Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নগরবাসীকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করুন

আজহার মাহমুদ
২৯ মার্চ ২০২২ ১৬:২১

মশার অত্যাচার থেকে চট্টগ্রামের মানুষ কোনো কালেই রেহাই পায়নি। এ অঞ্চলের মানুষ সহ্য করতে শিখেছে তাই এই অত্যাচার সহ্য করে আসছে বিগত এক দশক থেকে। প্রতিবারই চসিকের মেয়রগণ মশা নিধনে ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দেন কিন্তু চেয়ারে বসে ভুলে যান সেই কথাটি। বিগত কয়েক বছরেও এই একই বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার পত্রিপত্রিকায়, টেলিভিশনে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন এই সমস্যার সমাধান আসছে না। নগরবাসী পাচ্ছে না কোনো সুফল।

বিজ্ঞাপন

দিন দিন যেভাবে মশার অত্যাচর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ একপ্রকার মশার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। অথচ এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনে যাবতীয় সমস্যা গুলোর মধ্যে এটিও যে একটি মারাত্বক সমস্যা আমরা সেটা ভুলেই গেছি। বিগত কয়েক বছর যাবৎ যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে তা সত্যি ভাবনার বিষয়। জনজীবন যেন মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ।

চট্টগ্রামের এমনকোনো স্থান নেই যেকোনো মশার অত্যাচর নেই। অবাক করার বিষয় যেখানে কখনও মশা খুঁজে পাওয়া যেতো না এখন সেখানেও মশার মারাত্বক অত্যাচার চলছে। চট্টগ্রামের একটি সেবামূলক ফেসবুক গ্রুপে আফরাইম সাঈদ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে বলেন, চকবাজার, দিদার মার্কেট, আন্দরকিল্লা এলাকায় মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায় বেড়েছে। ইউসুফ নামক এক ব্যক্তি পোস্ট দিয়ে জানতে চান, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট কি চট্টগ্রামে আছে কি না! ওই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এজন্য অনেকেই সিটিকর্পোরেশনকেই দায়ী করছেন।

মারুফ আল মাহমুদ নামক এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেয়, সিটিগেট, কর্ণেল হাট এবং কাট্টলী এলাকায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এছাড়াও হালিশহর, বড়পোল, আগ্রাবাদ, অলংকার, ওয়ার্লেস, ফয়েসলেক, মুরাদপুর, ২ নং গেট, কদমতলি, ওয়াসা, আকবরশাহ, মনসুরাবাদ, ফিরোজ শাহ, অক্সিজেন, জামাল খানসহ সব এলাকায় মশা নিয়ে অভিযোগ আছে।

কিন্তু মশার এমন উপদ্রবের জন্য দায়ী কে? প্রতি বছর সিটিকর্পোরেশনকে মশা নিধনের জন্য বিরাট অংকের টাকা দেওয়া হয়। সিটিকর্পোরেশনের অধীনে মশা নিধনের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে অনেক। এরপরেও যদি নাগরীকগন মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা না পায়, তবে এটা দুঃখজনক তো বটেই সাথে লজ্জারও বিষয়। উন্নত বিশ্বে এমনটা ভাবাই যায়না। বিগত সালগুলোতে মশা বাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন রোগে ভূগেছে। নতুন করে আবার মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মনে সেই চিকুনগুনিয়ার আতংকও দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এই মশার মাধ্যমে মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সকাল বিকেল মশার ওষুধ ছিটানোর কথা হলেও সত্যিকার অর্থে তা হয়না। এগুলো যথাযথ ভাবে হওয়া দরকার। এছাড়াও সিটি-কর্পোরেশন মশার যে ওষুধ ছিটায় তা আদৌ কাজ করে কিনা দেখার কেউ নেই। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং। প্রতিবছর এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ যেন এসব দেখেও না দেখার মতো করে থাকে।

শুধু তা-ই নয়, মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেও বড় অনিয়ম ছিলো বিগত সালগুলোতে। এই ওষুধ দিতে হয় বিশেষ করে প্রজনন স্থলে। বছরের উপযুক্ত সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ওষুধ ছিটাতে হয়। মশার ওষুধ একই দিনে দু’বার প্রয়োগ করার নিয়ম। একবার ভোরে দিতে হয় মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আবার বিকেল বা সন্ধ্যায় দিতে হবে প্রাপ্ত বয়স্ক মশা মারার জন্য। সর্বোপরি মশার ওষুধের গুনগত মান অবশ্যই হতে হবে যথাযথ।

চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতি নগরবাসীর চাওয়া, মশার এই অত্যাচর থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে রক্ষা করা। আমি বিশ্বাস করি চট্টগ্রামবাসী তাঁর প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তিনি সেটার যথাযত মর্যাদা রাখবেন। এই অঞ্চলের মানুষকে একটি মশামুক্ত অঞ্চলে পরিণত করবেন।

তাই মাননীয় মেয়রকে বলতে চাই, আপনার দিকে তাকিয়ে আছে চট্টগ্রামবাসী, দয়াকরে আপনি একটা পদক্ষেপ নিন। চট্টগ্রামের মানুষদের এমন অসহনীয় অবস্থায় পাশে দাঁড়ান। একজন নগরপিতার কাছে সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই ক্ষুদ্র চাওয়া নিশ্চয় পূরণ হবে।

এবার আসা-যাক নিজেদের দিকে। চসিকের পাশাপাশি দায়িত্ব কিছু আমার আপনার আমাদেরও নিতে হবে। আমরা জানি, কচুরিপনা, ডোবা, নালা এবং অপরিষ্কার ড্রেন মশার জন্মস্থল। এগুলো পরিষ্কার রাখা অতীব জরুরী। যদি আমরা পারি তবে আমরা নিজেরাই করবো। যদি চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীর প্রয়োজন হয়, তবে স্থানীয় কাউন্সিলরের নিকট এলাকাবাসীরা যাবো। এছাড়াও রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকেও মশার সৃষ্টি হয়। আমাদের উচিৎ নিজের এলাকা নিজেদের পরিষ্কার রাখা। মনে রাখতে হবে জনসচেতনতাই সকল সমস্যার সমাধান। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তবে সিটিকর্পোরেশনের উপর হাজার দায় চাপালেও কোনো সমাধান হবে না। মশার প্রজননের ক্ষেত্রগুলো অনেকাংশই ঘরের মধ্যে থাকে। বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি ফ্রিজের জমানো পানি থেকে মশার বংশ বিস্তার বেশী ঘটে। এগুলোতো আর সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই মাসে একবার হলেও নিজেদের বাসা-বাড়ি এবং ভবনের আশপাশ পরিষ্কার করা জরুরী।

এভাবেই আমরা সকলেই চাইলে মিলেমিশে মশামুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে পারি। এজন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে মশা যেনো জন্মাতে না পারে। কারণ মশা জন্মাতে না দিলে আমাদের আর মশা নিধন করার জন্য ওষুধ ছিটাতে হবেনা। সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যাক্তিদের জন্য। যাদের হাপানী ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা এসব ওষুধে। তাই মশার ক্ষেত্র যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি মশা যেনো আর না জন্মাতে পারে সেই ব্যপারে দায়িত্বশিল আচরণ সকলের কাম্য। তাই আসুন মশার হাত থেকে নিজে সুরক্ষা থাকি এবং অন্যদেরকেও সুরক্ষা রাখি।

লেখক : আজহার মাহমুদ, শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আজহার মাহমুদ নগরবাসীকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করুন মুক্তমত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর