আগস্ট: বাঙালি জাতির কালো অধ্যায়
১৫ আগস্ট ২০২১ ১৬:০৫
আগস্ট মানে বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আগস্ট কতটা শোকাবহ তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে আবার উদ্দীপিত হবে বাঙালি।
বীর বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ মাসেই। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়স্বজন।
সেদিন ছিল ১৫ আগস্ট। মাসটি এলেই তাই মনে পড়ে যায় সেই ভয়াবহ স্মৃতি, যা আমাদের হৃদয়ে পিতা হারানোর যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। যে বিশাল হৃদয়ের মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্রের নীলনকশা আজও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি দীর্ঘ কয়েক যুগ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটো বোন শেখ রেহানা। রক্তের ভেতরেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি শেখ হাসিনার। রাজনীতিতে নামার অভিপ্রায় তার ছিল কি না আমার জানা নেই। পিতা জাতির মুক্তিদাতা। স্বাধীনতার স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার কন্যা। এ পরিচয়ই তো অনেক বড়। এ পরিচয়েই তারা পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। শোকের সাগর মাড়িয়ে তাকেই কি না সূচনা করতে হলো ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।
আগস্ট মাস এলেই জননেত্রী শেখ হাসিনা এক দুঃসহ স্মৃতির গহিনে চলে যান। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন প্রাণে বেঁচে যান। কারণ তারা দেশে ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাকের অপার করুণা তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁক-ঘোরানো এক সিংহপুরুষ। বাঙালি জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে বোধ করি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোনো জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি।
তাকে হারানোর দীর্ঘ সময় পর বাঙালি জাতী যখন তার সুযোগ্য তনয়ার হাত ধরে আবারো সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, ঠিক সেই সময়ে আবারও ১৯৭৫ সালের সেই ষড়যন্ত্রকারীদের দোসররা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল জাতির জনকের আদরের কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিনও তিনি বেঁচে যান। তবে ওই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং চার শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। সেদিনের সেই ভয়াবহতা আজও ভুলতে পারে না আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
ঘাতকরা চেয়েছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে বাংলাদেশকে অন্ধকারের গহিন গহ্বরে ঠেলে দিতে। আজও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী সেই দিনের সেই আঘাত ও ক্ষত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। সেদিনের গ্রেনেড হামলার স্প্রিন্টার শরীরে নিয়ে ধুকে ধুকে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে অনেক ত্যাগী নেতা। যারা থাকলে আওয়ামী লীগ আজ আরও সমৃদ্ধ হতো। সমৃদ্ধ হতো বাংলাদেশের রাজনীতি।
পরিশেষে বলতে চাই, এই শোকের মাসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সকলেই প্রতিজ্ঞা করি একটি সুন্দর দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে সকলে একসঙ্গে কাজ করবো।
লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই