব হলে গণ ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করে খুলে দিতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে হবে।
লকডাউন থাকুক না থাকুক গণজমায়েতের বিষয়ে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতেই হবে। এটা আগামী দুই বছর পর্যন্ত মানতে হবে। সাংস্কৃতিক-ধর্মীয়-রাজনৈতিক-খেলাধুলা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করতে হবে। যেসকল জেলায় করোনার সংক্রমণ বেশি, সেসকল জেলায় দরকার হলে কারফিউ এর মতো কঠোর অবস্থান নিতে হবে প্রশাসনকে। ধর্মীয় অনুভূতি আমাদের সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমি মনে করি মসজিদের জমায়েতগুলোও সংকুচিত করা উচিত।
যাদের বয়স পঞ্চাশ কিংবা তার বেশি এবং যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে, তাদের জন্য জনসমাগম নিষিদ্ধ করা উচিত। যারা চাকরি করছে তাদের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম নিশ্চিত করা উচিত। আর যে বাসায় বয়স্ক মানুষ আছে সে বাসায় তাদের আলাদা করে রাখতে হবে যেন বাইরের কারও সঙ্গে বা কোনোকিছুর সংস্পর্শে তারা না আসতে পারেন।
লকডাউন একটা সময় কার্যকর ছিল, কিন্তু এখন এটা সরাসরি মানুষের জীবনমান ও অর্থনীতিকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। এখন মানুষকে কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে যাওয়াটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় যখন একজন রিকশাওয়ালা বলে, “করোনায় মরার আগে ভাতে মরবো স্যার” তখন আসলেই কিছু বলার থাকে না। এই মানুষগুলোর জন্য ত্রাণের ব্যবস্থাও করতে হবে। ৩৩৩ এর সহায়তা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
ভাইরাসের সংক্রমণ গ্রাফের শীর্ষে সবসময়ই সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হয়। ধারণা করছি বাংলাদেশ পিকেই আছে এবং এই গ্রাফও নিম্নমুখী হবে। আমাদের শুধু দরকার একটুখানি সচেতনতা এবং অনেক অনেক সহমর্মীতা।
লেখক: সরকারি কর্মকর্তা
সারাবাংলা/আইই