Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জেবেল নেতৃত্বাধীন ন্যাপ পারল, বিএনপি বা অন্যরা কেন নয়?

কামরুল হাসান নাসিম
১২ জানুয়ারি ২০২২ ২০:৫৭

ভোট হলো আমাদের নিজেদের, একে অপরের, এই দেশ এবং এই বিশ্বের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রকাশ—এমন অর্থবহ মন্তব্যের ময়নাতদন্তে যেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন কমিশন এর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। কারণ, ‘অঙ্গিকার’ পূরণের শর্তই হলো নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় ভোট প্রক্রিয়াটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

এদিকে নতুন বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপে অংশ নিয়েছেন জেবেল রহমান গাণি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। ওই দলটি কর্তৃক তিন দফা প্রস্তাবের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে দুই দফায় দেখানো হয়েছে। যা অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রস্তাবনা। যার মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের চাপ, দায় কমার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে মনে করবার সুযোগ আছে।

বিজ্ঞাপন

ন্যাপ প্রস্তাব করে বলেছে—“নির্বাচন কমিশনকে একটি আধুনিক ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএমএস) অর্থাৎ একটি আধুনিক নির্বাচন ব্যবস্থা বা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে তদারকি (মনিটরিং) ও নিরাপত্তার (সিকিউরিটি) জন্য নানাবিধ প্রযুক্তি সহজলভ্য। আমরা মনে করি, প্রতিটি কেন্দ্রকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণের জন্য পিপলস কাউন্টিং মেশিন, সিসিটিভি/আইপি ক্যামেরা, রের্কিডিং ও লাইভস্ট্রিমিংয়ের মতো প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।”

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া অর্থবহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ ন্যাপ। এ কথা জানিয়ে জেবেল রহমান গাণি তাগিদ দিয়ে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বারবার এই কমিশন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয়। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রুততম সময়ে সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নে আইনের বিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশা রাখি।”

বিজ্ঞাপন

জেবেল গাণির রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব রাখার এমন প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে স্মরণ করে বলা যায় যে, “Our political leaders will know our priorities only if we tell them, again and again, and if those priorities begin to show up in the polls.”

জেবেল অর্থবহ গণতন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। অতি অবশ্যই সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে অসাধারণ পর্যায়ের মানব সম্পদের অনুসন্ধানে থাকতে পারার নামও গণতন্ত্রের অন্বেষণে রাজনীতি। তখন ঐতিহাসিক উক্তিটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, “Democracy is based upon the conviction there are extraordinary possibilities in ordinary people.”

বাংলাদেশে এখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। কেউ অংশ নিচ্ছে, কেউ নিচ্ছে না। ক্ষোভের আশ্লেষে থেকে যারা অংশ নিচ্ছে না, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু প্রচলিত ভোটতন্ত্রের অনুশীলনটি নিজেদের মতো করে হচ্ছে না বলে ফ্যাসিবাদী বিরোধীমতের গোত্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে, তা কি বলার সুযোগ তৈরি হয় না ? কারণ, উপযুক্ত প্রস্তাব দাঁড় করিয়ে শাসকশ্রেণীকে চাপে রাখার পর্যায়ে যেতে পারাটার নামও তো রাজনীতি। যা জেবেল রহমান গাণি করতে পেরেছেন। তার রাখা প্রস্তাবটি গৃহীত হলে প্রহসনের নির্বাচন হওয়ারই সুযোগ নেই। তখন সব কিছু স্বয়ংক্রিয় পন্থায় ভোট গ্রহণ পদ্ধতিটি অতি নিরাপত্তায় প্রভাবমুক্ত বাস্তবতায় নিশ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যক্তি ও নির্বাচন কমিশনের মতো সংস্থা শুধু নিজ দায়িত্ব পালন করলেই চলে। সঙ্গত যুক্তিতে তাই বলা যায় যে, “This process of election affords a moral certainty that the office of President will seldom fall to the lot of any man who is not in an eminent degree endowed with the requisite qualifications.”

কাজেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় দলধারী নামের তকমা লাগিয়ে আসলে রাজনীতি করতে পারা যাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পুরোধা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নাতি আজকের ন্যাপ নেতা জেবেল রহমান গাণি মওলানা ভাসানির গড়া সেই ন্যাপকে নিয়ে এগোচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হতে পারে তেমন কার্যকর রূপরেখা দাঁড় করাতে সচেষ্টও হলেন। এই কাজটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কিংবা গালভরা নামের বাম বলয়গুলো কেন পারল না? মেধাভিত্তিক রাজনীতির অনুপস্থিতি এতে করে নিশ্চিত হয়। এই প্রসঙ্গেই জোর দিয়ে বলা যায়, ভোট কিভাবে হতে হবে তা নিয়ে বিদগ্ধমতের অংশগ্রহণ যেমন নেই আবার কটাক্ষ করে খোঁচা দিয়ে বলাও যায় যে, “Voting is as much an emotional act as it is an intellectual one.”

নেতৃত্বের মান কমছে। নামধারীদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতিকে খর্ব করে তুলছে। সে কারণেই একজন শেখ হাসিনা অদম্য চরিত্র হয়ে বাংলাদেশের দায়িত্বে। তিনি বাংলাদেশ বোঝেন, রাজনীতি বোঝেন। এখন বিরোধী শিবিরে ‘নেতা’ নেই। জেবেল গাণিরা হাল ধরুক। গণতন্ত্র বাঁচুক, লড়াই হোক, বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই !

As a citizen of Bangladesh, “I love voting day. I love the sight of my fellow citizens lining up to make their voices heard. But, of course, it is the job of the political party to educate the masses politically. This is the job of the ruling class. But those who are standing in line, receiving the gift of black money, say, I am voting.

বাংলাদেশি দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলছেন, সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করার যোগ্যতায় থাকা ‘রাষ্ট্রচিন্তক’ অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক হবেন না।

লেখক: সাংবাদিক, গবেষক, রাজনীতিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর