Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

কবিতা রাণী মৃধা
২১ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪৩

স্কুল কলেজের গন্ডি পার হয়ে কত আশা নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এক থেকে দের মাস ক্লাস করার পরও আমাদের মাঝে এই আশা থাকে যে আমরা ভালোভাবে পড়াশোনা করবো আর অনেক ভালো রেজাল্ট করবো। আমাদের মাঝে তখন এই আশাটা থাকে কারণ তখন আমাদের মাঝে স্বপ্ন পূরণের তাগিদ থাকে আর নতুনরা জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম্বার পদ্ধতি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি। আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি একে অপরের বিপরীতে থাকে। নতুনরা জানে যে ভালো লিখবে সে ভালো নাম্বার পাবে। শিক্ষকবৃন্দ তার প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের যে কোনো বিষয় সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিবে। নিয়মিত ক্লাস নিবে। রুটিন অনুযায়ী সব কাজ করবে ক্লাসের। তারসাথে নতুন নতুন অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই প্রত্যাশাগুলো অনেকক্ষেত্রেই পূরণ হয়না। অনেক ক্ষেত্রে তো দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্বতি স্কুলের থেকেও দুর্বল। ক্লাস তো ঠিকমতো নেয় না, পড়া ঠিকমতো বুঝিয়ে দেয় না যদিওবা ক্লাস নিবে তখন কোনো প্রশ্ন করলে বলা হয় তোমরা তো পড়াশোনাই করো না। আসল কথা তো হচ্ছে তারা আমাদের ঠিকমতো ক্লাস নেয় না আর নিলেও পড়া বুঝিয়ে দেয় না ঠিকমতো, তাই আমরা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। তারপর পরীক্ষার সময় দেখা যায় ঠিকমতো উত্তর দেয়া যায় না। তাদের কথা হচ্ছে আমরা ক্লাস যেমনই নেই না কেন পরীক্ষায় ভালো ভালো কথা লিখতে হবে, ক্লাসে প্রশ্ন করলে সুন্দর করে উত্তর দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনও অনেক অনেক শিক্ষক আছেন যারা খুব সুন্দর করে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করে। তারা আমাদের সব সময় বলে যে আমি তোমাদের পড়াচ্ছি কারণ আমি তোমাদের থেকে বয়সে বড় আর কিছু অভিঙ্গতাতে বড়, আমিও তোমাদের মতোই শিখতেছি আবার নতুন করে। কিছু শিক্ষক আমাদের যে কোনে বিষয় আমাদের মতো অর্থাৎ আমরা যেভাবে পড়া বুঝতে পারবো সেটা অনুমান করেন তারপর পড়া বুঝিয়ে দেন। আমরা অনেক সহজেই পড়া বুঝতে পারি এবং প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারি। আর এখানে আমাদের প্রাপ্তির কমতি নেই।

বিজ্ঞাপন

আমার এখানে একটা প্রশ্ন হচ্ছে যে শিক্ষররা যদি ভালো ক্লাস না নেয়, ক্লাসে ভালো ভালো তথ্য না দেয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে এত ভালো ভালো তথ্য লিখতে পারবে পরীক্ষায়? শিক্ষকরা ক্লাসে কম তথ্য দিয়ে আমাদের কোনো মতো টপিক বুঝিয়ে দিয়ে ক্লাস শেষ করে দেয় এতে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি হলেও সৃজনশীলতার শক্তি মানে সেই টপিক নিয়ে গবেষণা করার মতো জ্ঞান আমাদের তৈরি হয় না। আর গবেষণা করা তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির সাথে বিশেষভাবে জড়িত । কিন্তু গবেষণা তো দূরে থাক অনেক সময় দেখা যায় পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরই ঠিক মতো দেয়া যায় না।

আবার আমরা জানি শিক্ষকদের সাথে ছাত্র ছাত্রীদের একটা ভালো সম্পর্ক থাকবে কারণ এটাই শিক্ষা। আর এই সম্পর্কটা যদি নাম্বারের সাথে জড়িত থাকে তাহলে এটা হবে কুশিক্ষা। আর এই পদ্ধতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুক্ষেত্রে দেখা যায়। আর কুশিক্ষা বলার কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে ভালো নাম্বার পাওয়া যায় তা পড়াশোনা করি বা না করি। এটা কি কোনো দিক থেকে শিক্ষার অংশ হয়? হয় না। তাই আমি এটাকে কুশিক্ষা বলছি। আর এটা তো কুশিক্ষাই সেটা কি কেউ না বলতে পারবে? পারবে না আমার মনে হয়। তবে যারা ঠিকমতো পড়াশোনা করে তারাও নাম্বার পায় কিন্তু শিক্ষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে না কষ্ট করেই ভালো নাম্বার পাওয়া যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম্বার পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। কারণ অনেক সময় ভালো পরীক্ষা দিয়েও ভালো নাম্বার পাওয়া যায় না আবার একটু খারাপ পরীক্ষা দিয়েও ভালো নাম্বার পাওয়া যায়।

তার সাথে ভাইভার কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে ভাইভাতে ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য আগে পরে ক্লাসের শিক্ষকদের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে পারলেই হবে। তাহলে দেখা যাবে যে স্টুডেন্টরা শিক্ষকদের পরিচিত হয়ে যাবে পরে ভাইভা বোর্ডে অনেক সহজ প্রশ্ন করবে। আর যদি উত্তর দিতে নাও পারে তাতেও সমস্যা নাই যেহেতু মুখ চেনা আছে সেহেতু নাম্বার ভালোই দিবে। এই যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম্বার পদ্ধতি এবং পাঠদান পদ্ধতি তাহলে যারা শিক্ষকদের সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে পারে না কিংবা শিক্ষকদের কাছে পরিচিত নয় তারা কি করবে? কষ্ট করেও যদি ভালো নাম্বার না পাওয়া যায় তাহলে তো সেই স্টুডেন্টের কিছুটা হলেও মন মানসিকতা দুর্বল হয়ে যাবে, সাথে পড়াশোনার প্রতি অনীহা তৈরি হবে।

একদিন আমাকে আমার এক সিনিয়র বলতেছিল যে স্যারদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে ভালো নাম্বার পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সেটা করা যায় স্যারদের সাথে দেখা হলে বলতে হবে স্যার আপনাকে এই পোশাকে অনেক ভালো লাগতেছে। তা যেই পোশাকই হোক না কেন। তারপর বলতে হবে স্যার আপনাকে একটা ছবি তুলে দিই সেটা তোমার ফোন দিয়েও তুলতে পারো তারপর সেলফি তুলে স্যারের প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে। এতে ওই স্যার তোমাকে ভালোমতো চিনবে তাতে তোমার প্রতি একটা ইতিবাচক মনমানসিকতা তেরি হবে। আর এই ইতিবাচক মনমানসিকতার ফলে তোমাকে পরীক্ষায় ভালো মার্ক দিবে। তুমি খারাপ লিখলেও তোমার নাম্বার খারাপ আসবে না। আর এখানে আমাদের যে আশা ও প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আছে সেটা ক্ষুন্ন হচ্ছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

কবিতা রাণী মৃধা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর