Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানো জরুরি

রাজন ভট্টাচার্য
৩০ আগস্ট ২০২১ ১৭:২৫

সড়ক দুর্ঘটনা একটি জাতীয় সমস্যা। জাতীয় দুর্যোগ বললেও ভুল হবে না। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে সড়কে নজরদারি কমেছে— এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সবাই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত। এই সুযোগে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি একেবারেই নজরের বাইরে চলে গেছে। গত দেড় বছরে কয়েক দফা লকডাউনে সড়কপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। অবাক করা তথ্য হলো— এই পরিস্থিতির মধ্যেও তুলনামূলক সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। নামমাত্র বিধিনিষেধের মধ্যে এখন সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক। তাই দুর্ঘটনা রোধে সড়ক মহাসড়কে বাড়তি নজরদারি বাড়ানো সময়ের দাবি।

বিজ্ঞাপন

গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান যদি বলি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ফের চোখ রাঙানি দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে মোটরসাইকেলে। এর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাও নেহায়েত কম নয়। বাস-ট্রাকে দুর্ঘটনাও আছে। ইজিবাইকসহ অনুমোদনহীন যানবাহনে দুর্ঘটনার চিত্রও কিন্তু লক্ষ্যণীয়। এসব বিবেচনায় যাদের হাতে সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ করার দায়িত্ব, তাদের সবাইকে ফের তৎপর হয়ে ওঠার বিকল্প নেই।

এক কথায় যদি বলি— একটি নতুন সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে পুরনো সংকটটি যেন কোনোভাবেই ভয়াবহ হয়ে সামনে না আসে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাই সড়ককে নিরাপদ করার দায়িত্ব যাদের হাতে রয়েছে, তাদের অন্তত একটি অংশকে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বেশি তৎপর হতে হবে বিআরটিএ আর পুলিশকে।

গত কোরবানির ঈদেও যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ ছিল সারাদেশে। তবু সড়কে প্রাণ ঝরেছে। মানুষ যে যেভাবে পারেন, বাড়ি গেছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়কে যানবাহন চলেছে। পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও মানুষের যাতায়াত ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। রাস্তায় চালকের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করারও লোক দেখা যায়নি। সেই সুযোগে বেপরোয়া যানচলাচলই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল।

এ পরিস্থিতিতে কোরবানি ঈদের ছুটিতে সড়কপথে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭৩ জন নিহত হয়েছেন। গত ১৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনের এ তথ্য প্রকাশ করে যাত্রী অধিকার আদায়ে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, এ সময়ে সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি ছিল। তা সত্ত্বেও গত ছয় বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় আরো অন্তত ৪৪৭ জন আহত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানাচ্ছে, প্রায় ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোরিকশা। প্রায় ২৯ শতাংশ দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান। তথ্য বলছে, ২০১৫ সালের পর কোরবানির ঈদের ১৫ দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ বছরই। তবে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার সংখ্যা গত ছয় বছরের অনুপাতে ছিল তুলনামূলক কম। যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিমত, লকডাউনের পর রাস্তাায় হঠাৎ ভিড় বেড়ে যাওয়া, গণপরিবহনের অপর্যাপ্ততা ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবের কারণে এ বছর দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

গত একদশক ধরে সড়ক দুর্ঘটনা দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে নেহায়েত পদক্ষেপ কম নেওয়া হয়নি। উচ্চ আদালত পর্যন্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নির্দেশনা দিয়েছে। বাস্তবে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কতটুকু কার্যকর হচ্ছে? তা দেখা বা পর্যালোচনা করা হচ্ছে না। তেমনি পর্যালোচনার জন্য সরকারি কোনো সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। ফলে সবকিছুতেই ঢিলেমি অবস্থা একেবারেই স্পষ্ট।

দুর্ঘটনা ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ফোর-লেন হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের ফোর-লেন প্রকল্পের কাজ চলমান। ঢাকা-সিলেট ফোর-লেন প্রকল্প হওয়া নিশ্চিত। যেসব সড়কে ফোর-লেন প্রকল্প হয়েছে, সেখানেও কিন্তু দুর্ঘটনা নির্মূল করা যায়নি। এর বড় কারণ সার্ভিস রোড না হওয়া। প্রকল্পের কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্ভিস রোড না থাকার বিষয়ে টনক নড়ে। এখন নতুন সবক’টি ফোর-লেন প্রকল্পে সার্ভিস রোড যুক্ত করা হচ্ছে। পুরনো প্রকল্পগুলোতেও সার্ভিস রোড যুক্ত করা হবে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো যানবাহনের বেপরোয়া গতি কমানো যাচ্ছে না।

যানবাহনের গতি ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্পিড গানের ব্যবহার দেখলেও এখন এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। তাই সবক’টি মহাসড়কে যানের বেপরোয়া গতি ঠেকাতে স্পিড গানের পাশাপাশি বেশি বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা উচিত, যেন হাইওয়ে পুলিশ বা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেপরোয়া গতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বা অপরাধের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি নতুন সড়ক আইন অনুযায়ী চালকের পয়েন্ট কাটা, দুর্ঘটনার জন্য দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কার্যকর যদি শুরু করতে পারে, তবে সড়কে দুর্ঘটনা দ্রুত সময়ের মধ্যে অবশ্যই কমে আসবে। সড়কে যথাযথ সাইন/সংকেত স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। সড়ক রক্ষা ও দুর্ঘটনা রোধে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন আরও বেশি বেশি স্থাপনের বিকল্প নেই। দুর্ঘটনার মহামারি ঠেকাতে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও শিক্ষিত চালক।

লেখক: সাংবাদিক, অধিকারকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই/টিআর

সড়ক দুর্ঘটনা

বিজ্ঞাপন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

আরো

সম্পর্কিত খবর