মুসলিমবিরোধ সমীকরণে ঘুরছে ফ্রান্স
২০ এপ্রিল ২০২২ ১৮:১১
ক্ষমতায় গেলে ফ্রান্সে মুসলিমদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করবে বলে ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনে নেমেছেন দেশটির জাতীয়তাবাদী প্রধান বিরোধীদলের নেত্রী মিস লি পেন। গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের সুযোগ নিয়ে, অন্য দেশে জন্ম নেয়া যারা ফ্রান্সে থাকছেন, তাদের জন্য কট্টর হবেন এই নেতা ও তার দল। অর্থাৎ অভিবাসনের স্বর্গরাজ্য হতে দিবেনা ফ্রান্সকে এমন ঘোষনা স্পষ্ট। ক্ষমতায় গেলে ফ্রান্সকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়ে আসছে কঠোর রক্ষণশীল এই নারী নেত্রী। এদিকে ফ্রান্সের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ, বিরোধীদলের চাপ সইতে তার দল উদার হলেও কিছুদিন আগে মুসলমানদের আঘাত দিয়ে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এমন মন্তব্য মুসলিম জাতিতে আঘাত হবে জেনেও করেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এই নেতা। ফলে সংখ্যালঘুদের আঘাত দিয়ে নিজ পার্টির জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বিশ্বের প্রায় সব দেশের শাসক বা বিরোধীপক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বড়াইয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সমীকরণ সাজায়। তাতে সংখ্যালঘুরা আঘাত পেলেও সেটাই তাদের জন্য সঠিক বলে মনে করেন। যেমনটি দেখা গেছে তুরস্কে, ভারতে। মুসলিম শাসক এরদোয়ান তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে গির্জাকে মসজিদ করেছেন, নরেন্দ্র মোদি তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মসজিদকে মন্দির করেছেন। ম্যাক্রোঁও তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে মুসলমানদের আঘাত দিয়ে মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান কেউই পূর্ণাঙ্গ অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষতায় থেকে দেশ চালাচ্ছেন না।
ফলে পৃথিবীর এক রাষ্ট্রে মুসলিমরা আধিপত্য বিস্তার করছে, অন্য প্রান্তে নির্যাতিত হচ্ছে। এক প্রান্তে অমুসলিমরা আধিপত্য বিস্তার করছে, অন্য প্রান্তে তারাও নির্যাতিত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী দেশের তালিকায় অন্যতম ফ্রান্স। নির্বাচনের শেষ পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, ফ্রান্সের পরবর্তীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম ঠিক রেখে অন্য ধর্মকে তুরস্ক বা ভারতের মত হেয় করবে খুব স্বাভাবিকভাবেই। ২০২২ সালে ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে, দেশটির মুসলমানরা পড়েছে বিপাকে। ম্যাক্রোঁ ইতোমধ্যেই ইসলাম ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় বিতর্কিত। আর নিকটতম প্রতিপক্ষ মারিন লি পেন ক্ষমতায় আসলে, মুসলিম নারী শিশুসহ হাজার হাজার অভিবাসীদের জন্য হবে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ইংল্যান্ডের মত ফ্রান্সকেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে নিবে। যার ফলে ফরাসি নাগরিকসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি নিয়ে পড়তে হবে নানা বিড়ম্বনায়।
মন্দের ভালো হতে পারে মাক্রোঁ ক্ষমতায় থাকলেই। কারন ম্যাক্রোঁর যে মন্তব্যের কারনে মুসলমানরা ক্ষুব্ধ, সেই মন্তব্যটুকু তিনি অনেকটা চাপে পড়েই দিয়েছেন কিনা সেটা ভাবতে হবে এখন ভোটারদের। ফ্রান্সের বর্তমান উদারপন্থী ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় না আসলে, নির্বাচনী জরিপে তার নিকটতম বিরোধী পার্টি হিজাব নিষিদ্ধ করে ফ্রান্স থেকে মুসলিম বিতাড়িত করার পথ সুগম করতে চাইবে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের হুংকারে অনেক মুসলিম পরিবার ফ্রান্স ত্যাগ করছে বলে শিরোনাম হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমীকরণে বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশই ঘুরপাক খায়। ফ্রান্সেও সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমীকরণে জনগণের ধর্মীয় গোত্রীয় বিষয়গুলো নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। ফলে সংখ্যালঘুরা অনেকটা ধর্মচর্চার স্বাধীনতা হারাতে বসেছে, সেই সাথে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে ফ্রান্সে বসবাসরত কিংবা অভিবাসীতে সুযোগ-সুবিধা নিতে যাওয়া অন্য দেশের নাগরিকরা। প্রশ্ন জাগে, পাশ্চাত্যের একটা আধুনিক দেশ হয়েও ফ্রান্স কি তাহলে ক্রমাগত অতিরক্ষণশীল রাষ্ট্রে পরিনত হচ্ছে কি না!
লেখক: পর্তুগাল প্রবাসী সমাজকর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতা
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি