তেল গ্যাস রক্ষায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
৯ আগস্ট ২০২১ ২২:৫৮
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই নিয়েছিলেন। জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। আর সেটি করতে গিয়ে বিদেশি ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এসব উদ্যোগ আর পদক্ষেপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে গ্যাস সম্পদ আমাদের দিয়ে গেছেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া গ্যাস সম্পদ রফতানি করতে দেননি বলেই ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থে নেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই সিদ্ধান্তগুলোও ষড়যন্ত্রের অন্যতম কারণ ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশি শোষণ চিরতরে বন্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই তথ্য বঙ্গবন্ধুর অজানা ছিল না যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিশ্বব্যাপী কিছু জাতীয়তাবাদী নেতা নিজেদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রাকৃতিক ও জ্বালানি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ হত্যার শিকারও হয়েছিলেন। তা জানা সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক শক্তি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের ওপর প্রদত্ত ইজারাভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে এ সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এ ধরনের বিধান সমকালীন বিশ্বের খুব কম দেশই তাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছিল। জাতির পিতা প্রবর্তিত এই সাংবিধানিক বিধানের আলোকে পরবর্তী সময়ে তিনিই নানামুখী আইনি, নীতিগত, নির্বাহী ও রেগুলেটরি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি আত্মনির্ভরশীল ও শক্তিশালী জ্বালানি খাত তৈরি করে গিয়েছিলেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধু সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধু তার দৃঢ় মনোবল, মেধা, সাহস ও সুকৌশলের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ইন্টারন্যাশনালকে পাঁচটি বড় গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, কৈলাসটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র) মাত্র ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকা। এটি কেবল আর্থিক মূল্য। এর সার্বিক মূল্যমান তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। কেননা স্বাধীন বাংলাদেশে গত চার দশকে যতটুকু শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার মূল চালিকাশক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর নামমাত্র মূল্যে কেনা সেই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তার সবটুকুই বঙ্গবন্ধুর কিনে রেখে যাওয়া সেই গ্যাস সম্পদের কারণেই। আজ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতসহ যে কয়েকটি খাতে আমরা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছি, এর মূল কারণই ছিল জাতির পিতা দেওয়া গ্যাস সম্পদ।
জাতির পিতার পরে শেখ হাসিনাই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক, যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে জাতির পিতার এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশ আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর