Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই কি ঘাতকদের বার বার টার্গেট শেখ হাসিনা?

মানিক লাল ঘোষ
২১ আগস্ট ২০২১ ২০:৪১

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যা সম্পূর্ণ হয়নি, তাই করতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করার এমন পাশবিক ঘটনা সমকালীন রাজনীতিতে বিরল।

রক্তাক্ত ২১ আগস্টের এমন লোমহর্ষক ঘটনার উদ্দেশ্য আজ আর কারো অজানা নয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মো. হানিফ, ওবায়দুল কাদের, প্রয়াত অ্যাড. সাহারা খাতুন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, এস. এম কামালসহ প্রায় চার শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী ও সমাবেশে অংশ নেওয়া সাধারণ জনগণ। আহত হন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও। আহতদের অনেককেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকেই আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।

কিন্তু কেন এই পৈশাচিকতা? কারা কোন হীন উদ্দেশ্যে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল সে ইতিহাস অজানা ও অন্ধকারেই থেকে যেতো। অপপ্রচারে সত্যকে মিথ্যার বেড়াজালে বন্ধী রাখা হতো যুগের পর যুগ, যদি আওয়ামী লীগ আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসত। ঠিক যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে ইতিহাস বিকৃতির আড়ালে থেকে যেতো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল কুশীলবরা। বাংলার মানুষের ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ২১ আগস্টসহ ১৯ বার মৃত্যুর হাত থেকে মহান স্রষ্টা হয়তো তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এসব নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যাওয়া ও তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই ছিলেন হত্যাকারীদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বার বার বুলেট তাড়া করে বেড়ায় তাকে? কেন বার বার হত্যাকারীদের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা?

এর সহজ উত্তর ও রাজনৈতিক সমীকরণ একটাই— হত্যাকারীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে—গণতন্ত্রকে রক্ষা, জঙ্গিবাদকে নির্মূল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। আর এ কারণেই তার নেতৃত্বকে ধ্বংস করার জন্য বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে ঘাতকচক্র। আরেকটি প্রধান কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে না থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার যে অপূর্ণতা রয়ে গেছে খুনিদের মনে, তার পরিসমাপ্তি ঘটনার বাসনা বারবার তাড়িত করতো শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে খুনিচক্রের উত্তরসূরিদের।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়ের পর এমন হত্যাযজ্ঞ জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ঘটনা। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এমন অপচেষ্টা শুধু এই উপমহাদেশে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল ঘটনা। হত্যাকারীদের বাঁচাতে কি না করেছে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত সরকার। হত্যার আলামত নষ্ট করা, জজ মিয়া নামের একজন অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আসামি বানানো, শৈবাল সাহা পার্থসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের নাটক—এর সবই করেছে বিএনপি সরকার তা— যা সভ্য সমাজে কল্পনা করাও কষ্টকর। এমনকি এই গ্রেনেড হামলার দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর লজ্জাজনক চেষ্টাও করেছিল তারা।

১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। মিল রয়েছে অনেক। ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। আর ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করে খুনিচক্রের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়া । ‘৭৫ এ যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৩রা নভেম্বর জেলখানার অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র ছিল খুনিচক্রের—২১ আগস্টেও তেমনই লক্ষ্য ছিল তাদের। শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও টার্গেট ছিলেন সেদিন।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দীর্ঘ ১৪ বছর পর এই আলোচিত মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরিসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের রায় দেন বিচারিক আদালত। বর্তমানে এটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী বিদেশে পলাতক। দেশের বাইরে থেকেও সরকারবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন তারেক রহমান। যোগাযোগ রাখছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে। এমন যোগাযোগের খবর গণমাধ্যমে নতুন কিছু নয়। তাই দেশের সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র রক্ষা এবং অগ্রযাত্রার পথে সকল প্রতিকূলতা দূর করতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের সকল আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নের দাবি উঠেছে সর্বমহলে। তারা মনে করেন বিচারিক আদালতের রায় উচ্চ আদালতে যেন বহাল থাকে তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে রাষ্ট্রপক্ষ। চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে বিভিন্ন সভা সমাবেশে।

রাজনৈতিক মহল ও ২১ আগস্টের স্বজন হারাদের জোরালো দাবি—বিদেশে পলাতক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখামুখি করার। তাদের এই নৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে দেশের সকল মুক্তিকামী মানুষের। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে এবং দায়মুক্তির জন্য দ্রুত চূড়ান্ত বিচারের শুনানি শেষে তা দ্রুত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় দেশবাসী। এটিকে সময়ের দাবি মনে করছেন দেশের জনগণ।

সময়ের দাবি বাস্তবায়নের পাশাপাশি সময়ের ভাবনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে সমানভাবে। একবার নয় , দুবার নয়, ১৯ বার চেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনার জীবননাশের। ঘাতকদের মূল টার্গেট যখন বাঙালির আশা ভরসা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা শেখ হাসিনা। তাই তার জীবন রক্ষায়, দেশের অগ্রগতি অক্ষুণ্ণ রাখা এবং জঙ্গিবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভাবতে হবে অনেক বিষয়ে।

লেখক: সাংবাদিক , কলামিস্ট এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর