বিএনপি’র দ্বিতীয় স্বাধীনতা ও ৭ নভেম্বর
৭ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২৯
১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বর মূলত কী ঘটেছিল— এটি জাতির কাছে তিন ভাগে বিভক্ত অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা নিজেদের পছন্দমত বক্তব্য-বিবৃতি আর নানা রকম দিন-দিবস পালন করলেও প্রকৃত সত্য আদৌ উন্মোচন করতে সত্য জানানোর কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি। আর চার দশকেরও বেশি সময় পর আজকের তথ্য-প্রমাণের আধুনিক সভ্যতায় এসেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত, নিজেদের অপরাধ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা। যদিও আমরা জানি, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলে, নিজস্ব গুণে সত্য তার পঙক্তি মালা সাজিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সামনে সভ্যতার বার্তা ছড়িয়ে থাকে।
এবারের ৭ নভেম্বরও গতানুগতিক রাজনৈতিক কর্মসূচী আর বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্যের মাঝেই অতিবাহিত হয়েছে। আবারও সেই তিন-তিনটি দিবস-নাম দিয়ে যেমন, নভেম্বরের সাত তারিখ-দিনজুড়ে বিএনপি পালন করেছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে, জাসদ আবার ‘সৈনিক-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ নাম দিয়ে নানা কর্মসূচী রাজনৈতিকভাবে পালন করলেও আওয়ামী লীগ এটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
শুধু তাই নয়, বিএনপি এ দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করলেও ১৯৭৬ সাল থেকে তারা ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ নামে জাতীয়ভাবে পালন করা শুরু করে। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে। পরবর্তীতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আবারও সরকারি ছুটি বহাল করেছিল। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই দিনে সরকারি ছুটি বাতিল ঘোষণা করে, যা এখন পর্যন্ত বহাল রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
৭ নভেম্বর বিএনপি এটিকে (তথাকথিত) বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা হিসেবে অবিহিত করে আসছে। কারণ, এই দিন জুড়ে মূলত কী ঘটেছিল— এটি যেহেতু জাতির কাছে স্পষ্ট নয়, তাই জাতিকে অন্ধকারে রেখেই বিএনপি তাদের মূল রাজনীতির কলাকৌশল সাজিয়ে আসছে। বলা চলে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। যেমন বর্তমান সময়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬-দফার পটভূমি, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখেরও বেশি নারী মুক্তিযোদ্ধার আত্মসম্মান বিনাশ— বিষয়গুলো বিএনপি’র নিষিদ্ধের খোলস থেকে যতই বের হয়ে আসছে, জাতির সামনে বিএনপি ততটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ইতিহাস বিকৃতির কলঙ্কও বিএনপি জুড়ে।
তবে বিএনপি যথার্থই বলে আসছে যে, তাদের তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রার দিন ৭ নভেম্বর। কারণ ওই বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানি ছায়া সরকার গঠন, পাকিস্তানি ভাবধারায় রাষ্ট্রপরিচালনা সহ মৌলবাদ-জঙ্গি দর্শনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে স্বাধীনতাবিরোধীদের যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রতিস্থাপন করেছে, যেভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে— এটির ব্যাখ্যা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতীয়মান।
জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছিল। যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক কারণে ৩ নভেম্বরে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল, সেই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়ে এদেশের দেশপ্রেমিক সিপাহী এবং জনগণ ৭ নভেম্বরে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে দেশে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতাকে সুসংহত করেন। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের যে পথ, সেই পথের নতুন সূচনা করেন। প্রকৃতপক্ষে ৭ নভেম্বর থেকেই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল এবং তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান।” [জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মহাসচিব এই মন্তব্য করেন, গণমাধ্যম-৭ নভেম্বর, ২০২০]
এখানে লক্ষ্য করলে দেখবেন, জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমত, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে অবমাননা করে জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলেছেন। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন করার গালগল্প করে মূলত তাদের সত্যিকারের চরিত্র-পাকিস্তানপন্থী বা পাকিস্তানপ্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
অথচ, খালেদ মোশাররফকে হত্যার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জিয়াউর রহমান ছিলেন অবসর নেওয়া সেনা অফিসার। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পরে সেনাপ্রধান হন জেনারেল খালেদ মোশাররফ। জিয়া তখন নিজ বাসায় বন্দী। যে জিয়াউর রহমানকে মুখ ভরা বুলি আর গাল ভরা গল্পে বীর সাজানো-বানানো হয়, সেই জিয়া তখন জীবন বাঁচাতে পদত্যাগ করে পূর্ণ পেনশন দেওয়ারও আবেদন করেছিলেন যার অর্থ দাঁড়ায় ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান আসলে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগী একজন সেনা প্রধান।
আবার সেসময়কার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এগোনি বুস্টার আর খন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর মুখ্য সচিব মাহাবুবুল আলম চাষীর মধ্যকার টেলিগ্রাম থেকেও জিয়াউর রহমানের পলায়নের বিষয়টি সম্পর্কে জানা যায়। চাষী বুস্টারকে বললেন, “ওই একই সময় রাষ্ট্রপতি নিজেও রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানাতে পারেন। সেই সঙ্গে তার কিছু সতীর্থও। সে তালিকায় ওসমানী থেকে শুরু করে খলিল, জিয়া-যে কেউ কিংবা সবাই থাকতে পারেন।”
১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান তার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত করলেও একই বছরের ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন—জেনারেল খালেদ মোশারফ— আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার-বীর বিক্রম কর্নেল নাজমুল হুদা, লে. কর্নেল এ টি এম হায়দারের মতো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করার সুবর্ণসুযোগ সৃষ্টি করেন।
সেদিনের রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ডের শেষ দৃশ্যের স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন-এর ‘বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১’ বই-এ। খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে লেখেন, “৭ নভেম্বর রাত ১২টার পর ঢাকা সেনানিবাস থেকে যখন সিপাহি বিপ্লবের সূচনা হয়, তখন খালেদ মোশাররফ ও অন্যরা বঙ্গভবনেই ছিলেন। এসব সংবাদ শুনে খালেদ মোশাররফ কর্নেল হুদার মাধ্যমে ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নওয়াজেশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নওয়াজেশের ইউনিটে তাদের আসার জন্য বলে। কিন্তু সেটা পরে রটে যায় যে তারা আরিচা হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে একটি বেসামরিক গাড়িতে যাওয়ার পথে আসাদ গেটের নিকট তাদের গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে তারা নিকটস্থ একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাপড় বদলিয়ে ১০ ইস্ট বেঙ্গলের দিকে হেঁটে অধিনায়কের অফিসে পৌঁছায়। ভোরের দিকে জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফের অবস্থান জানার পর তার সঙ্গে কথা বলে এবং দুজনের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে জিয়াউর রহমান নওয়াজেশকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ কথা মরহুম নওয়াজেশ নিজেই আমাকে বলেছিলেন। নওয়াজেশ সকালে তাদের জন্য নাশতার বন্দোবস্ত করে এবং তার বর্ণনা মতে এ সময় খালেদ মোশাররফ অত্যন্ত স্বাভাবিক ও শান্ত ছিলেন। তবে কর্নেল হুদা ও হায়দার কিছুটা শঙ্কিত হয়ে উঠলে খালেদ মোশাররফ তাদেরকে স্বাভাবিক সুরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলেন। ইতিমধ্যে সেনানিবাস থেকে কিছু বিপ্লবী সৈনিক ১০ ইস্ট বেঙ্গলের লাইনে এসে সেখানকার সৈনিকদের বিপ্লবের সপক্ষে উত্তেজিত করতে থাকে এবং খালেদ মোশাররফ ও তার সহযোগীদের হস্তান্তরের জন্য অধিনায়কের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। নওয়াজেশ উত্তেজিত সৈনিকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কিছুসংখ্যক সৈনিক অধিনায়কের অফিসের দরজা একপ্রকার ভেঙে তিন জনকেই বাইরে মাঠে নিয়ে এসে গুলি করে হত্যা করে।”
শুধু তাই নয়, ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, চেইন অব কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার-রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে খালেদ মোশাররফ কর্তৃক অভ্যুত্থানে নিজেদের রাজনৈতিক ভোগ-বিলাসের শেষ পরিণতি বুঝতে পেরে এ বাংলার বিশ্বাসঘাতক মোশতাক গং জিয়া-ফারুক-রশিদ’রা রাতের আঁধারে বিশ্ব ইতিহাসের আরেক জঘন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা— বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডে কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিল লেখেন, “ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে আমাদের টেলিফোনে যখন বাকযুদ্ধ চলছিল, তখন ঘুণাক্ষরেও আমরা জানতে পারিনি জেলে চার জাতীয় নেতার হত্যাকাণ্ডের কথা। অথচ আগের রাতেই সংঘটিত হয়েছিল ওই বর্বর হত্যাকাণ্ড। ওসমানী ও খলিলুর রহমান ওই ঘটনার কথা তখন জানতেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানাননি। জানালে এভাবে ১৫ আগস্টের খুনিদের নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া হত না। আমাদের নেগোসিয়েশন টিমকেও এ বিষয়ে কেউ কিছু আভাস দেয়নি।” [একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, পৃষ্ঠা-১৩৬]
পরদিন, ৪ নভেম্বর বঙ্গভবনে শাফায়াত জামিল সেনাবাহিনীর তৎকালীন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে জেল হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার কথা জানার পরও তাদের এই তথ্য না জানানোর জন্য তিরস্কার করে বলেন, “এই ডিসগ্রেসফুল আচরণের জন্য আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছি।” [একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর, পৃষ্ঠা-১৩৮]
আবার ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন তার লেখা ‘গণতন্ত্রের বিপন্নধারায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী খালেদ মোশাররফ ও অভ্যুত্থানকারীরা ৪ নভেম্বর জেলহত্যাকাণ্ডের খবর পায়। অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতক মোশতাক গং জিয়া-ফারুক-রশিদ’রা তাদের শেষ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পরিকল্পনা করেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় চার নেতাকে খুন করেন।
৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও পরবর্তী ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর রক্ত মাড়িয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা খন্দকার মোশতাক আর খুনি মেজরদের ৮১ দিনের অবৈধ শাসনের অবসান ঘটিয়ে খুনিদের মদদে সেনাপ্রধানের আসনে বসা জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেন খালেদ মোশাররফ। তিনি চেয়েছিলেন বিনা রক্তপাতে বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে। খালেদ মোশাররফের মানবিক গুণাবলির সুযোগ গ্রহণ করে কর্নেল তাহের-জাসদের সহযোগিতায় জিয়াউর রহমান হত্যার রাজনীতি শুরু করেন।
বিএনপি যথার্থই বলেছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি-সরকার পরিচালনার প্রথম পদক্ষেপ সফল হলেও চূড়ান্ত দ্বিতীয় সফলতা আসে ৩-৭ নভেম্বরের জাতীয় চার নেতা-খালেদ মোশাররফদের মত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মধ্য দিয়ে যাকে বিএনপি বলছে ‘বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছিল’!
তবে ইতিহাস বলে, সত্য বরাবরই একশ্রেণিকে তিক্ত স্বাদ গ্রহণে বাধ্য করে। কারণ সত্যের ভারেই মিথ্যে নুয়ে পড়ে। বিএনপি ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ সত্যের ভারে আজ নুয়ে পড়েছে। ৭০-এর নির্বাচনকে বাংলা-বাঙালির নেতা হয়েছিল, কী ছিল ৭ই মার্চের ভাষণে, কে স্বাধীনতার ঘোষক, আর কার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল-জাতি আজ অবগত। আর বিএনপি অসুস্থধারার রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখলে তাদের বানানো-মিথ্যে গালগল্প, ইতিহাস বিকৃতির সাথে-সাথে তাদের পাকিস্তানি মৌলবাদ-জঙ্গি চিন্তা-দর্শন-এ জাতি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে, বিতাড়িত করবে।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
সারাবাংলা/এসবিডিই
কবীর চৌধুরী তন্ময় বিএনপি’র দ্বিতীয় স্বাধীনতা ও ৭ নভেম্বর মুক্তমত