সাধ্যতিরিক্ত দেনমোহর প্রত্যাখ্যান জরুরি
২৭ আগস্ট ২০২১ ১১:০০
ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর বা মোহরানা দেওয়া স্বামীর উপর ফরজ। প্রতিটি নারীর বিয়ের সাথে সাথে তার স্বামীর কাছ থেকে মোহরানা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে দেনমোহরের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত নেই। তাই স্বামীর সামর্থ্য বিবেচনা করে দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। আবার ইসলামে এটাও বলা হয়েছে য – সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিয়ে সেটাই, যে বিয়েতে মোহরানা কম ধার্য করা হয়। কিন্তু আমাদের তথাকথিত সমাজে বিয়ে যেন এক দরকষাকষির হাট। সেখানে নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগেই ভেবে নেওয়া হচ্ছে বিচ্ছেদের কথা, ভেবে নেওয়া হচ্ছে নারীর নিরাপত্তার কথা। যার ফলে একদিকে মেয়ের বাবা মোটা অংকের টাকা দেনমোহরে ধার্য করতে বলছে এবং অপরদিকে ছেলের বাবা সেটিকে যত কমে ধার্য করা যায় সেই চেষ্টা করছে। ফলে বিয়ের আগেই দু’পক্ষের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব বা রেষারেষি তৈরী হচ্ছে।
বিয়ে মানে হচ্ছে স্বামী– স্ত্রীর একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে থাকা, একসাথে জীবন কাটানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। কিন্তু অনেক সময় এই সম্পর্কটাও তিক্ততায় পরিণত হয়। তখন তাদের মধ্যকার সম্পর্কে কোনো প্রেম-ভালোবাসা থাকে না। একটা পর্যায়ে স্বামী– স্ত্রী উভয়েই হয়তো বিচ্ছেদের কথা চিন্তা করে নেয়। কিন্তু সাধ্যের অতিরিক্ত দেনমোহর যেসব পুরুষদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তারা বিচ্ছেদের পথও বেছে নিতে পারছে না। কারণ ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ের সময় বা বিয়ের পর মোহরানা আদায় করে না থাকলেও, কোনো কারণে বিচ্ছেদ হতে চাইলে স্বামীকে তার স্ত্রীর পাওনা দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে মেয়েপক্ষরা সবসময় নিজেদের মেয়ের কথা ভেবে মোহরানা ধার্য করছে। তারা ভেবেই নেয় যে, মেয়ের স্বামী যদি কোনো কারণে তাদের মেয়েকে ছেড়ে দেয় বা স্বামী মারা যাওয়ার পর তাদের মেয়ে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে, তাই মোটা অংকের টাকা ধার্য করছে। কিন্তু মেয়েপক্ষ এটা ভাবছে না যে, তাদের মেয়ের মধ্যেও সমস্যা থাকতে পারে! এমনও হতে পারে যে, স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীর কার্যকলাপের কারণে তার সাথে থাকাটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বামী তার স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু মোটা অংকের দেনমোহরের কারণে সে বিচ্ছেদে যেতে পারছে না। ফলে অনেক পুরুষদেরই নিজের অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার স্ত্রীর সাথে সংসার করতে হচ্ছে। অনেক সময় এটি আত্নহননের দিকেও চলে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের চিকিৎসক দম্পতি আকাশ এবং মিতুর বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দেনমোহরকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দায়ী করা হয়। অসহায় আকাশের জন্য ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করা অসম্ভব ব্যাপার ছিল যার জন্য সে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়। এভাবে দেখা যাচ্ছে নারী– পুরুষ উভয়ই অপরাধ জগতের সাথে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে, নৈতিক অবক্ষয়ও তৈরি হচ্ছে। তাই সাধ্যতিরিক্ত দেনমোহর ধার্য করাটাও একটা অপরাধ।
সাধ্যতিরিক্ত দেনমোহর ধার্য করার বিরুদ্ধেও গণজাগরণ গড়ে তুলতে হবে যেমনটা গড়ে তোলা হচ্ছে যৌতুকের বিরুদ্ধে। দেনমোহরের ফাঁদে ফেলে পুরুষদের থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়াটা বন্ধ করতে হবে। এর বিরুদ্ধেও আইনের বিধান থাকা দরকার, কন্যার পিতা- মাতাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। স্বামী- স্ত্রীকে পারষ্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে দেনমোহরের ব্যপারটা মিটিয়ে নেওয়া উচিত যাতে তাদের আগামীর জীবন পারষ্পরিক সহোযোগিতা এবং ভালোবাসায় ভরে উঠে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
আকলিমা আক্তার শাম্মী মুক্তমত সাধ্যতিরিক্ত দেনমোহর প্রত্যাখ্যান জরুরি