বঙ্গবন্ধু পাশে থেকো, তবেই কাটবে সব আঁধার
১৫ আগস্ট ২০২১ ২১:০৮
১৫ আগস্ট ১৯৭৫, এক ঘোর অন্ধকারের দিন। এই দিন ভোরে সংগঠিত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকরা। ঘাতকের বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু্’র হিমালয়সম সুউচ্চ বক্ষ। নিভে যায় বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। নিভে যায় বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর আর আমরা হয়ে যাই অভিভাবকহীন, এতিম। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের ভালোবাসার মানুষ, আমাদের আস্থার জায়গা, আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধুকে।
সেদিন ভোর থেকে প্রকৃতিও কাঁদছিল, বৃষ্টিধারা হয়ে যেন নীরবে অশ্রুপাত করছিল। ঘাতকের অস্ত্রের সামনে সারাবাংলা তখন নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। পঁচাত্তর এর ১৫ই আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্তস্রোতে। শ্রাবণের ধারার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল অগণিত মানুষের অশ্রুধারাও।
আমরা যারা পঁচাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম, যারা বঙ্গবন্ধু’র আদর্শকে বুকে লালন করি, জীবন চলার পাথেয় মনেকরি, আমাদের সবার একটা আজন্ম আফসোস হলো— একটিবার বঙ্গবন্ধুকে সামনে থেকে দেখতে পেলাম না, তার পা ছুঁয়ে সালাম করা বা তার হাতটা স্পর্শ করতে পারলাম না। আমি যখন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, প্রতিবছর ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে যেতাম। সারাটা দিন একটা ঘোরের মধ্যে কাটত। মনে হতো কান পাতলেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা পরিবারের সদস্যদের গলার আওয়াজ শোনা যাবে, পায়ের শব্দ শোনা যাবে। মনে হতো এই বুঝি ছোট্ট রাসেল সোনা এ ঘর থেকে দৌড়ে ও ঘরে যাবে, কিংবা সামনের খালি জায়গাটায় সাইকেল চালাবে। ৩২ নাম্বার বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায় মিশে আছেন তারা। বাড়ির প্রতিটি জিনিস পরম মমতায় তাকিয়ে দেখতাম আর সবার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে যেত। আমাদের প্রজন্মের দুর্ভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে একটিবার দেখতে বা স্পর্শ করতে পারলাম না।
আগস্ট মাস এলেই মনটা বিষণ্ণ আর বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে। একটা নাই নাই, খালি খালি, ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এ যে কেমন অপূর্ণতা, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ যে কেমন বিক্ষুব্ধতা, কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নিজের অজান্তেই ঘৃণা বর্ষিত হয় খুনিদের প্রতি, এ যেন ঘৃণা প্রকাশ করতেও ঘৃণা হয়।
এই দেশটাকে আপনার মতো করে আর কেউ ভালোবাসবে না পিতা। আপনার জন্ম না হলে আমরা এখনও অন্য কারও দাসত্ব মেনে গোলামী করেই জীবন পার করতাম। আপনি না থাকলে নিজস্ব ভাষা, ভূখণ্ড, মানচিত্র, জাতীয় সংগীত কোনোটাই হতো না আমাদের। আমাদের জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে আপনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। তাই সবসময় আপনার আশীর্বাদ বা দোয়া আমাদের কাম্য। দোয়া করি পরপারে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দেবেন। আপনিও আমাদের মাথার উপর আপনার আশীর্বাদের হাত রাখবেন তাহলেই আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এবং আপনার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক: সরকারি কর্মকর্তা
সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই