যুবরাই বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি
১২ আগস্ট ২০২১ ১৭:৪৮
প্রতি বছর ১২ আগস্ট যুব দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ‘যুব’র সংজ্ঞা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। যুব হচ্ছে জীবনের একটা পর্যায়, যাকে সাধারণত কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তরণের সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় ব্যক্তি পর্যায়ে বাড়তি কিছু সুবিধা ও অধিকার ভোগ করলেও তারা পূর্ণ বয়সের সমমর্যাদা পান না। জাতিসংঘের মতে, যুব-এর সময়কাল ১৫ থেকে ২৪ বছর। আর বাংলাদেশ জাতীয় যুব নীতি অনুযায়ী এটি ১৮ থেকে ৩৫ বছর।
যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করি না কেন, যুবকদের তাদের অধিকার, দায়িত্ব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে একটি শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ। দেশের উন্নয়নে যাতে জনসংখ্যার এই বিশাল অংশটি ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
যে কোনও দেশের যুব সমাজ সেই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। মনে রাখতে হবে বয়স্ক ব্যক্তিরা ইতিহাস লেখেন আর যুবকরা ইতিহাস তৈরি করে। যুবসমাজই একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে যুব সমাজের এই অবদানের জন্য প্রতি বছর ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয়।
২০০০ সালে প্রথম উদযাপিত হয়েছিল এই যুব দিবস। আন্তর্জাতিক যুব দিবসটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সুপারিশের পরে ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল। যুব দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যুবদের অবদান ভোলার মত নয়। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে এই যুব সমাজ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের যোগদানে আন্দোলন হয়েছিল আরও বেগবান। বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে তাদের ভুমিকাও ছিলো মুখ্য। সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধেও তারা চিতাবাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
যুবসমাজ একটি সমাজের চালিকাশক্তি। বাঙালি বীরের জাতি। আমরা মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে দেই নি। স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছি। আর এসব কর্মকাণ্ডে সবার আগে প্রাণ দিয়েছে তরুণ ও যুবসমাজ। অন্যায়ের প্রশ্নে তারা ছিলো আপসহীন। বাংলাদেশের যুবসমাজের বর্তমান অবস্থা হলো মাঝি ছাড়া নৌকার মতই। এখন বিদেশি সংস্কৃতির দিকে অধিকাংশ আকৃষ্ট হয়েছে। তাদের সব কিছুই সব সমাজ অনুসরণ করতেছে। এতে করে আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের যুব সমাজ শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকারই কথা। কিন্তু এখন তার উল্টোটা হচ্ছে। যুব সমাজকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য আকাশ সংস্কৃতি, রগরগে ছবি, পর্নোগ্রাফি, রাজনৈতিক দূরাবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা দায়ী অনেকাংশে।
তাই যুব সমাজকেই তরুণ প্রজন্মের রক্ষা করার জন্য কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সরকারি কাজের সাথে পরিচিত করতে হবে,এবং তাদের জন্য ইন্টার্নশিপ এর আয়োজন করতে হবে। করোনার কারণে যেন টেকসই উন্নয়নে বাধা না আসে তাই যুবকদের জন্য গ্রামে গ্রামে আত্মকর্মসংস্থান এর ব্যাবস্থা করতে হবে। যুবসমাজকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
আর তথ্যপ্রযুক্তি তরুণ প্রজন্মের কাজের সুযোগ করে দিতে পারে। তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিংয়ের আওতায় আনতে হবে। তাহলে একদিন দেশ উন্নতির চরম শিকড়ে পৌঁছাবে। আর পিছনে ফিরতে হবে না। এর জন্য তাদের প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করতে হবে। যদি দেশের ৫ কোটি তরুণ পিছিয়ে থাকে, তাহলে দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে। তাই এসব তরুণকে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারন আমাদের দেশের যুব সমাজ অনেক বেশি সৃজনশীল। বিশেষ করে অনেক তরুণ বিদেশে কাজ করে সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই তরুণ সমাজের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।
কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবায় যৌন ও প্রজনস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। যৌন সহিংসতা ও মাদক দূরীভূত করতে হবে। বিশ্বের মানচিত্রে ছোট ছোট দেশ যদি খেলাধুলায় যাদু দেখাতে পারে বাংলাদেশ কেন পাবে না। যুব সমাজের একাংশ আজ যে অবক্ষয়ের পথ ধরে এগিয়ে চলছে, তা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ যে কী হবে সে কথা বলা সত্যিই কঠিন। যুবকরাই আমাদের সম্পদ। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এদের দিকে আরও পরিকল্পিত দৃষ্টি দিতে হবে।
এ ছাড়াও তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের পাশাপাশি পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, আইনি সহায়তা এবং বাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে, এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যাংক ঋণ পাবার শর্ত ও সুদ হার সহজ করতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে আমাদের যুবসমাজ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ভুমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/আরএফ