করোনার প্রভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৭
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব ছুঁয়ে গেছে সমাজের সর্বত্র। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সকল বয়সের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু নীরবে-নিভৃতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিশুরাই। তাদের বিস্তৃত দুনিয়া চার দেয়ালে সংকুচিত করে দিয়েছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাস। স্কুল নেই, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা নেই, খেলাধুলার সুযোগ নেই, ঘরের চার দেয়াল ছাড়া কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। পরিবারই হয়ে উঠেছে তাদের বেড়ে ওঠার একমাত্র জগৎ। সেখানেও বড়দের দূরে থাকার প্রবণতা। যা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ফেলেছে বিরূপ প্রভাব।
ভাবতেই কেমন লাগে, ছোট্ট শিশুরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তেমন একটা ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না। নেই কোনো সামাজিক যোগাযোগ (ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম নয়), সংস্কৃতি চর্চা। ফলে শিশুদের মনোজগতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। দীর্ঘদিনের আবদ্ধ অবস্থা শিশুদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিশুর সকল ধরনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার জন্য দেশের প্রায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জুম অ্যাপস, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট, ওয়েবএক্স, ফেসবুক লাইভ, ইউটিউবের মতো বিভিন্ন সাইট ব্যবহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে ক্লাস করছে। কিন্তু দীর্ঘসময় ডিভাইসের সামনে বসে ক্লাস করায় তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নানান সমস্যা। এ সকল সমস্যা দূর করার জন্য শিশুদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বেশি সময় অনলাইনে ক্লাস করার কারণে অনেক শিশুর পিঠ, কোমর, চোখ ও ঘাড়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। আর অধিকাংশ সময় জুমে ক্লাস করা নিয়েও বিরক্ত হচ্ছে শিশুরাও।
মাঝে মধ্যেই শিশুদের বলতে শোনা যায়, এ করোনাভাইরাস লাইফটা শেষ করে দিল। আর ভালো লাগে না এসব। কবে, কখন স্কুলে যাব এ প্রশ্নই তাদের মনে। অভিভাবকরাও কিছু বলবেন তার উপায় কোথায়। কারণ প্রতিউত্তর তোমরা বাইরে যাও, চাকরি করো, কলিগদের সাথে দেখা হয়, গল্প করো…কিন্তু আমরা কোথায় যাবো? একজন অভিভাবক হিসেবে আমারও জানার আগ্রহ সত্যিই তো ওরা কোথায় যাবে, কী করবে? এই সরল প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে, একজন অভিভাবক হিসেবে কী করা উচিত? কোমলমতি এসব শিশুদের রক্ষা করার উপায় কী? আমার জানা নেই। নৈতিক শিক্ষা, শিক্ষাগুরুর সন্নিকটে শিক্ষা গ্রহণ, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এসব থেকে বঞ্চিত তারা। কিন্তু আমাদের শিশুদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা স্বপ্ন দেখে ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মোটেও কল্পনার জগতে বাস করে না তারা। শিশুরা বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই পড়ে।
আতঙ্কের বিষয় হলো তাদের ইলেকট্রিক ডিভাইসে প্রতি আসক্তি। দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ, মোবাইল নিয়ে থাকার ফলে খিটখিটে মেজাজ, ধৈর্যের ঘাটতিসহ আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এছাড়া, প্রাত্যহিক জীবনেও এসেছে ভয়াবহ পরিবর্তন। নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার বিষয়টি তাদের মাথাই নেই। রাত জাগা ও দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে থাকা (ক্লাসের একটু আগে ওঠা) একটি শিশুর জন্য কতটা ক্ষতিকর তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে (১০ মিনিটের বিরতির কথা থাকলেও) ক্লাস চলে। জুমে ক্লাস করা, গাদাগাদা অ্যাসাইনমেন্ট এসবের চক্রাকারে পড়ে তারা আজ বিপর্যস্ত। এরসঙ্গে এটাই বাস্তব যে, জুমে ক্লাস অন করে শিশুরা শুয়ে-বসে সময় কাটায়। ক্লান্তি আর বিরক্ত। যা একটি পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক ও কষ্টদায়ক। সন্তানের এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী?
করোনাকালে শিশুদের মানসিক বিকাশে আমাদের করণীয়
শিশুদের আবেগ প্রকাশের ধরন যেকোনো বয়সের মানুষের থেকে আলাদা। কেউ অস্বাভাবিকভাবে নীরব হয়ে ওঠে আবার কেউ অতিরিক্ত রাগ এবং চিৎকার করে। তাই পরিবারের বড়দের এক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কখনো কখনো খেলাধুলা ও চিত্রাঙ্কনের মতো বিভিন্ন সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে তাদের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুদেরকে নিজেদের বিরক্তিকর অনুভূতি যেমন রাগ, ভয় এবং দুঃখ প্রকাশ করার জন্য ইতিবাচক উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করুন। অন্যান্য সৃজনশীল ও মজাদার বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আকৃষ্ট করুন।
করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিকে অবান্তর বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, করোনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের কম না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা বিজ্ঞানসম্মত নয়। করোনা মহামারীর মধ্যে শিক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে সবিনয়ে বলতে চাই, পড়াশুনা দরকার কিন্তু তার আগে প্রয়োজন প্রতিটি শিশুর সুস্থতা। সুস্থ থাকুক শিশুরা, সুন্দর হোক আগামী।
লেখক: শিক্ষার্থী
সারাবাংলা/এএম