জাতীয় সরকারের প্রধান কে হবে?
৩১ মার্চ ২০২২ ১৭:৪৭
ইদানিং বিএনপি নতুন সুর তুলেছে তারা যদি কোনো কালে সরকার গঠন করতে পারে তাহলে তাদের মিত্র জোটের সব দলের নেতাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। অর্থাৎ তারা একটা যৌথভাবে নির্বাচন করবে এবং সেই জোটের নেতৃবৃন্দ বিজয়ী না হলেও তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে সরকারের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে। এই কথা নাকি বিএনপি’র লন্ডন প্রবাসী যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত নেতা সাম্প্রতিক কোন এক বক্তবে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যের পর বিএনপির নেতৃবৃন্দ এই জাতীয় সরকারের প্রচারণা চালাচ্ছে। তার আগে তারা বলছে যে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং সেই নির্বাচন হলে তারা জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং জয়ী হবে। জোটের ফলাফল যাই হোক অর্থাৎ যদি কোন নেতা হেরেও যায় তারপরও তাদের সবাইকে নিয়ে তারা সরকার গঠন করবে। যদিও সরকার কোন দলের নেতৃত্বে হবে,সরকারের প্রধান কে হবেন এসব খোলাসা করেনি বিএনপি। ধরে নিলাম তাদের কল্পিত জোটের প্রধান দল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বেই জাতীয় সরকার গঠিত হবে। কিন্তু সেই সরকারের প্রধান কে হবেন অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী কে হবে সেটা তারা কোন ভাবেই পরিষ্কার করছে না। এই নব ঘোষিত জাতীয় সরকার কেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে সে কথাও জাতির সামনে তুলে ধরছে না।
যাই হোক একটি দল কল্পিত অথবা বাস্তব যে কোন ভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে আর বিএনপির এই স্বপ্ন দেখা অবাস্তব কিছুই না। কারণ এর আগেও তারা ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দলের বর্তমান প্রধান এতিমের টাকা আত্মসাতের দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন, যদিও সরকারের বিশেষ কৃপায় এখন জেলখানার বাইরে অবস্থান করছেন। আর দলের দ্বিতীয় কর্তাব্যক্তি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে এক যুগের অধিক সময় ধরে বিদেশে বসবাস করছেন। আগামি দিনে কবে নাগাদ বিএনপি ক্ষমতায় যাবে সেই চিন্তা বাদ দিয়েও যদি ধরে নেই সামনের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েই সরকার গঠন করলো সেই সরকারের প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। তাদের দলের শীর্ষ দুই নেতাই দন্ডপ্রাপ্ত আসামি বা দন্ড ভোগ করা ব্যক্তি। এরা তো নির্বাচনেই অংশ নিতে পারবেন না। তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। তাদের দ্বিতীয় প্রধান শরিক জামাতের আমির হবেন প্রধানমন্ত্রী? নাকি বিএনপির দলেরই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন এই কথাতো নির্বাচনের আগেই খোলাসা করতে হবে।
দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কোন আসামির নেতৃত্বে সেই দল ক্ষমতায় যাবে এইটা বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশের কোন মানুষই বিশ্বাস করে না।তারপরে বিএনপি সবসময় বলে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে যাবে না। এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত! কোনো ভাবেই দেখা যাচ্ছে না । বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করার পরে যদি নির্বাচনে যায় এবং সেই নির্বাচনে জয়লাভ করলে তারাই ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করবে! কিন্তু এই সমস্ত কোন ঘটনায়ই যদি দেশে না ঘটে তাহলে তখন তারা কি করবে, তারা সে কথাও বলছে না। তারা মনে করছে নিশ্চিত তারা তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবে! যা তারা বিগত দশ বছর ধরে দাবি করে আসছে। এখন তারা বলছে এই দাবিতে তারা সব দলকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করবে। বাস্তবে দেশে সে অবস্থাও নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ বিএনপিকে কেন ভোট দেবে? বিএনপি’র অতীতের কর্মকাণ্ড চিন্তা করে কি বিএনপিকে আগামীদিনে ক্ষমতায় বসাবে দেশের মানুষ। আবারো কি হাওয়া ভবনের মত বিকল্প সরকারের কবলে পড়বে দেশের জনগণ।আবারো কি একুশে আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলা করে দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করবে বিএনপি। আবারো কি স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে উঠবে জাতীয় পতাকা? আবার কি আগের মতোই বার বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে দেশ। আবারো দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ ও সারের দাবিতে জীবন দিতে হবে? এসব প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে। মানুষের মনে প্রধান প্রশ্ন ক্ষমতায় গেলে কে হবে তাদের প্রধানমন্ত্রী? বিএনপি যদিও মুখে বলছে না কিন্তু ধরে নেয়া যায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সেই হবে বিএনপি’র আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী! এটা কি দেশের মানুষ মেনে নেবে বা এর মত চরিত্রের! মানুষকে এই দেশের মানুষ আগামী দিনে ক্ষমতায় বসাবে? এই প্ৰশ্ন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এইসব প্রশ্নের জবাব আগে দেয়া উচিত বিএনপির দেশের মানুষকে। ক্ষমতায় থাকতে তারা কি কি অন্যায় অত্যাচার দুঃশাসন লুন্ঠন করেছে তা দেশের মানুষ হারে হারে জানে। তাদের অপশাসন ও দুঃশাসনের কারণেই দেশের মানুষ তাদের বার বার প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিএনপির এখন উচিত ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন না দেখে অতীতের ভুলত্রুটির জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া । আর দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে ত্যাগ করে দলের নতুন নেতা নির্বাচন করা।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করে বর্তমানে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিগত দুই বছরের মহামারী কোভিডের পরেও দেশের মানুষ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের চাইতেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী অবস্থায় আছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নসহ সবক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি তা পৃথিবীর মানুষ অবলোকন করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান যে চলমান উন্নয়ন তা দেশের মানুষ অল্পদিনের মধ্যেই পরিপূর্ণ সুফল ভোগ করবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ আজকে দেশের আনাচে – কানাচে শহরের দৃশ্য বিদ্যমান। মানুষের পকেটে টাকা আছে, মানুষ নিশ্চিন্তে তাদের জীবনযাপন করছে। সবক্ষেত্রে দেশ যখন উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তখন মানুষ আর সেই অতীতের বিএনপি’র দুঃশাসনের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা কল্পনাও করে না। কোন হাওয়া ভবনের দুর্নীতিবাজ ও একুশে আগস্টের খুনি বা এতিমের টাকা চুরি করা অতীতের কোন প্রধানমন্ত্রীকে আর মানুষ এদেশের সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চায় না। স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে আর জাতীয় পতাকা দেখতে চায় না। ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি সুখী সমৃদ্ধশালী উন্নত মর্যাদাশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে এবং সেই দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসাবে মাথা উঁচু করে চলবে এখন মানুষের এটাই প্রত্যাশা। কোন ধরনের প্রতারণা, কোন ধরনের দিবাস্বপ্ন কোন ধরনের অবাস্তব কল্পনাকে বাংলার মানুষ আর কোনভাবেই গ্রহণ করবে না। মানুষ সুখে আছে শান্তিতে আছে এবং এই শান্তি আগামী দিনে বজায় থাকবে এটাই মানুষের প্রত্যাশা। খুনি,চোর,স্বাধীনতা বিরোধী, দুর্নীতিবাজ কোন লুটেরাদের অধীনে জাতীয় সরকারই কি আর একক বিএনপির সরকারই কি এদের দেশের মানুষ চেনে! নিজেদের অতীতের অপকর্ম ঢাকতে তাদের নতুন এই জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দেশের মানুষ বোঝে। তাই তাদের এত বোকা ভাবার কোন কারণ নাই।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি