বঙ্গবন্ধুকে নয়, হত্যা করা হয়েছিল তার স্বপ্নকে
১৫ আগস্ট ২০২১ ১৪:২৯
‘যে মানুষ মরতে রাজি, তাকে কেউ মারতে পারে না। আপনি একজন মানুষকে হত্যা করতে পারেন। সেটা তো তার দেহ। কিন্তু তার আত্মাকে কি আপনি হত্যা করতে পারেন? না তা কেউ পারে না। এটাই আমার বিশ্বাস।’ আমি সেই মহানায়কের কথা বলছি, যিনি ছিলেন, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির অধিকার আদায়ে পরিচালিত সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং এ জন্য কয়েকবার কারাবরণ করেন।
আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। কেননা পঁচাত্তরের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের অশ্রু প্লাবনে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন।
বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা তিনি একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি । যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর থাকবেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে শোষণ-বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছিল।
জীবনের পুরোটা সময় এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য ব্যয় করা এই মানুষটির বাংলাদেশকে নিয়ে ছিল দুঃসাহসিক স্বপ্ন। সর্বদা তাকে নির্যাতিত, দরিদ্র ও পরিশ্রমী মানুষদের নিয়ে ভাবতে দেখা গেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মানুষের অভাব-অনটন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণ এবং উন্নত জীবনের লক্ষ্যে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর ও অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় চেয়েছেন এই দেশের মানুষ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আর আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সদ্য স্বাধীন দেশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও বঙ্গবন্ধু এদেশের প্রথম বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতের থেকেও শিক্ষাখাতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কারণ তিনি কেবল রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন শিক্ষা দার্শনিকও।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশটি আত্মনির্ভরশীল হবে। মানুষ দু’বেলা আহার পাবে, মাথার ওপর চাল থাকবে, শিক্ষিত হবে, সব মানুষের কর্মসংস্থান ও সুস্বাস্থ্য থাকবে এবং সমাজে সংহতি থাকবে।
কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও খাদ্য ঘাটতি দূরীকরণে সৃজনশীল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল তার সরকার। এজন্যই ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাদি জমি নষ্ট হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কৃষিকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এভাবে তিনি একটি ধ্বংসস্তূপকে প্রত্যেকটি সেক্টরের উন্নয়ন সাধন করার মাধ্যমে একটি ফুল বাগানে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন কিছুদিনের জন্য ব্যাহত করতে পারলেও তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে সে স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই হচ্ছে আজকের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই