Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টিকার সফলতায় পোলিও নির্মুল

তাহেরা ইয়াসমীন ইমা
২৪ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৭

জন্মের পর কিংবা শিশু বয়সে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ববরণ এক সময় বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ছিল নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না। বরং টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে অনেক সংক্রামক রোগই এখন বিলুপ্তির পথে। কারণ এখন দেশজুড়ে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে যেমন টিকা দেওয়া হয় তেমনি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও টিকা দেওয়ার সুযোগ নেন বহু মানুষ।

বিজ্ঞাপন

আগে আতঙ্ক ছড়ানো একটি রোগ ছিল পোলিও। পোলিও একটি তীব্র পোলিওভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এটি সুষুম্না ধুসর পদার্থ এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশকে প্রভাবিত করে। প্রতি বছর ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস পালিত হয়। ১৯৮৮ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পোলিও একটি ভাইরাসজনিত রোগ। পোলিও ভাইরাসটির কারণেই পোলিও বা পোলিওমাইলিটিজ রোগটি হয়ে থাকে। এই ভাইরাসটি সাধারণত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের আক্রমণ করে। এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে মুখগহ্বর বা সংক্রমিত জল বা খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। কোন একটি শিশু যদি পোলিও দ্বারা সংক্রমিত হয় তবে সারা দেশ জুড়ে পোলিও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে ইউরোপে পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে মহামারি আকারে পোলিও ছড়িয়ে পড়ে। বিংশ শতকে এসে রোগটি শিশুদের প্রধান ভয়াবহ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পোলিও রোগাক্রান্তকে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন রাখা প্রয়োজন কারণ এই রোগটি সহজে একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করতে পারে। যেহেতু পোলিওর কোন নিরাময় নেই একমাত্র টিকার মাধ্যমে একে প্রতিহত করা সম্ভব—পোলিও টিকা বহুবার প্রদানের মাধ্যমে শিশুদেরকে পোলিও থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। পোলিও প্রতিরোধ করার জন্য দুই প্রকারের টিকা দেওয়া হয়। ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন বা মুখে খাওয়ানো পোলিও টিকা জন্মের সময় প্রথম মাত্রা ৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহে প্রাথমিক মাত্রা ও ১৬ – ২৪ মাস বয়সে একটি বুস্টার মাত্রা। ইন্জেক্টিবল পোলিও ভ্যাকসিন (IPV) ৬ এবং ১৪ সপ্তাহে ডান হাতের উপরিভাগের ত্বকে ফ্র্যাকশনাল ডোজ দেওয়া হয়।

পোলিও ভাইরাস বা পোলিও রোগের হাত থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করতে পোলিও টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে, তাই শিশুদের পোলিও ভাইরাস দ্বারা আক্রমণের পূর্বেই পোলিও টিকা দেওয়া উচিত। পোলিও টিকা দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের অনেক বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। যদিও পোলিও টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের অনীহা রয়েছে। টিকা আবিষ্কারের সময় থেকেই চিকিৎসার এই নতুন পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। আগে মানুষ ধর্মীয় কারণে টিকার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। তারা মনে করতেন টিকার মাধ্যমে দেহ অপবিত্র হয়। এটি মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার খর্ব করে বলেও কিছু মানুষ মনে করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে টিকা বিরোধী লিগ গড়ে ওঠে। তারা বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ দিতেন, যেমন রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া। ব্রিটিশ টিকা-বিরোধী ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম টেব যুক্তরাষ্ট্র সফর করার পর সেখানেও এই ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে।

তবে বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশে বর্তমানে এই পরিস্থিতি নেই। গ্রামের চেয়ে শহরে এমনকি রাজধানী ঢাকাও টিকাদানে পিছিয়ে আছে। বিশ্বের সব জায়গায় টিকাদানের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকে শহর এলাকা। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে গ্রামের অবস্থা বেশি ভালো। সাফল্যকে শতভাগে নিয়ে আসতে হলে শহরের পাশাপাশি চা বাগান, হাওড় এলাকা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে জোর দিতে হবে। এমনকি ঢাকা নিজেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কিন্তু তাদের কোনো স্বাস্থ্য কাঠামো নেই।

অথচ ১৯৭৯ সালে যখন টিকাদান কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছিল, বাংলাদেশে তখন বিষয়টি এমন ছিল না। ১৯৮৫ সালের সরকারি জরিপে দেখা যায়, ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের পূর্ণ টিকা প্রাপ্তির হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সময়ের পরিক্রমায় সরকারি ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার নানা উদ্যোগে এখন টিকাদানের হার ৮২ শতাংশের বেশি। যেসব রোগ ঠেকাতে টিকাগুলো দেওয়া হতো তার কয়েকটি এখন নেই বললেই চলে, যেমন পোলিও। বাংলাদেশ সরকার দেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করেছে আরও কয়েক বছর আগেই। বিলুপ্তির পথে শিশুদের আরও কয়েকটি রোগও।

বাংলাদেশে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভ্যাকসিনের দশক ধরা হয়েছে। প্রতিবছর ২০ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এ জন্য নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনও অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা হচ্ছে। রুবেলা থেকে মুক্তির জন্য প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮৬ জনকে এমআর ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করতে চাই। ২০০৪ সালে খোদ ব্রিটেনেই এক লাখ শিশু কম টিকা নেয়। এর ফলে সে দেশে হামের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই,যদি জনসংখ্যার একটা বড় অংশ টিকা নেন তাহলে রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এবং এর ফলে যাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাও রোগের কবল থেকে রক্ষা পাবে। তাই আসুন শিশুকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে পোলিও রোগ থেকে রক্ষা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর