Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আস্থার সংকটে ই-কমার্স, সমাধান কোথায়?

আবির হাসান সুজন
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:০০

বর্তমান বিশ্বের আলোচিত খাত হল ই-কমার্স। মানুষ যাতে কষ্ট করে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে পারে তার একটি অনলাইন প্লার্টফর্ম হলো ই-কমার্স। কিন্তু বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনে এই খাতে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাওয়ার পথে। তাই ই-কমার্স ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে নিতে হবে বিশেষ ও কার্যকরী পরিকল্পনা।

ইলেকট্রনিক কমার্সকে সংক্ষেপে ই-কমার্স বলা হয়। আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার ভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবা মার্কেটিং, ক্রয়-বিক্রয়, গ্রহণ-বিলি করা, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি করাই হচ্ছে ই-কমার্স।

বিজ্ঞাপন

ইলেক্ট্রনিক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ে বেসরকারিভাবে কাজ শুরু করে ই-কমার্স । কিন্তু তখন অনলাইন বাণিজ্যের সরকারি অনুমোদন একদমেই ছিল না। বিশ্বে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই এর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে সরকার ব্যাংকের ই-কমার্স বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে পুরোপুরিভাবে ই-কমার্স চালু হয়। ই-কমার্স অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত করেছে নতুন ধারা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে তরুণ প্রজন্মের জন্য, নতুন উদ্যোক্তাদের যুক্ত করেছে ই-কমার্সের সাথে এবং নানাভাবে সমৃদ্ধ করে চলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের যাত্রাকে।

জার্মান পরিসংখ্যান পোর্টাল স্ট্যাটিস্টা জানায়, চলতি বছরে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের আকার ফুলে-ফেঁপে দাঁড়াবে ১৯৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা টাকার হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল নাগাদ এই খাতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ই-কমার্স বাণিজ্যের বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে ৪৬তম অবস্থানে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ই-ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে অনলাইনে নিত্যপণ্যের বেচাকেনা ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। আর সামগ্রিকভাবে গত বছর এই খাতের ব্যবসা বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, যেখানে কোভিডের আগে ই-কমার্সের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০-২৫ শতাংশ। ২০২০ সালে ই-কমার্স খাতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

দেশে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স দুই ধরনের ডিজিটাল বাণিজ্য হয়। ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) আওতাভুক্ত সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৬০০। এ খাতে বছরে গড়ে ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তার সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থা ও স্বচ্ছতার সংকটে।

অনেকের বিরুদ্ধে পণ্যমান, দাম, আগাম পেমেন্ট, অবিশ্বাস্য রকম মূল্যছাড়, ডেলিভারির দীর্ঘসূত্রিতা, এক পণ্য দেখিয়ে নিম্নমানের অবিকল আরেক পণ্য গছিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, বুম বুম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেওয়ার শঙ্কায় ভুগছে দেশের জনগণ। এরা ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষনীয় অফার, অবিশ্বস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তাই এই খাতে আস্থা আনতে ‘আগে পণ্য, পরে টাকা’- নীতির কার্যকর করতে হবে এবং ই-কমার্স খাতের নৈরাজ্য বন্ধ ও স্বচ্ছতা আনতে নীতিমালা ও নির্দেশিকার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন করতে হবে। নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনি কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারণায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন একটি খাত। এ খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। খাতটি যেভাবে বাড়ছে এর মনিটরিং সেই হারে বাড়ছে না। দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসার হলেও আইনী কাঠামোর অনুপস্থিতি ও পর্যবেক্ষণ না থাকায় এই খাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা গড়ে ওঠেনি। কিছু সংখ্যক মুনাফালোভী প্রতারক গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে।

যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ লুট করেছে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে প্রতারিত হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নিতে হবে।তাহলেই কেবল সাধারণ গ্রাহকের আস্থা আবার ফিরে আসবে ই-কমার্সে। ই-কমার্স পারে দেশে বেকারত্ব দূর করে দেশকে উন্নয়নের স্বর্ণ শেকড়ে পৌছে দিতে। তাই ই-কমার্স খাতকে বাঁচাতে পণ্যের গুণগত মান ও সঠিক সময়ে গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতাদের আরো সচেতন হতে হবে। যে কোনো আকর্ষণীয় অফার বা বিজ্ঞাপন দেখে হুট করে পণ্য কিনতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

আবির হাসান সুজন আস্থার সংকটে ই-কমার্স সমাধান কোথায়? মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

সম্পর্কিত খবর