Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাকিল—এখনো চেতনায় দেদীপ্যমান

আমিনুল ইসলাম 
৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:০০

যাচ্ছিলাম ত্রিপুরার বিলোনিয়ায়, উদ্দেশ্য ত্রিপুরার প্রাদেশিক সরকারের আমন্ত্রণে বিলোনিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য ‘সাম্প্রদায়িক সংহতি মেলা’য় অংশগ্রহণ। ত্রিপুরা শহরে পৌঁছেই ঢাকার বাসায় ফোন করলাম আমার অবস্থান জানানোর জন্য। ফোন ধরেই আমার স্ত্রী কেমন আছি জিজ্ঞেস না করে আমাকে বললো তুমি কিছু শুনেছ? আমি বললাম না তো, কেন কী হয়েছে? এখানে ফেসবুকে শাকিল ভাইকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কী সব পোস্ট দিচ্ছে। জানতে চাইলাম কী রকম? বললো, উনি নাকি মারা গিয়েছেন। আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম কি সব আজে বাজে বকছো? শাকিলের মতো কারো কিছু হলে এটাতো টিভির স্ক্রলেই আসবে। ফেসবুকে কেন? তুমি টিভি অন কর। আমার স্ত্রী টিভি অন করে ‘ও আল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তখন আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। ঢাকায় সহযোদ্ধাদের ফোন করে সব জানলাম। মুহূর্তেই যেন চারপাশটা শূন্য হয়ে গেল। বুকটা হু হু করে উঠলো অব্যক্ত এক বেদনায়। আমার সঙ্গে ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক চৌধুরী শহিদ কাদের। সে আমার বুকের হাহাকারটা সম্ভবত টের পেয়ে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল।

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যায় বিলোনিয়া সংহতি মেলার মঞ্চে পৌঁছালাম। আয়োজকরা আমার কাছ থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে অনেক কিছুই আমার বক্তৃতায় প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমার বলা হয়নি কিছুই। আমি বক্তৃতা শুরুই করেছিলাম আমার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের অকৃত্রিম বন্ধু প্রয়াত শাকিলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। কিন্তু আবেগে বার বার গলা ধরে আসছিল। চোখের পানি ধরে রাখাও কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। মাত্র তিন মিনিট অগোছালোভাবে বন্ধুবর শাকিলের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আর নির্লোভ মানসিকতার দুয়েকটি স্মৃতিচারণ করেই শেষ করি।

বিজ্ঞাপন

আসলে শাকিলকে নিয়ে লেখা আমার মতো একজন এমেচার লেখকের জন্য খুবই কঠিন একটি কাজ। কীভাবে শুরু করবো, কোথায় শেষ করবো এটাও ঠিক করা কঠিন। পুরো তিরিশ বছরের পরিচয়, তিরিশ বছরের বন্ধুত্ব (১৯৮৬-২০১৬)। এখানে লাভ-ক্ষতির কোন হিসেব ছিল না। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কোন বিষয় ছিল না। শুধু ছিল এক নিখাদ বন্ধুত্ব আর আদর্শের মেলবন্ধন। যে কারণে তিরিশ বছরের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমণে দুজনের সম্পর্কে কোন ফাটল দূরে থাক ধূলিও জমতে পারেনি কখনো।

আমরা যখন ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি, তখন চতুর্মুখী টাপে আমাদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৮৬’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়ায় ছাত্রদল, জাসদ ছাত্রলীগসহ বড় ছাত্রসংগঠনগুলো আমাদের বিরুদ্ধে। স্বৈরাচার এরশাদের পেটোয়া বাহিনীতো ছিলই। বলতে গেলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ অলিখিতভাবে অনেকটাই নিষিদ্ধ। সেই পাথর কঠিন সময়েই বন্ধু শাকিলসহ আমরা বিশাল একটি গ্রুপ ছাত্রলীগের ঝা-া উঁচিয়ে ধরে ক্যাম্পাসে বুক চিতিয়ে দাঁড়াই।

শাকিল অনার্স ১ম বর্ষেই নিজের অপার সাংগঠনিক দক্ষতায় নির্বাচিত হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াকালীন সময়ে নির্বাচিত হন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মুজিব আদর্শের অবিনাশী চেতনার পতাকা হাতে ফেরিওয়ালার মতো চষে বেড়ান সারা বাংলাদেশ। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলা ও উপজেলায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে শাকিলের সাথে যাওয়ার। এই সফরগুলোতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে। জানার এবং বোঝার চেষ্টা করেছি ছাত্ররাজনীতি নিয়ে তাদের সমস্যা ও চিন্তা-ভাবনাগুলো। শাকিলকে দেখেছি কত অনায়াসেই অনেক কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান দিতে। দেখেছি তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তন্ময় হয়ে শুনতো তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাঁর সম্মোহনী শক্তিতে উজ্জীবিত ও প্রাণিত হয়ে সাধারণ অনেক ছাত্র-ছাত্রীকেও দেখেছি ছাত্রলীগের পতাকাতলে সমবেত হতে। শাকিলের মতো এমন নির্লোভ, সৃজনশীল, প্রতিভাবান ছাত্রনেতা বর্তমান ছাত্ররাজনীতি শুধু নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও বড় বেশি অভাব।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হিসেবে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায়ের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। চেতনায় ধারণ করা মুজিব আদর্শ বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে আমৃত্যু কাজ করেছেন। তাঁর সৃজনশীল কর্ম ও আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

লেখক : উপ-প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/আইই

আমিনুল ইসলাম মাহবুবুল হক শাকিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর