Saturday 13 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নের সেতুতে আর না লাগুক আঘাত

অনন্য প্রতীক রাউত
১৪ আগস্ট ২০২১ ১৭:৩১

দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার চূড়ান্ত প্রতিফলন পদ্মাসেতু। ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদীপথের বিশালতা এবং অতীত সময়ে সেগুলোকে কেন্দ্র করে যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দক্ষিণবঙ্গের মানুষ পিছিয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যাত্রা শুরু হয়। দক্ষিণবঙ্গের কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন শুরু হয়। বিশাল কর্মযজ্ঞে এ সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবতা। অভ্যন্তরীণ নানা ষড়যন্ত্র ও বিশ্বব্যাংকের অসহযোগিতার ফলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারত স্বপ্নের সেতু। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব ও পিতা মুজিবের দেখানো পথে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, স্বপ্নকে বাস্তব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাময় পদ্মাসেতুতে বারবার ফেরি ধাক্কা বা যে কোনো আঘাত লাগা নিশ্চয়ই উদ্বেগজনক৷ হোক সেটা অনিচ্ছাকৃত ভুল কিংবা ষড়যন্ত্র।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে, পদ্মাসেতু প্রচণ্ড শক্তিশালী। পদ্মাসেতুর নির্মাণ স্থাপত্যবিদ্যাকে নতুনভাবে সমৃদ্ধ করেছে। নজিরবিহীন এ সেতু নির্মাণে বহু সমস্যার মুখে পড়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা যা এর আগে তেমন নজির নেই। সেইসব সমস্যা সমাধান করে বাস্তবায়ন হয়েছে এ সেতু। পদ্মার গতিময়তা এবং সুনির্দিষ্ট গতিপথ বা ধ্বংসলীলার নির্দিষ্ট পথ না থাকায় উত্তাল নদীর বুকে সেতু নির্মাণ সব সময়ই জটিল ছিল। অনেকের মতে, স্থাপত্যবিদ্যার ইতিহাসে পদ্মাসেতু নতুন এক সংযোজনা। আবার এ সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তারও বড় উদাহরণ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ যে কতটা বদলে গেছে, তা এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই বুঝে গেছে বিশ্ব।

ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, পদ্মাসেতু এতটাই শক্তিশালী যে হাজার টনের জাহাজ এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প একইসঙ্গে সহ্য করতে সক্ষম। অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে অনেকের কাছেই, কেননা বাংলাদেশে এত বৃহৎ অবকাঠামো এর আগে কখনো করা হয়নি। স্বভাবতই এদেশের মানুষের কাছে এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্প এবং তার সহ্য ক্ষমতা নিয়ে সবসময়ই কৌতূহল থাকবেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত কিছু দিন ধরে পদ্মাসেতুর পিলারে একের পর এক ফেরি ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। গত পরশু আবারও কাকলি ফেরি ধাক্কা দিয়েছে পিলারে। মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ফেরিটি মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে পদ্মাসেতুতে দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের ঘটনা ঘটল। এতে ফেরিটির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফেরিতে থাকা দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১০-১২ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। সেতুর পিলারের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে নিরূপণের চেষ্টা করা হয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে কাকলি নামক ফেরি ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে ১০ নম্বর পিলারে দ্বিতীয়বার ধাক্কা খেলো ফেরি।

পদ্মাসেতুর নির্মাণ ও গঠনশৈলীর কারণে হয়তো এমন ধাক্কায় গুরুতর ক্ষতি হয়নি। তবুও একাধিক বার ধাক্কা লাগতে থাকলে আগামীতে বড় ক্ষতি হবে না এমনটা নিশ্চিত করা যায়? টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু নৌযান চালক ফেরি চলাচলের রুট বদলানোর অনুরোধ করেছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিআইডাব্লিউটিএ পদ্মাসেতুর নিচ দিয়ে সকল ধরনের ছোট ফেরি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অবশ্যই বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। প্রয়োজনে সকল প্রকার নৌযান চলাচল পদ্মাসেতুর নিচ দিয়ে স্থগিত করা যায় কিনা তাও ভাবনার অনুরোধ জানাই। মনে রাখা উচিত, দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নদী পারাপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করেছে এর আগেও, দীর্ঘদিন এসব দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে শুধুমাত্র পদ্মার উগ্র আচরণ কিংবা যানজটের কারণে। সেসব দুরবস্থার একটা স্থায়ী সমাধান হতে যাচ্ছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। বর্তমানে আরও কিছুটা কষ্ট সহ্য করার অনুরোধ দোষের হবে না।

বলাই বাহুল্য যে, পদ্মাসেতুর কারণে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো ইতিমধ্যে সেতু তীরবর্তী জেলাগুলা ভোগ করতে শুরু করেছে৷ এ অঞ্চলের সম্ভাবনার এক নতুন সূর্য উদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাবনায় এ এলাকার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হংকংয়ের আদলে বিশেষ নগরী নির্মাণের কথাও বলেছেন। সেই ইতিবাচক পরিবর্তন, বর্তমানের স্বস্তি এবং পূর্বের দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে পদ্মাসেতুকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের আনার বিষয়ে ভাবনার অনুরোধ জানাই।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর